জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) ২০২৫ সালের দাখিল নবম-দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে গ্রাফিতিতে ‘আদিবাসী’ শব্দের বিরোধিতা করে প্রথমে মাদ্রাসা বোর্ডের সামনে বিক্ষোভ করে ‘স্টুডেন্ট ফর সভারেন্টি’ নামের একটি সংগঠন। এরপর এনসিটিবি ভবন ঘেরাও করে ‘আদিবাসী’ শব্দটি প্রত্যাহারের দাবি জানায় সংগঠনটি। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এনসিটিবির ওয়েবসাইটে ওই গ্রাফিতি সম্বলিত বই সরিয়ে নেওয়া হয়।
এরপর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিক্ষার্থীরা গ্রাফিতি সরিয়ে নেওয়ার প্রতিবাদ জানিয়ে এনসিটিবি ভবনের সামনে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে গেলে সেখানে আগে থেকেই কর্মসূচি দিয়ে অবস্থান করে তারা। বাগবিতণ্ডার একপর্যায়ে ক্রিকেট খেলার স্ট্যাম্পে পতাকা বেঁধে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে। এরপর থেকেই নেতিবাচক আলোচনায় রয়েছে সংগঠনটি।
হামলার ঘটনার পর বুধবার (১৫ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতিতে সংবাদ সম্মেলন করে উল্টো ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিক্ষার্থীরাই তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করে তারা। সেইসঙ্গে তৃতীয় পক্ষের হামলায় ঘটনার সূত্রপাত হয় বলেও দাবি করেন তারা।
এদিকে এনসিটিবি’র সামনে আন্দোলনরত ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী শিক্ষার্থীদের ওপর ‘স্টুডেন্ট ফর সভারেন্টি’র সদস্যরা হামলা চালিয়েছে উল্লেখ করে এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সংগঠনটি নেতাকর্মীরা নিজেদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক ছাত্র সংগঠন বলে পরিচয় দিলেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিস থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, এই হামলায় অভিযুক্ত ‘স্টুডেন্ট ফর সভারেন্টি’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও সংগঠন নয় এবং এর সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও সম্পৃক্ততা নেই। বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, শিক্ষার্থীদের হামলার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
এমন পরিস্থিতিতে নানান মহলে প্রশ্ন উঠেছে, নতুন এই সংগঠনটি আসলে কারা? তাদের সংগঠনের উদ্দেশ্যই বা কী?
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পাঁচ আগস্ট পরবর্তী সময়ে গঠিত হয় স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি। এই সংগঠনটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক হলেও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের শাখা রয়েছে বলে জানা যায়। গঠিত হওয়ার পর থেকেই ‘আদিবাসী’ শব্দের তীব্র বিরোধিতা করে আসছে সংগঠনটি। যখনই ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী তাদের ‘আদিবাসী’ হিসেবে স্বীকৃতির দাবিতে আন্দোলন করেছে, বিপরীতে সংগঠনটিও ‘আদিবাসী’ শব্দের বিরোধিতা করে কর্মসূচি দিয়েছে। ‘আদিবাসী’ স্বীকৃতি দাবিকারীদের তারা ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ বলেও দাবি করে আসছে।
এ বিষয়ে সংগঠনটির আহ্বায়ক মোহাম্মদ জিয়াউল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা ২৮ ও ২৯ আগস্টের দিকে সংগঠনের আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ করি। এই আগস্টে প্রকাশ করলেও আমরা গত পাঁচ বছর ধরে বিভিন্ন পরিসরে কাজ করে আসছি। বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে আমরা বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলেছি।
সংগঠন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি’ আত্মপ্রকাশের কারণ হলো- অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর পার্বত্য চট্টগ্রামে যারা বিচ্ছিন্নতাবাদী আছে তারা সেখানে ব্যাপকভাবে সহিংসতার ঘটনা ঘটাতে শুরু করে। আপনারা সে সময়ের পত্রিকায় দেখতে পাবেন সেগুলো। সেখানে ছিল একটি উগ্রবাদী হিন্দু গ্রুপ ও উগ্রবাদী উপজাতি গ্রুপ। এমনকি আমাদের একজন উপদেষ্টাও আদিবাসী শব্দটি উচ্চারণ করেছেন। সেসব বিষয়ে আমরা আগে থেকেই সচেতন ছিলাম। তখন আমরা চিন্তা করলাম এই বিচ্ছিন্নতাবাদী শব্দের বিরোধিতা করা দরকার, সে চিন্তা থেকেই আমরা সাংগঠনিকভাবে আত্মপ্রকাশ করি।
আদিবাসী স্বীকৃতি দিলে পার্বত্য চট্টগ্রামের সার্বভৌমত্ব হুমকি মুখে পড়বে বলে দাবি করে তিনি বলেন, এই শব্দটি আমাদের সার্বভৌমত্বের বিরোধী। এটির স্বীকৃতি দিলে পার্বত্য চট্টগ্রাম কোনও সময় আমাদের হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে। আমাদের উদ্দেশ্যই হলো সার্বভৌমত্ব সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করা।
আরও পড়ুন: