সামনে লক্ষ্য ছিল বিশাল। জিততে হলে গড়তে হতো বিশ্বরেকর্ড। অনিশ্চয়তার খেলা ক্রিকেটে হয়তো অনেক কিছুই সম্ভব। তবে যে ম্যাচের প্রথম ইনিংসে ব্যাটারদের অসহায় আত্মসমর্পনের গল্প লিখেছে বাংলাদেশ তাতে জয় নিয়ে চিন্তা ছেড়ে ড্র’র লক্ষটাও বিলাসিতা। তাই বলে নিদেনপক্ষে লড়াইটুকুও করতে না পারার আক্ষেপে পুড়তে হয়েছে লাল-সবুজদের। গতকাল চেন্নাই টেস্টের চতুর্থ দিনের প্রথম সেশনেই হয়ে গেছে ফয়সালা। বাংলাদেশকে ২৮০ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়েছে ভারত। দুই টেস্ট সিরিজে এগিয়ে গেছে ১-০ ব্যবধানে।
ওপেনারদের ভালো শুরুর পরও আগের দিন বিকেলে ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল বাংলাদেশ। চতুর্থ দিনে আশা ছিলো লড়াইয়ের। সকালে নেমে সেই লড়াইয়ের আভাস দিয়েছিলেন সাকিব আল হাসান ও নাজমুল হোসেন শান্ত। তবে প্রথম ঘণ্টার পর বল হাতে নিয়েই হিসেব এলোমেলো করে দেন রবীচন্দ্রন অশ্বিন, ধারালো হয়ে উঠেন রবীন্দ্র জাদেজা। বাংলাদেশ দল আর পায়নি দিশা।
৫১৫ রানের রেকর্ড লক্ষ্যে নেমে বাংলাদেশের ইনিংস থেমেছে ২৩৪ রানে। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৮২ রান করেন অধিনায়ক শান্ত। প্রথম ইনিংসে উইকেটশূন্য থাকলেও ৮৮ রানে ৬ উইকেট নিয়েছেন অশ্বিন। এর আগে ব্যাট হাতে দলের নায়ক তিনি। প্রথম ইনিংসে প্রবল চাপে খেলেন ১১৩ রানের ইনিংস। নিশ্চিতভাবেই ম্যাচ সেরা এই অলরাউন্ডার। ৫৮ রানে ৩ উইকেট নেন জাদেজা। প্রথম ইনিংসে ১৯ রানে ২ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। ব্যাট হাতে অশ্বিনের সঙ্গে ১৯৯ রানের জুটির পথে ৮৬ করে ভূমিকা রাখেন বাঁহাতি অলরাউন্ডার।
আগের দিনের ৪ উইকেটে ১৫৮ রান নিয়ে নেমে চোয়ালবদ্ধ দৃঢ়তা দেখাচ্ছিলেন সাকিব-শান্ত। রান তোলার গতি মন্থর থাকলেও টিকে থাকতে পারছিলেন তারা। জাসপ্রিট বুমরাহ ও মোহাম্মদ সিরাজের দারুণ ডেলিভারিগুলো সামাল দিয়ে ফেলেছিলেন দুজন। পেসারদের দিয়ে শুরুতে উইকেট নেওয়ার চেষ্টা চালালেও তাতে সফল না হওয়ায় স্পিনারদের শরণ নেন রোহিত শর্মা। জাদেজা আসতেই নড়বড়ে দেখায় বাংলাদেশের ব্যাটারদের। সাকিব জাদেজার বলে পরাস্ত হয়ে স্টাম্পিংয়ের সুযোগও দেন। রিশভ পান্তের ব্যর্থতায় ১৭ রানে বেঁচে যান তিনি। তবে আর কেবল ৭ রান যোগ করা হয় তার। প্রথম ঘণ্টার পর অশ্বিন এসেই ছাঁটেন তাকে। অশ্বিনের বল ঠেকাতে গিয়ে ফরোয়ার্ড শর্ট লেগে ক্যাচ দেন বাংলাদেশের সফলতম ক্রিকেটার।
লিটন দাস নেমেই হাঁসফাঁস করতে থাকেন। জাদেজার বল যেন দুর্বোধ্য ঠেকে তার কাছে। একাধিকবার সুইপের চেষ্টায় গিয়ে ব্যর্থ হন। পরে জাদেজার বলেই সিøপে দেন সহজ ক্যাচ, ফেরেন ১ রান করে। শান্ত তখন আরেক প্রান্তে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন, তার সঙ্গে যোগ দেন মেহেদী হাসান মিরাজ। দারুণ সময় পার করতে থাকা এই অলরাউন্ডার এবার আর দৃঢ়তা দেখাতে পারেননি। অশ্বিনকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে লং অনে সহজ ক্যাচ। শান্ত টিকে সেঞ্চুরির আভাস দিচ্ছেলেন, তবে তাকে আর সাবলীল মনে হচ্ছিল না। ৮২ রানে একবার জীবন দিয়েও রক্ষা পাননি। জাদেজার বল এলোপাথাড়ি তুলে ফেরেন ওই ৮২ রানেই। তাসকিন ক্রিজে এসে টেকেন ৪ বল। তিনিও অশ্বিনের বলেই ক্যাচ দিয়ে হাঁটা ধরেন। শেষ উইকেট নিয়ে জাদেজা শেষ করে দেন ম্যাচ। তিন উইকেট নিয়ে জাদেজার টেস্ট শিকার এখন ২৯৯টি।
একই টেস্টে সেঞ্চুরি ও ইনিংসে ৫ উইকেট চতুর্থবার নিয়ে ইয়ান বোথামের রেকর্ডের আরেকটু কাছে যান অশ্বিন। পাঁচবার এই কীর্তি গড়ে বিশ্ব রেকর্ড বোথামের। উইনিং কম্বিনেশ না ভেঙে এই দল নিয়েই আগামী শুক্রবার কানপুরে দ্বিতীয় টেস্ট শুরু করবে ভারত।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ভারত : ৩৭৬ ও ২য় ইনিংস : ২৮৭/৪ (ডি.)
বাংলাদেশ : ১৪৯ ও ২য় ইনিংস : (লক্ষ্য ৫১৫, আগের দিন ১৫৮/৪) ৬২.১ ওভারে ২৩৪ (শান্ত ৮২, সাকিব ২৫, মিরাজ ৮, তাসকিন ৫, হাসান ৭, নাহিদ ০*; বুমরাহ ১/২৪, সিরাজ ০/৩২, আকাশ ০/২০, অশ্বিন ৬/৮৮, জাদেজা ৩/৫৮)।
ফল : বাংলাদেশ ২৮০ রানে পরাজিত
ম্যান অব দ্য ম্যাচ : রবীচন্দ্রন অশ্বিন।
সিরিজ : দুই ম্যাচ সিরিজে ১-০তে এগিয়ে ভারত।