গাজার হাসপাতালে ইসরায়েলি হামলায় ২৮ জন নিহত, আহত কয়েক ডজন

ছবির ক্যাপশান,

হামলার পর হতাহতদেরকে খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়

৪০ মিনিট আগে

গাজার খান ইউনিসে একটি হাসপাতালে ইসরায়েলি বিমান হামলায় কমপক্ষে ২৮ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আরও কয়েক ডজন মানুষ আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন হামাস পরিচালিত বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থার একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন।

স্থানীয় একটি সূত্র বলছে, খান ইউনিসের ইউরোপিয়ান হাসপাতাল ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানগুলো একযোগে ছয়টি বোমা ফেলেছে।

এর ফলে হাসপাতালটির ভেতরের অংশের আঙ্গিনা ও আশেপাশের স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

তবে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, তারা সুনির্দিষ্টভাবে গাজার সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের একটি 'নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রে' হামলা চালিয়েছেন।

কর্মকর্তারা দাবি করেছেন যে, ওই নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রটি ইউরোপিয়ান হাসপাতালের নীচে অবস্থিত।

বিমান হামলায় আহতদের মধ্যে গাজায় কর্মরত বিবিসির একজন ফ্রিল্যান্স সাংবাদিকও ছিলেন। চিকিৎসা নেওয়ার পর তার শারীরিক অবস্থা এখন স্থিতিশীল।

বিমান হামলায় ছোড়া বোমার আঘাতে ইউরোপিয়ান হাসপাতাল প্রাঙ্গণে বেশ কয়েকটি গভীর গর্ত সৃষ্টি হয়েছে।

সেখানে রোগীদের আনা-নেওয়ায় ব্যবহৃত একটি বড় বাস সহ বেশ কয়েকটি যানবাহন চাপা পড়ে থাকতে দেখা গেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, হামলার পর ইসরায়েলের পাঠানো একাধিক ড্রোন হাসপাতাল ভবনের ওপরে উড়তে দেখেছেন তারা।

ড্রোনের মাধ্যমে কঠোর এই নজরদারির ফলে উদ্ধারকারী দলের সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে পারেননি।

হামলার ঘটনার পর ইউরোপিয়ান হাসপাতালের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন হামাসের বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থার দুই কর্মকর্তা।

কিন্তু ইসরায়েলের ড্রোন হামলায় তারা দু'জনই আহত হয়েছেন বলে জানা যাচ্ছে।

খান ইউনিসের ইউরোপিয়ান হাসপাতালে একাধিক বোমা বর্ষণ করা হয়েছে

ছবির ক্যাপশান,

খান ইউনিসের ইউরোপিয়ান হাসপাতালে একাধিক বোমা বর্ষণ করা হয়েছে

আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা আইডিয়ালসের প্লাস্টিক সার্জন ডা. টম পোটোকার হামলার সময় ইউরোপিয়ান হাসপাতালে অবস্থান করছিলেন।

বিবিসির নিউজ আওয়ার অনুষ্ঠানকে তিনি জানিয়েছেন যে, কোনো ধরনের অগ্রিম সতর্কতা ছাড়াই হাসপাতাল প্রাঙ্গণে পরপর ছয়টি বোমা ফেলা হয়, যেগুলো বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়।

"এরপর সেখানে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে," বলেন ডা. টম পোটোকার।

স্থানীয় একটি সূত্র বিবিসিকে জানিয়েছে যে, হামলার পর হতাহতদেরকে খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানকার চিকিৎসারা এখন আহতদের চিকিৎসা দিতে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছেন বলে জানা গেছে।

এদিকে, স্থানীয় বেশ কয়েকটি সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে যে, মঙ্গলবার সকালে নাসের হাসপাতালের জরুরি বিভাগেও আরেকটি হামলার ঘটনা ঘটেছে।

এসব হামলায় অন্তত দুই জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ফিলিস্তিনির সুপরিচিত একজন ফটো সাংবাদিকও রয়েছেন।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন হাসান আসলিহ নামের এক ব্যক্তির ওপর ড্রোন হামলা চালানো হয় বলেও জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।

নাসের হাসপাতালের একজন ডাক্তার বিবিসিকে নিশ্চিত করেছেন যে, গত এপ্রিলে বিমান হামলায় আহত মি. আসলিহ প্রায় এক মাস ধরে হাসপাতালটিতে ভর্তি ছিলেন।

হামলার পর ইউরোপিয়ান হাসপাতাল প্রাঙ্গণের চিত্র

ছবির ক্যাপশান,

হামলার পর ইউরোপিয়ান হাসপাতাল প্রাঙ্গণের চিত্র

মি. আসলিহ সাতই অক্টোবরের হামলার সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে এর আগে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছিল।

গত এপ্রিলে তার ওপর প্রথমবার হামলা করা হয়েছিল। তখন মি. আসলিহ নিজে প্রাণে বেঁচে গেলেও তার সহকর্মী হেলমি আল-ফাকাওয়ি নিহত হন। এছাড়া সাংবাদিকসহ আরও বেশ কয়েক জন ওই হামলায় আহত হয়েছিলেন।

নতুন হামলার ঘটনার পর ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনী (আইডিএফ) এবং ইসরায়েলি সিকিউরিটিজ অথরিটি (আইএসএ) এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছে যে, সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের সদস্যরা তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য গাজার হাসপাতাল গুলোকে "ব্যবহার করে চলেছে"।

যদিও এমন অভিযোগ এবারই প্রথম নয়। ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরেই এই অভিযোগ করে আসছে এবং হামাস বরাবরই সেটি অস্বীকার করেছে।

ইসরায়েলের গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে যে, ইউরোপিয়ান হাসপাতাল নতুন করে যে হামলা চালানো হয়েছে, সেটার লক্ষ্যবস্তু ছিলেন হামাসের জ্যেষ্ঠ নেতা মোহাম্মদ সিনওয়ার।

মি. সিনওয়ার গাজার সাবেক হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারের ছোট ভাই বলে জানা যাচ্ছে।

ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ৫২ হাজার ছাড়িয়েছে বলে জানা যাচ্ছে

ছবির উৎস, Getty Images

ছবির ক্যাপশান,

ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ৫২ হাজার ছাড়িয়েছে বলে জানা যাচ্ছে

তবে হামাস এখনও এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেনি।

গত গ্রীষ্মে ইসরায়েলি হামলায় হামাস নেতা মোহাম্মদ দেইফ নিহত হন। এরপর মোহাম্মদ সিনওয়ার সশস্ত্র গোষ্ঠীটির সামরিক শাখার নেতৃত্ব গ্রহণ করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল যে, তারা গাজা থেকে ছোড়া দু'টি রকেট বোমা প্রতিহত করেছে। পরে ইসলামিক জিহাদ নামের একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী ওই হামলার দায় স্বীকার করে বিবৃতি প্রকাশ করে।

২০২৩ সালের সাতই অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামাসের হামলায় প্রায় ১২০০ মানুষ নিহত হয়। এছাড়া ২৫০ জনেরও বেশি মানুষকে জিম্মি করে গাজার সশস্ত্র গোষ্ঠীটি।

গত দেড় বছরে জিম্মি ইসরায়েলি নাগরিকদের অনেকেই মুক্তি পেয়েছেন। তবে এখনো প্রায় ৫৯ জন জিম্মি হামাসের হাতে জিম্মি রয়েছেন বলে জানা যাচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, তাদের মধ্যে ২৪ জনের মতো জীবিত রয়েছেন।

গাজায় হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসেবে, সাতই অক্টোবরের ঘটনার পর ইসরায়েল যে সামরিক অভিযান শুরু করেছে, তাতে গাজার অন্তত ৫২ হাজার ৮৬২ জন বাসিন্দা নিহত হয়েছে।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews