প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম ৬০ দিনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও নীতিকে উল্টে দেয়। আমেরিকা, ইউরোপ, এশিয়ার মিত্র ও শত্রুদের সঙ্গে মার্কিন সম্পর্ক নাটকীয়ভাবে ভেঙে পড়ে।



সুতরাং, এর বিস্তৃত রূপরেখায়  ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য নীতি জো বাইডেনের নীতি থেকে খুব বেশি আলাদা নয়।







তাদের অভিন্ন দিকগুলোর মধ্যে রয়েছে ইসরায়েলের নিরাপত্তার প্রতি দৃঢ় প্রতিশ্রুতি ও গাজা-লেবাননে সাম্প্রতিক সংঘাতের অবসান ঘটানোর ইচ্ছা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব এবং ইসরায়েলের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তির অগ্রাধিকার যেখানে সৌদি-ইসরায়েল স্বাভাবিকীকরণ অন্তর্ভুক্ত থাকবে, সেক্ষেত্রে ফিলিস্তিনিদের জন্য ইসরায়েলের কিছু ছাড়ের প্রয়োজন হবে। উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদের (জিসিসি) দেশগুলোর সঙ্গে মার্কিন অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সম্পর্কের উচ্চ মূল্যায়ন, পাশাপাশি চীনকে নিয়ন্ত্রণ করার উপায় ও ইরানের সাথে একটি আলোচনার চুক্তিতে পৌঁছানোর দৃঢ় প্রত্যয়।

এ প্রদর্শিত লক্ষ্য তালিকা ও তার প্রশাসনের নীতিগত পদক্ষেপ থেকে যা উঠে আসে তা হলো ট্রাম্প দুটি রূপান্তরমূলক এবং মূল্যবান সাফল্য অর্জনের দিকে মনোনিবেশ করছেন যা তার পূর্বসূরীরা অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছেন।  

এক. আরব-ইসরায়েলি সংঘাতের অবসান, যা ত্রিপক্ষীয় মার্কিন-সৌদি-ইসরায়েলি চুক্তির উপর কেন্দ্রীভূত, যার মধ্যে থাকবে সৌদি-ইসরায়েলি স্বাভাবিকীকরণ,

দুই. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে একটি চুক্তি। উভয়ই ঐতিহাসিক অর্জন হবে। তবে, এখনও পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রে অগ্রগতি কঠিন ও স্থবির প্রমাণিত হয়েছে।

প্রথম মাস

ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের আগেই মধ্যপ্রাচ্যের গতিশীলতার ওপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছিলেন। নভেম্বরের গোড়ার দিকে তিনি নির্বাচিত হওয়ার কয়েক সপ্তাহ পরে, ইসরায়েল ও লেবানন, ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহ বাহিনীর মধ্যে ১৫ মাস ধরে চলা লড়াই বন্ধ করার জন্য মার্কিন-মধ্যস্থতায় একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। ২০ জানুয়ারি তিনি দায়িত্ব গ্রহণের মাত্র কয়েক দিন আগে, ইসরায়েল ও হামাস গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মি-বন্দী বিনিময়ে সম্মত হয়েছিল। উভয় ক্ষেত্রেই ট্রাম্পের বাগ্মীতা ও প্রতিপক্ষরা এ কূটনৈতিক সাফল্য অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে বলে জানা গেছে।

নতুন যুদ্ধ শুরু না করে  ট্রাম্প যুদ্ধের সমাপ্তি—তার প্রচারণার মূল ভিত্তি করেছিলেন। এতে করে মনে হচ্ছিল এ প্রতিশ্রুতি ফলপ্রসূ হচ্ছে। তথাপি তার দ্বিতীয় মেয়াদের দুই মাসেরও বেশি সময় পরে, গাজায় যুদ্ধবিরতি মূলত ভেঙে পড়েছে এবং ইসরায়েল বেশ বড় আকারের সামরিক তৎপরতা শুরু করেছে; লেবাননে যুদ্ধবিরতি পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। গত সপ্তাহে যুদ্ধের আগুন-ইসরায়েলে রকেট হামলা এবং বৈরুতে ইসরায়েলি আক্রমণ সহ—সেই যুদ্ধবিরতিকেও ভেঙে ফেলার হুমকি দিয়েছে। গত সপ্তাহ থেকে, আমেরিকা নিজেই হুথিদের সা একটি তীব্র সামরিক সংঘাতে লিপ্ত। তারা ইয়েমেনে এই গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বিমান হামলা চালিয়েছে। রবিবার,  ট্রাম্প ইরানের সঙ্গে কোনো চুক্তিতে রাজি না হলে তার বিরুদ্ধে যুদ্ধের হুমকি দিয়েছেন (যদিও তিনি স্পষ্ট করেননি, যে যুদ্ধটি ইসরায়েলি, আমেরিকান, নাকি উভয়ের হবে)। অন্য কথায়, আবারও শান্তির আশাকে যুদ্ধের মেঘ ঢেকে দিচ্ছে।

ইসরায়েল-ফিলিস্তিন

প্রকৃতপক্ষে ১ এপ্রিল পর্যন্ত ট্রাম্প প্রশাসন মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় কোনো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে শুরুর দিকের বাধা থেকে খুব বেশি দূরে যেতে পারেনি। গাজায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আবারও হামাসের সঙ্গে আলোচনায় জড়িয়ে পড়েছে কাতারি এবং মিশরীয় মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে। তারা চাইছে অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তি, স্থায়ী যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠা ও বিধ্বস্ত উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য যুদ্ধোত্তর ব্যবস্থা নির্ধারণ করতে। পশ্চিম তীরে পরিস্থিতি বিপজ্জনকভাবে অবনতিশীল।

সৌদি-ইসরায়েলি স্বাভাবিকীকরণের মহা পুরস্কারের দিকে নজর রেখে, ট্রাম্প প্রশাসন এখনও স্পষ্ট করে বলেনি যে তারা ফিলিস্তিনিদের কী প্রস্তাব দিতে পারে যার সঙ্গে ইসরায়েল একমত হবে এবং সৌদিরা স্বাক্ষর করতে পারে। দুঃখজনকভাবে, সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে মার্কিন বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ সৌদি-ইসরায়েলি স্বাভাবিকীকরণের সম্ভাবনা সম্পর্কে বারবার কথা বলেছেন। তবে কেবল গাজার ব্যবস্থাগুলোকে সেই আলোচনার সঙ্গে প্রাসঙ্গিক বলে উল্লেখ করেছেন; তিনি স্পষ্টতই পশ্চিম তীর সম্পর্কিত কোনো ব্যবস্থা সম্পর্কে কিছুই বলেননি। এটি কি কেবল একটি এলোমেলো বাদ পড়া বা হোয়াইট হাউস নীতির ইঙ্গিত ছিল? গাজার ক্ষেত্রে যদি ইসরায়েলি ছাড়ের কথা আসে, তাহলে রিয়াদ স্বাভাবিকীকরণের দিকে এগিয়ে যাবে কিনা সন্দেহ; পশ্চিম তীরেও কিছু ছাড় চুক্তির অংশ হতে হবে।

লেবাননে এগিয়ে যাওয়ার পথ

লেবাননে মার্কিন-মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি গাজার তুলনায় কিছুটা ভালো অবস্থানে রয়েছে। তবে সেখানেও এটি নড়বড়ে বলে মনে হচ্ছে। ইসরায়েল লেবাননের অভ্যন্তরে পাঁচটি স্থানে সামরিক উপস্থিতি বজায় রেখেছে। যেটা কেবল হিজবুল্লাহর বক্তব্যকেই কাজে লাগিয়েছে। তারা ইচ্ছামতো দেশটিতে হিজবুল্লাহর লক্ষ্যবস্তুতে আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে। গত সপ্তাহে যুদ্ধবিরতির পর বৈরুতে প্রথম ইসরায়েলি বিমান হামলাসহ, ব্যাপক ভাঙনের সম্ভাবনা সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছিল। ইসরায়েল ৩১ মার্চ রাজধানীতে আরও একটি হামলা চালিয়েছে। অন্যদিকে, হিজবুল্লাহ লিটানি নদীর দক্ষিণে অবস্থানগুলো সরিয়ে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মূলত এগিয়ে গেছে, যুদ্ধবিরতির আগের তুলনায় ইসরায়েলি আক্রমণের প্রস্থ এবং তীব্রতা নাটকীয়ভাবে হ্রাস পেয়েছে। দশ লক্ষেরও বেশি লেবানিজ বাস্তুচ্যুত দক্ষিণ বৈরুত ও বেকা উপত্যকায় তাদের শহর এবং আশপাশে ফিরে এসেছে। উত্তর ইসরায়েলে ইসরায়েলিদের তাদের শহরে প্রত্যাবর্তন উল্লেখযোগ্যভাবে সীমিত।

লেবাননের সামনে আসন্ন চ্যালেঞ্জ হলো যুদ্ধবিরতি চুক্তিকে জাতিসংঘের বৃহত্তর প্রস্তাবের সঙ্গে সংযুক্ত নিশ্চিত করা। যেখানে হিজবুল্লাহ এবং অন্যান্য অ-রাষ্ট্রীয় সশস্ত্র গোষ্ঠীর সম্পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণের দাবি করা হয়েছে। হিজবুল্লাহ লিটানির দক্ষিণ থেকে সরে যেতে রাজি হলেও, এখনও পর্যন্ত নদীর উত্তরে লেবাননের রাষ্ট্রের কাছে তার অস্ত্র সমর্পণ করার কথা বিবেচনা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। এ অচলাবস্থা লেবাননে গুরুতর অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা সমস্যায় পরিণত হতে পারে অথবা হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে পূর্ণ মাত্রার ইসরায়েলি যুদ্ধ পুনরায় শুরু হতে পারে- অথবা উভয় ক্ষেত্রেই।

ইয়েমেন নীতি

ইয়েমেনে ট্রাম্প প্রশাসনও কমবেশি বাইডেন প্রশাসনের মতো একই নীতিমালা ব্যবহার করছে। হুথিদের লোহিত সাগরে এবং ইসরায়েলের ওপর তাদের আক্রমণ বন্ধ করতে বাধ্য করার প্রয়াসে সরাসরি মার্কিন সামরিক হামলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আগের মতো এ হামলা হুথিদের সক্ষমতা হ্রাস করতে পারে; কিন্তু এখন পর্যন্ত তারা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লোহিত সাগরে অতিরিক্ত আক্রমণ বা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ঠেকাতে পারেনি।

ইরানের সঙ্গে মোকাবিলা

বাইডেন ও ট্রাম্প প্রশাসন উভয়ই সঠিকভাবে অনুমান করেছে যে, এ অঞ্চলে আমেরিকা যেসব সংঘাতের মুখোমুখি হচ্ছে তার মধ্যে ইরানই প্রধান ভূমিকা পালন করছে। প্রকৃতপক্ষে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইরানের বিরুদ্ধে সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছেন, “সর্বোচ্চ চাপ” প্রচারণা পুনরায় শুরু করেছেন এবং “এমন বোমা হামলা চালানোর হুমকি দিয়েছেন যা তারা আগে কখনও দেখেনি”, একই সঙ্গে আলোচনা ও মতপার্থক্যের শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানিয়ে সর্বোচ্চ নেতার কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন। ট্রাম্প স্পষ্টতই একটি রূপান্তরমূলক চুক্তির জন্য প্রস্তুত; এটা স্পষ্ট নয় যে সর্বোচ্চ নেতা সম্মত আছেন কিনা। প্রকৃতপক্ষে, ইরান সপ্তাহান্তে ঘোষণা করেছে যে তারা সরাসরি আলোচনা প্রত্যাখ্যান করে কিন্তু পরোক্ষ আলোচনার জন্য উন্মুক্ত।

একদিকে, ইরানকে তীব্র চাপের মধ্যে বলা যেতে পারে: তারা সিরিয়ায় প্রবেশাধিকার হারিয়েছে; তাদের মুকুটরত্ন হিজবুল্লাহ, ব্যাপকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে। তাদের হুথি মিত্ররা আক্রমণের মুখে পড়েছে। আর হামাস মূলত ধ্বংস হয়ে গেছে। উপরন্তু, ইরানের অর্থনীতি দুর্বল এবং ক্রমবর্ধমান চাপের মধ্যে রয়েছে। ইরান নিজেই সরাসরি আক্রমণের ঝুঁকিতে রয়েছে।

অন্যদিকে, ইরানের কট্টরপন্থীরা হয়তো ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়গুলো দেখতে পারে। ইসরায়েলের সঙ্গে ১৮ মাসের যুদ্ধের পর ও তাদের মূল্যায়নে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথেও ইরানের নেতৃত্বাধীন প্রতিরোধ অক্ষশক্তি পরাজিত হয়েছে কিন্তু টিকে আছে। এমনকি হামাসও কয়েক মাস ধরে সরাসরি ইসরায়েলি আক্রমণ সত্তে¡ও অটল রয়েছে; যেমন হিজবুল্লাহ, হুথি এবং ইরাকি হাশদ আল-শাবি (পপুলার মোবিলাইজেশন ফোর্সেস, বা পিএমএফ)। এখন পর্যন্ত, সিরিয়ায় ইরান সম্পূর্ণ ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে, কিন্তু সেখানেও তারা তাদের ভাগ্য পরিবর্তনের উপায় খুঁজছে। তেহরান সিরিয়ায় ঐক্য ও স্থিতিশীলতা আনতে দামেস্কের নতুন নেতৃত্বের ব্যর্থতার ওপর নির্ভর করছে  আর বিনিয়োগ করছে । মনে করছে দেশের ক্রমাগত বা ক্রমবর্ধমান খণ্ডিতকরণ ইরানকে ফিরে আসার পথ তৈরি করবে। মার্চের মাঝামাঝি সিরিয়ার উপকূলে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো ইঙ্গিত দেয় যে ইরানিরা হয়তো লক্ষ্য থেকে খুব বেশি দূরে নয়। এটি বিশেষভাবে উদ্বেগজনক যে ইরান এবং ইসরায়েল উভয়ই সিরিয়ার রাষ্ট্রের ব্যর্থতায় প্রতিশ্রæতিবদ্ধ ও অবদান রাখছে বলে মনে হচ্ছে।

 গত ১৮ মাস ধরে মধ্যপ্রাচ্যের দুই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী, ইসরায়েল ও ইরানের নিরাপত্তা হিসাব দেখে, উপসংহারটি এত স্পষ্ট নয়। হ্যাঁ, ইরান এখন ইসরায়েলি ও আমেরিকান আক্রমণের ঝুঁকিতে রয়েছে। কিন্তু ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েল তার আধুনিক ইতিহাসে একদিনে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির শিকার হয় এবং তারপর থেকে কার্যকরভাবে একটি অবিরাম, পূর্ণ-সমন্বয় যুদ্ধে লিপ্ত হয়। এরই মধ্যে, ইরান নিজেই তুলনামূলকভাবে নিরাপদ ও কম অতিরিক্ত চাপের সম্মুখীন হয়েছে। গত বছরের এপ্রিল ও অক্টোবরে তারা তার বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় কয়েকটি লক্ষ্যবস্তু হামলা এবং একটি ক্ষেপণাস্ত্র-জ্বালানি কেন্দ্র ও একটি পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্র ধ্বংস সহ্য করেছে। যা অবশ্যই উল্লেখযোগ্য আক্রমণ ছিল ও দেশের দুর্বলতাগুলোকে স্পষ্টভাবে প্রকাশ করেছিল। তবুও, ইরান ও অধিবাসীরা গত ১৮ মাস ধরে ইসরায়েল এবং ইসরায়েলিরা যে আঘাতমূলক ও দীর্ঘস্থায়ী দুর্দশার সম্মুখীন হচ্ছে তার চেয়ে বেশি কিছুই ভোগ করেনি।

ইরানের প্রক্সি মিত্রদের ওপর আক্রমণের বিপরীত প্রভাব

যদিও ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র শক্তির অবনতি ও তার মিলিশিয়া মিত্রদের, বিশেষ করে হিজবুল্লাহর অবনতি—ইসরায়েলি আক্রমণের বিরুদ্ধে ইরানের প্রতিরোধকে কার্যত ধ্বংস করে দিয়েছে। ইসরায়েলেরও কিছু ক্ষেত্রে, আমেরিকার-ইরানি প্রক্সিদের সঙ্গে চলমান যুদ্ধ আসলে প্রতিরোধের অক্ষের প্রতি তেহরানের প্রতিশ্রুতিকে আরও শক্তিশালী করে। মিলিশিয়া মিত্রদের ওপর প্রতিটি আক্রমণ হলো ইরানের শত্রুদের দ্বারা ইরান ছাড়া অন্য লক্ষ্যবস্তুতে ব্যয় করা সম্পদ ও শক্তি। আর এটি ইসরায়েলি এবং আমেরিকান আক্রমণ শোষণ করার জন্য বাফার ও “ক্রাম্পল জোন” হিসাবে প্রক্সি বাহিনীকে সশস্ত্র করার ইরানের কৌশলকে বৈধতা দেয়। ইরান যত বেশি তার শত্রুদের ব্যস্ত রাখতে পারে এবং তার আরব মিলিশিয়া মিত্রদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে বিভ্রান্ত করতে পারে, তত বেশি তারা নিজেকে যুদ্ধের ঊর্ধ্বে রাখতে পারে।

অর্থপূর্ণ আলোচনা নাকি কেবল পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে যাওয়া

অবশ্যই, ট্রাম্প এ কৌশলে হুমকি দিয়ে তেহরানের প্রতি আহ্বান জানাতে চাইছেন, যদি ইরানিরা বড় ছাড় নিয়ে আলোচনার টেবিলে না আসে, তবে সরাসরি সামরিক পদক্ষেপ নেওয়া হবে । কিন্তু তেহরান এটাও জানে যে, ইসরায়েলি বা আমেরিকানদের সরাসরি আক্রমণের বিরুদ্ধে কার্যকর সামরিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা না থাকলেও, তারা উপসাগরে তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদন এবং পরিবহনে আঘাত হানতে, ব্যাহত করতে পারে। যা ট্রাম্প অবশ্যই এড়াতে চাইবেন, পাছে এ ধরনের হামলা বিশ্বব্যাপী জ্বালানি ও অর্থনৈতিক সংকটের সৃষ্টি করে। বলতে গেলে,উভয় পক্ষই একে অপরের ওপর নির্ভরশীল।

সম্ভবত ইরানের কট্টরপন্থীরা তাদের পরিচিত বাঙ্কারে লুকিয়ে থাকবে। যেখানে এখন রাশিয়া এবং চীন মিত্র হিসেবে রয়েছে। তারা দীর্ঘ খেলা খেলবে, একটি প্রকৃত যুদ্ধ এড়াতে ও ট্রাম্প এবং ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু উভয়ের মেয়াদকে ছাড়িয়ে যাওয়ার আশায়। বর্তমানে পরিস্থিতি যখন দাঁড়িয়েছে—“কেবলমাত্র” অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা এবং ইরানের আরব মিলিশিয়া মিত্রদের ওপর আক্রমণের মুখোমুখি - তখন তেহরান এত তীব্র চাপের মধ্যে নেই যে সর্বোচ্চ নেতা এবং কট্টরপন্থীরা মনে করে যে তাদের বড় বা রূপান্তরকারী ছাড় দিতে হবে। তাদের আলোচনায় অংশগ্রহণের জন্য উৎসাহিত করা হতে পারে কিন্তু পারমাণবিক চুক্তির ক্ষেত্রে সীমিত ছাড় দেওয়া হতে পারে, যা ২০১৫ সালে তারা প্রত্যাখ্যান করেছিল—তার থেকে খুব বেশি নয়। এছাড়াও, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনার প্রতি তাদের আস্থা কম। কেননা তিনি আমেরিকার সঙ্গে তাদের শেষ চুক্তি বাতিল করেছিলেন । অবশ্যই পরিস্থিতি দ্রুত ইরানের ওপর সরাসরি বড় আক্রমণের দিকে পরিবর্তিত হলে এ হিসাব পরিবর্তন হতে পারে।

জিসিসির অর্থনৈতিক কেন্দ্রিকতা

দ্বন্দ্ব বাদ দিলে এ অঞ্চল সম্পর্কে ট্রাম্প প্রশাসনের দৃষ্টিভঙ্গির মূল বিষয় হলো সৌদি আরব এবং জিসিসি দেশগুলোর প্রধান অর্থনৈতিক ও ক্রমবর্ধমান প্রযুক্তিগত অংশীদার হিসাবে গুরুত্ব। সৌদিরাষ্ট্র ও জিসিসির বাকি অংশে যে অসাধারণ অগ্রগতি হচ্ছে তা বর্ণনা করতে গিয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূত স্টিভ উইটকফ যুক্তি দিয়েছিলেন, যে আরব-ইসরায়েলি স্বাভাবিকীকরণ ও আরও সংহত মধ্যপ্রাচ্যের প্রেক্ষাপটে এ উন্নয়নগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বের দিক থেকে এ অঞ্চলটিকে “ইউরোপের চেয়ে অনেক বড়” করে তুলতে পারে।  

শেষ কথা

দুই মাসেরও বেশি সময় আগে ক্ষমতায় আসার পর থেকে,  ট্রাম্প প্রশাসনের নীতিগুলো মধ্যপ্রাচ্যের অপ্রতিরোধ্য সংঘাত ও স্থগিত সংকটের ওপর এখনও কোনো রূপান্তরমূলক প্রভাব ফেলেনি । তবে এগুলো এখনও শুরুর দিনের হিসাব। প্রশাসনের কাছ থেকে দুটি মূল প্রশ্নের উত্তরের জন্য অপেক্ষা করছে সবাই—

প্রথমত, গাজা ও পশ্চিম তীরে “ পরবর্তী দিনের” জন্য মার্কিন পরিকল্পনা কী, এতে কি সৌদিদের ইসরায়েলের সঙ্গে স্বাভাবিকীকরণে সম্মতি দেওয়ার জন্য যথেষ্ট থাকবে? যদি এ প্রশ্নের উত্তর ইতিবাচক হয়, তাহলে এ অঞ্চলটি সত্যিই একটি বড় ইতিবাচক রূপান্তরের দ্বারপ্রান্তে থাকবে, যেখানে অন্যান্য আরব ও মুসলিম দেশগুলো ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য গ্রহণযোগ্য ব্যবস্থা ও সৌদি আরবের চাপ অনুসরণের প্রেক্ষাপটে ইসরায়েলের সঙ্গে স্বাভাবিকীকরণ করবে।

দ্বিতীয়ত, ট্রাম্প প্রশাসন কীভাবে ইরানের সাথে একটি রূপান্তরমূলক চুক্তিতে পৌঁছাবে। এই ধরনের চুক্তি মধ্যপ্রাচ্যের জন্যও গভীর ইতিবাচক পরিণতি বয়ে আনবে। কিন্তু এখন পরিস্থিতি যেমন দাঁড়িয়েছে, তেমনই সম্ভাবনা বেশি। কোনো বড় যুদ্ধ না হলেও কোনো বড় ক‚টনৈতিক অগ্রগতিও হবে না।

ট্রাম্প নিজেকে চূড়ান্ত চুক্তিকারী হিসেবে অহম প্রকাশ করেন। আরব-ইসরায়েল সংঘাতের সমাধান ও কয়েক দশক ধরে চলমান মার্কিন-ইরান বৈরিতার অবসান ঘটাবে এমন একটি চুক্তিকে অগ্রাধিকার দেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি সঠিক। দুটি চুক্তিই দীর্ঘদিন ধরেই অপ্রত্যাশিত। এখন পর্যন্ত, এটি কঠিন হয়ে পড়েছে, তবে সামনের মাসগুলোতে ট্রাম্পের কাছে এ দুটি লক্ষ্যকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য প্রচুর সময় রয়েছে।

 লেখক: মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক গবেষক, লেখাটি মিডল ইস্ট ইনস্টিটিউটের অন্তর্জাল থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে ভাষান্তর

বাংলাদেশ সময়: ০০২৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩, ২০২৫

জেএইচ



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews