যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আলোচনার মাধ্যমে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে শান্ত করতে চান, ঠিক তখনই পশ্চিমা বিশ্বকে হতবাক করে ভয়াবহ এক হামলা চালাল ইউক্রেন। রাশিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিমানঘাঁটি লক্ষ্য করে চালানো এই হামলায় অন্তত ৪০টি রুশ বোমারু বিমানে আঘাত হানার দাবি করেছে ইউক্রেন। এতে রাশিয়ার প্রায় ৭০০ কোটি ডলারের ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে, যা বিশ্লেষকদের মতে ইউক্রেনের এক অসাধারণ কৌশলগত সাফল্য।

এই হামলার মধ্যেই ইউক্রেন যুদ্ধ ঘিরে নতুন করে উত্তেজনার ঝড় উঠেছে ন্যাটো জোটে। জার্মান প্রতিরক্ষা প্রধান জেনারেল কারস্টেন ব্রয়ার স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন— রাশিয়ার লক্ষ্য শুধু ইউক্রেন নয়, বরং আগামী চার বছরের মধ্যেই ন্যাটোর বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে জড়াতে পারে পুতিন বাহিনী। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ন্যাটো সদস্য দেশগুলোর এখনই প্রস্তুতি নেওয়া উচিত।

জার্মান জেনারেল ব্রয়ার জানান, প্রতিবছর শত শত যুদ্ধ ট্যাংক তৈরি করছে রাশিয়া, যেগুলোর অনেকটাই ২০২৯ সালের মধ্যেই ব্যবহার হতে পারে বাল্টিক অঞ্চলের ন্যাটো সদস্যদের বিরুদ্ধে। শুধু ইউক্রেন নয়, পশ্চিমা জোটের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ সামরিক প্রস্তুতি নিচ্ছে রাশিয়া। ফিনল্যান্ড এবং সুইডেনের ন্যাটোতে যোগদানের পর উত্তর সীমান্তেও চাপ বাড়িয়েছে মস্কো।

জেনারেল ব্রয়ার আরও জানান, রাশিয়া বর্তমানে প্রতি বছর প্রায় দেড় হাজার যুদ্ধ ট্যাংক তৈরি করছে। এর সবগুলো ইউক্রেনে পাঠানো হচ্ছে না— অনেক ট্যাংক মজুদ রাখা হচ্ছে ভবিষ্যতের বড় যুদ্ধের জন্য। শুধু তাই নয়, ২০২৪ সালে রাশিয়া উৎপাদন করেছে ৪০ লাখ ১৫২ মিলিমিটার আর্টিলারি গোলাবারুদ, যার সবটাই এখনো ইউক্রেনে ব্যবহার হয়নি। পাশাপাশি ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র, এবং অন্যান্য অস্ত্রভাণ্ডারও রাশিয়ার হাতে প্রচুর পরিমাণে মজুদ রয়েছে।

গোয়েন্দা বিশ্লেষকদের তথ্য অনুযায়ী, রাশিয়ার পশ্চিম সীমান্তে সৈন্য ও সরঞ্জামের সংখ্যা ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়ে তোলা হয়েছে। ফিনল্যান্ড সীমান্তঘেঁষা ক্যারেলিয়া অঞ্চলে গঠিত হয়েছে নতুন ‘৪৪তম আর্মি কোর’। মস্কো ইতোমধ্যেই ঘোষণা দিয়েছে, সক্রিয় সৈন্য সংখ্যা ১৩ লাখ থেকে ১৫ লাখে উন্নীত করা হবে।

এই বিশাল সামরিক প্রস্তুতির অর্থ কী? বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, রাশিয়া হয়তো ন্যাটোর বিরুদ্ধে সরাসরি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ না করে সীমিত আকারে অভিযান পরিচালনার কৌশলও গ্রহণ করতে পারে। তবে, ইউক্রেনের সাম্প্রতিক হামলা এবং রাশিয়ার পাল্টা শক্তি প্রদর্শন ন্যাটোকে এক অস্বস্তিকর ও বিপজ্জনক ভবিষ্যতের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।

৪০ বছরের সামরিক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন জেনারেল কারস্টেন ব্রয়ার বলেন, “এই মুহূর্তে ইউরোপ এমন এক গুরুতর নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে রয়েছে, যা আমি আমার পুরো পেশাজীবনে কখনো দেখিনি।”

বিশ্বব্যাপী যুদ্ধবিরতির আশা যখন ক্ষীণ, তখন ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাত যেন নতুন করে গড়াচ্ছে এক বিস্তৃত ও দীর্ঘস্থায়ী বিপর্যয়ের দিকে— যেখানে শুধু ইউক্রেন বা রাশিয়া নয়, টান টান উত্তেজনায় দাঁড়িয়ে আছে পুরো পশ্চিমা সামরিক জোট, ন্যাটো।

ফরিদ 



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews