আইনশৃঙ্খলা

ডাকাতির উদ্বেগজনক ডোরা

যৌথ বাহিনীর পরিচয় দিয়া যেইভাবে ঢাকার মোহাম্মদপুরে সংঘবদ্ধ ডাকাতির ঘটনা ঘটিয়াছে, উহা উদ্বেগজনক। রাজধানীর কেন্দ্রীয় এলাকায় নিশীথে সাড়ম্বরে গৃহে প্রবেশ করিয়া পৌনে এক কোটি টাকা ও বিপুল স্বর্ণালংকার লইয়া নিষ্ক্রান্ত হইবার ঘটনা চমকপ্রদ, সন্দেহ নাই। কিন্তু উহা অপেক্ষা চমকপ্রদ হইতেছে, তাহাদের পরিধানে ছিল সেনাবাহিনী ও র‌্যাবের উর্দি। বস্তুত উর্দির বদৌলতেই এইভাবে রীতিমতো পাড়া-প্রতিবেশী জাগাইয়া ডাকাতি সম্ভব হইয়াছে, সন্দেহ নাই। বিস্ময়কর হইলেও সত্য, র‍্যাবের মিডিয়া উইং হইতে জানানো হইয়াছে, উহাদের মধ্যে পাঁচজনই বিভিন্ন বাহিনীর বরখাস্ত সদস্য। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চাকরিচ্যুত সদস্যদের এই ধরনের ডাকাতিতে সংশ্লিষ্ট হইবার বিষয় উদ্বেগ দ্বিগুন করিয়া তুলিতে যথেষ্ট। 

সমকালের খবর অনুযায়ী, ডাকাত দলের মধ্যে সেনাবাহিনী ও র‌্যাবের পোশাকে ১৫-১৬ জন, তৎসহিত সাদা পোশাকেও কয়েকজন ছিল। অস্ত্রসমেত দুইটি মাইক্রোবাস ও দুইটি প্রাইভেটকার লইয়া তাহারা যেইভাবে ব্যবসায়ীর গৃহে প্রবেশ করিয়াছিল, তাহাতে উপলব্ধির উপায় ছিল না– তাহারা প্রকৃতপক্ষে ডাকাত। প্রশ্ন হইল, বিপুল আয়োজন করিয়া আসিবার পরও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দৃষ্টিগোচর হইল না? পুলিশের যেই নিয়মিত টহলের দায়িত্ব রহিয়াছে, উহা যথারীতি পালিত হইলে হয়তো ডাকাতরা বমাল ধরা পড়িত। বিশেষ করিয়া কোনো এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এইভাবে কাউকে গ্রেপ্তার করিতে গেলে সংশ্লিষ্ট থানার অজ্ঞাত থাকিবার কথা নহে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ হইতে রাত্রিতে নাগরিকের গৃহে গিয়া গ্রেপ্তার কিংবা অভিযান পরিচালনার যেই রেওয়াজ আমাদের দেশে রহিয়াছে, এই ডাকাতির মধ্য দিয়া উহাও প্রশ্নের মুখে পড়িল। রাত্রির পরিবর্তে দিবালোকে অভিযান চালাইবার নিয়ম করিলেই এই প্রকার অঘটন হ্রাস পাইতে পারে।
উদ্বেগের মধ্যেও স্বস্তি, ঐ ঘটনায় জড়িত অধিকাংশকেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেপ্তার করিতে সক্ষম হইয়াছে। অবশ্য ১১ জন গ্রেপ্তার হইলেও লুট করা অর্থের সামান্যই উদ্ধার হইয়াছে। আমরা প্রত্যাশা করি, বাকি অর্থ ও স্বর্ণালংকার উদ্ধারেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সফল হইবে। তবে সবচাইতে জরুরি ডাকাত দলের এই চক্র শনাক্তকরণ। বিশেষ করিয়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বরখাস্ত কর্মীদের এই চক্রে সংশ্লিষ্ট হইবার বিষয় বিশদভাবে খতাইয়া দেখিতে হইবে। তাহাদের মাধ্যমে এই ধরনের ডাকাতি হইয়া থাকিলে উহাও বাহির করা জরুরি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হইতে বরখাস্ত হইলেও এই সকল কর্মীর উপর যে নজরদারি প্রয়োজন, এই ঘটনাই উহার প্রমাণ। 

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পোশাকের প্রতি নাগরিকগণের এক ধরনের ভীতি ও শ্রদ্ধা রহিয়াছে। তাহাদের পোশাক পরিলে এবং অস্ত্রসমেত থাকিলে কোনোভাবেই উহাকে ভুল কিংবা সঠিক ধরিবার সাধ্যি সাধারণ মানুষের নাই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিজেরই দায়িত্ব উহা রোধ করিবার সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা। তাহা না হইলে এইরূপ জনসম্পদ হরণ চলিতেই থাকিবে। সর্বোপরি মোহাম্মদপুরের ডাকাতির ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যেই সকল বহিষ্কৃত সদস্য সংশ্লিষ্ট ছিল, আইন অনুযায়ী তাহাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করিতে হইবে।

স্বীয় জানমালের নিরাপত্তায় নাগরিক দায়িত্বও কম নহে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও যদি আইনবিরোধী কোনো কর্মকাণ্ড করে, তবে উহাতে জাতীয় জরুরি সেবায় ৯৯৯-এ কল দিয়া বিষয়টি জানাইবার জন্য সচেতনতার বিষয়ও গুরুত্বপূর্ণ। তবে নাগরিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের প্রধান দায়িত্ব সরকারের এবং সেই লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যাহাতে স্বীয় দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে, উহা গুরুত্বপূর্ণ। মোহাম্মদপুরের ডাকাতির ঘটনা যদ্রূপ জনমনে ভীতির সঞ্চার করিয়াছে, তদ্রূপ এই ঘটনায় অপরাধী চক্রকে পাকড়াও করিয়া দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির মাধ্যমে স্বস্তি ফিরিতে পারে। 



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews