মহাবিশ্বের প্রথম নক্ষত্র কীভাবে সৃষ্টি হয়েছিল—সে বিষয়ে নতুন প্রশ্ন তুলেছে সাম্প্রতিক এক বৈজ্ঞানিক গবেষণা। গবেষকদের দাবি, তারা এমন কিছু রহস্যময় বস্তু শনাক্ত করেছেন, যা হতে পারে ‘ডার্ক স্টার’। ২০২৫ সালে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের (মহাকাশ পর্যবেক্ষণ যন্ত্র) তথ্য বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা এই সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন।
ডার্ক স্টার নাম শুনে অন্ধকার নক্ষত্র মনে হলেও, এগুলো আসলে পুরোপুরি অন্ধকার নয়। এখানে ‘ডার্ক’ বলতে বোঝানো হয়েছে ডার্ক ম্যাটার (অদৃশ্য বস্তু) থেকে আসা শক্তি। সাধারণ নক্ষত্রের মতো পারমাণবিক সংযোজন (নিউক্লিয়ার ফিউশন) নয়, ডার্ক স্টার আলো তৈরি করে ডার্ক ম্যাটার থেকে নিঃসৃত শক্তির মাধ্যমে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, ডার্ক স্টার আকারে অত্যন্ত বড় এবং ভরেও সাধারণ নক্ষত্রের চেয়ে অনেক বেশি। ডার্ক ম্যাটার মহাবিশ্বের প্রায় ২৭ শতাংশ হলেও এটি সরাসরি দেখা যায় না। কারণ, এর কণাগুলো আলো শোষণ বা প্রতিফলন করে না। কিছু তত্ত্ব অনুযায়ী, ডার্ক ম্যাটারের কণা নিজেদের বিপরীত কণার (অ্যান্টিপার্টিকেল) সঙ্গে সংঘর্ষে বিপুল শক্তি তৈরি করতে পারে।
এই সংঘর্ষ থেকে উৎপন্ন তাপ গ্যাসের মেঘকে পুরোপুরি সংকুচিত হতে বাধা দেয়। ফলে সেখানে পারমাণবিক সংযোজন শুরু না হয়ে তৈরি হয় ডার্ক স্টার। এজন্য এসব নক্ষত্র দীর্ঘ সময় টিকে থাকতে পারে এবং দেখতে তুলনামূলক ঠান্ডা হলেও আকার বড় হওয়ায় বেশ উজ্জ্বল দেখায়।
গবেষকদের মতে, ডার্ক স্টার খুবই প্রাচীন এবং এদের আলোতে প্রবল রেডশিফট দেখা যায় (মহাবিশ্বের প্রসারণের কারণে আলো লাল দিকে সরে যাওয়া)। এগুলো মূলত হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম দিয়ে গঠিত।
তবে সব বিজ্ঞানী একমত নন। কেউ কেউ মনে করছেন, এসব বস্তু আসলে অস্বাভাবিক গ্যালাক্সি বা অত্যন্ত বড় সাধারণ নক্ষত্রও হতে পারে। তাই আরও পর্যবেক্ষণ ও উন্নত গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। রহস্য উদ্ঘাটিত না হওয়া পর্যন্ত ডার্ক স্টার মহাবিশ্ব গবেষণার এক আকর্ষণীয় সম্ভাবনাই হয়ে থাকবে।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল