সংগীতশিল্পী ফারজানা ওয়াহিদ সায়ান, সবসময়ই অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার। সমাজের মেহনতি, বঞ্চিত, অবহেলিত মানুষের পক্ষে তার কণ্ঠ গর্জে ওঠে। গান কিংবা রাজপথ, সবখানেই সায়ানের রয়েছে দৃপ্ত উপস্থিতি। 

জুলাই অভ্যুত্থানে ছাত্র–জনতার পক্ষে রাজপথে ছিলেন এই সংগীতশিল্পী। এমনকি দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতেও তিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। এবার তিনি সমাজ ও রাষ্ট্রে ঘৃণা এবং সহিংসতার চর্চা বন্ধে নিজের অবস্থান জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিলেন।

১২ মে সায়ান নিজের ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন, “আমি বর্তমান সরকারকে এই বিষয়গুলোতে কঠোর  হতে জোর দাবী জানাই। আপনারা ঘৃণা চর্চার বয়ানকে চিহ্নিত করুন,আক্রমণাত্মক ভাষা-ভংগী এগুলো নিয়ে কাজ করুন। সিভিলিয়ানদের জন্য সিভিল আচরণ এর মিনিমাম স্ট্যান্ডার্ড তৈরী করার কথা ভাবুন। বিভিন্ন মঞ্চে গিয়ে একে বেশ্যা,তাকে দালাল, এগুলো তো রোজকার ব্যাপার হয়েছে। তার সঙ্গে এই যে জবাই করার কথা বলা, ‘ধরে ধরে জবাই কর’, এটা পৃথিবীর যে কোনো সমাজে,যে কোনো রাষ্ট্রে কীভাবে গ্রহণযোগ্য? এইভাবে ঘৃণার এবং হত্যা-হুমকির খুল্লামখুল্লা চর্চা চালিয়ে যাবে কেউ,আর তারপর সেটার কোন পরিণতি হবে না, এটা কেন গ্রহণ্যোগ্য? এখানে তো ব্যক্তিকে হত্যা করার কথা বলা হচ্ছে। এটা কিভাবে স্বাভাবিক? এটা স্লোগান হিসাবে কেন আপত্তিকর নয়? হত্যার উস্কানী নয়?”

এরপর তিনি লিখেছেন, ‘২০১৩ তে এই ভাষা শুনেছি গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের সময়। আনন্দ হয় নাই প্রাণে। শিহরিত হই নাই। বিচার চাওয়া আর জবাই করা এক ব্যাপার না। বিচারের সংস্কৃতিই সেটা নয়।’

সায়ান লিখেছেন, “সাধারণ জনতার ভীড়ে সুশীলও থাকেন, উন্মাদ মব-জনতাও থাকেন।তাদের কাছে কিছু আশা করি না বাড়তি। তারা রাষ্ট্রের দায়িত্বে নাই। তারা যে যার নীতি-গতি-বিবেক অনুযায়ী আচরণ করবেন,সকলেরই দেশ,সকলেই স্বাধীন। কিন্তু আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর দিক থেকে তো একটা মানদণ্ড থাকতে হবে আচরণের। কে্নো একটা মানুষ আরেকটা  মানুষকে বেশ্যা ডেকে পার পাবেন? কেনো যে কেউ যে কাউকে ভালো না লাগলেই জবাই করার হুমকি দেবেন এবং তার স্বাভাবিকীকরণ হবে? কেন বিভিন্ন মাহফিলে ঘেন্না ছড়ানোর বয়ান চলতে পারে যুগের পর যুগ, অন্য ধর্মের মানুষদের প্রতি? মেয়েদের প্রতি? একটা ‘ঘৃণা নিয়ন্ত্রণ কমিশন’ এখন সময়ের দাবী।”

তিনি লিখেছেন, “সেদিন দেখলাম কোনো এক মঞ্চ থেকে কেউ কেউ তালে তালে বলছেন, ‘একটা একটা লীগ ধর,ধরে ধরে জবাই কর!’ রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে থাকা মানুষেরা কেন এই চর্চায় কোন সমস্যা পাচ্ছেন না? মব-জনতা উন্মাদনায় ভেসে যাচ্ছে জংলীপনায়। কিন্তু রাষ্ট্রের নিযুক্ত সেবকেরা কি করে এখানে নির্বিকার থাকবেন? এগুলোকে দন্ডনীয় অপরাধ হিসেবে দেখতে চাই। কেউ অপরাধ করলে তার বিচার করবেন আদালতে। জবাই করার স্লোগানের মধ্যে ২০১৩ তেও দেশপ্রেম ছিল না, এখনো নাই। বিচারের মানসিকতা ছিল না।এখনো নাই।”

একদম শেষে তিনি লিখেছেন, ‘এই দেশে গণহত্যার আগের জমানার কারিগরেরা বা সহযোগীরা কেউ নাই এখন। গোলাম আজম, নিজামী এরা কেউ নাই আর। হাসিনাও এখানে ফিরবে শুধু বিচারেরই মুখোমুখি হতে। বাংলাদেশের বেশীরভাগ মানুষ সেটা নিশ্চিত করবে, তাতে কোন সন্দেহ রাখলাম না। কিছু লোকের পাল্টাপাল্টি প্রতিশোধের খেলা থেকে মুক্তি পেতে চাই। গা ছেড়ে দিয়ে বসে থাকলে সংস্কৃতি পাল্টাবে না। কাজ করতে হবে। ক্যাম্পেইন করতে হবে। এখানে মানুষ গালি দেয়া এবং জবাই করার হুমকি দেবার মধ্যে দিয়ে দেশপ্রেমিকের দায়িত্ব শেষ করে। এগুলো বন্ধ করতে হবে। সরকারকে বলছি। গায়েবী মামলা দিয়ে তুলে নিয়ে যেয়েন না কাউকে কেউ কিছু বললেই। কোন কথাগুলো হিংস্র এবং আক্রমণাত্মক, সেগুলোর তালিকা করেন। আইনীভাবে ঘৃণা চর্চাকে নিষিদ্ধ করেন। এটা কোন রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার জটিল প্রক্রিয়ার চেয়ে কিছুটা সহজ হবে করা। ঘৃণা চর্চাকে খাটো করে দেখবেন না। সেখান থেকে বৈধতা আসে বড় বড় অপরাধের।’



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews