দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কঠোর পরিশ্রম ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে বিশ^ অর্থনীতিতে স্থিতিশীল অর্থনীতির দেশ হিসেবে গড়ে তোলা বাংলাদেশকে নাশকতা, ধ্বংসযজ্ঞ ও অগ্নিসন্ত্রাস চালিয়ে ধ্বংস করে দিতে চাচ্ছে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি বিএনপি ও জামায়াত। সন্ত্রাসী কর্মকা- ও নাশকতার মাধ্যমে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতিকে ঘোলাটে করে পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসীন হওয়ার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ৩০ লাখ শহীদের বুকের তাজা রক্ত ও ৪ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত মহান স্বাধীনতার ৫৩ বছরে এসে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তিগুলোর এহেন অপচেষ্টাকে যে কোনো মূল্যে রুখে দিতে হবে।
বিএনপি-জামায়াত ও ছাত্রদল-ছাত্রশিবিরের সন্ত্রাসীদের অগ্নিসন্ত্রাস ও ভাঙচুরের ফলে প্রতিবছর বাংলাদেশের অর্থনীতিতে হাজার হাজার কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়। তাদের সহিংসতায় এদেশের খেটে খাওয়া অসহায় জনগোষ্ঠীকে পোহাতে হয় কঠিন দুর্ভোগ। স্বাধীনতাবিরোধী বিএনপি-জামায়াত এবং ছাত্রশিবিরের অগ্নিসন্ত্রাসীরা সুযোগ পেলেই নাশকতা করে দেশের অর্থনীতিকে অচল করে দেওয়ার অপপচেষ্টা চালায়।
তাদের এই অপচেষ্টার চরম দৃষ্টান্ত হলো সাম্প্রতিক সময়ে কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের অহিংস কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে পরিচালিত করে অগ্নিসন্ত্রাস ও ভাঙচুর করে দেশীয় অর্থনীতির ব্যাপক ক্ষতি এবং সাধারণ মানুষের জীবনের জন্য হুমকি সৃষ্টি করা। এসব করার মূল উদ্দেশ্যই হলো দেশের স্বাভাবিক ও শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতিতে ঘোলাটে করে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার। কোমলপ্রাণ ছাত্র-ছাত্রীদের আন্দোলনের সুযোগ কাজে লাগিয়ে বিএনপি-জামায়াত, ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির চেয়েছিল অর্থনীতির চাকাকে অচল করে দিয়ে দেশকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিতে। স্মার্ট, মেধাবী ও তরুণ ছাত্রসমাজ বিএনপি-জামায়াতের অপচেষ্টা বুঝতে পেরে আন্দোলন প্রত্যাহার করে নিয়েছে।
বিএনপি-জামায়াত বাংলাদেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করে অগ্নিসংযোগ ও হামলা করেছে। বিটিভি এবং মেট্রোরেলের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করা হয়েছে। সারাদেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও সন্ত্রাসী কর্মকা- পরিচালনা করেছে স্বাধীনতাবিরোধী বিএনপি-জামায়াত-ছাত্রদল-ছাত্রশিবির। তাদের এই নাশকতায় সব বন্ধ থাকায় দেশের অর্থনীতিতে দৈনিক গড়ে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় এক বিলিয়ন ডলার।
তথ্য বলছে, বিএনপি-জামায়াত এবং ছাত্রশিবিরের সাম্প্রতিক নাশকতায় দেশের শীর্ষ রপ্তানি আয়ের খাত তৈরি পোশাক শিল্পের চট্টগ্রামের কিছু কারখানা চালু থাকলেও বেশিরভাগ কারখানা বন্ধ ছিল। প্রতিদিন প্রায় এক হাজার ৮০০ কোটি টাকার লোকসান গুনতে হয়েছে বলে মনে করেন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। অগ্নি-সহিংসতা চলাকালে ইন্টারনেট সরবরাহ লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় গত ১৯ জুলাই দেশে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ হয়ে যায়। এতে রপ্তানিবিষয়ক নথি বা শিপিং বিল সংশ্লিষ্ট সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। জাহাজে ওঠার আগেই আটকা পড়ে আমদানি ও রপ্তানিকারক অনেক প্রতিষ্ঠানের চালান।
এই সহিংসতাকে কেন্দ্র করে কার্ফু ও ইন্টারনেট শাটডাউনের প্রভাবে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা। ছোট ছোট কারখানা কিংবা ব্যবসা-বাণিজ্যের মালিক অনেক ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাই ব্যাংক ঋণের কিস্তি পরিশোধের পাশাপাশি কর্মচারী ও শ্রমিকদের বেতন দেওয়া নিয়ে মহাদুশ্চিন্তায় পড়েছেন। বিশেষ করে রপ্তানিমুখী উদ্যোক্তাদের পরিস্থিতি ছিল শোচনীয়।
কারণ, ইন্টারনেট শাটডাউনের কারণে গত কয়েক দিন ধরে বিদেশে ক্রেতাদের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বাংলাদেশের স্থিতিশীল অর্থনীতিকে অচল করে দেওয়ার লক্ষ্যেই মূলত স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তিগুলো এই নাশকতা চালায়।
সন্ত্রাসী কর্মকা- ও নাশকতা স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি বিএনপি-জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের নিকট নতুন কোনো বিষয় নয়। বহুকাল আগে থেকে তারা এই ধরনের অপরাজনীতি চর্চা করে আসছে। সহিংস কর্মকা-ের ওপর ভর করেই একদম শুরু থেকে তারা তাদের রাজনৈতিক কর্মকা- পরিচালনা করে আসছে।
তাদের এই ধরনের নাশকতামূলক অপরাজনীতির শিকার গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ। ২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করার জন্য বিএনপির পক্ষ থেকে জামায়াত-শিবির সমর্থকরা ১৫ জন পুলিশ সদস্যকে হত্যা করে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের যুদ্ধাপরাধ, গণহত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য দেশের অভ্যন্তরে ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। সেই বিশেষ ট্রাইব্যুনাল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে রায় দেয়। সংবিধানের সেই রায়কে বানচাল করতে ২০১৩ সালে জামায়াত-শিবির যে রাজনৈতিক সহিংসতা চালায়, তাতে ৪১৯টি ঘটনায় ৪৯২ জন সাধারণ মানুষ নিহত হন এবং আরও ২২০০ জন আহত হন।
বাঙালি জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে তাৎর্যপূর্ণ ও গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় মহান মুক্তিযুদ্ধ। একাত্তরে স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী ও যুদ্ধপরাধের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী ও তাদের সন্ত্রাসী ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির নিষিদ্ধ হতে যাচ্ছে, এটি একটি সময়োপযোগী পদক্ষেপ। সন্ত্রাস দমন আইন ২০০৯-এর ৬ ও ৭ ধারায় সন্ত্রাসী কর্মকা-ের যে সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, তার সঙ্গে দেশের সাম্প্রতিক সহিংসতা ও সন্ত্রাসী কর্মকা-ের মিল রয়েছে।
সংবিধানের ৩৮ অনুচ্ছেদেও সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনাকারী রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের বিষয়ে বলা হয়েছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে দেশজুড়ে ব্যাপক সন্ত্রাস-সহিংসতা, নৈরাজ্য ও প্রাণহানির ঘটনায় জামায়াত-ছাত্রশিবিরের সংশ্লিষ্টতার প্রেক্ষিতে গৃহীত এ সিদ্ধান্তকে আমরা সাধুবাদ জানাই।
প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার কঠোর পরিশ্রম ও আত্মত্যাগের ফসল বিশ^ অর্থনীতিতে অর্থনৈতিকভাবে স্থিতিশীল বাংলাদেশকে এমনভাবে নাশকতা করে বাধাগ্রস্ত করা কোনোভাবেই সম্ভব হবে না। দেশের জনগণ তা কখনো হতে দেবে না। অর্থনীতির সচল চাকাকে নাশকতার মাধ্যমে অচল করে বাংলাদেশের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নষ্ট করে বিএনপি-জামায়াতের স্বার্থ উদ্ধারের অপচেষ্টা কখনো সফল হবে না।
সন্ত্রাস-সহিংসতা, নৈরাজ্য, জ্বালাও-পোড়াও ও ভাঙচুর করে জনজীবনে দুর্ভোগ সৃষ্টিকারী স্বাধীনতাবিরোধী বিএনপি-জামায়াতকে এদেশের জনগণ বয়কট করেছে। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তিকে পরাজিত করে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন অসীম সমৃদ্ধি ও অমিত সম্ভাবনার পথে।
লেখক : অধ্যাপক, উপাচার্য
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়