আর্জেন্টাইন বিশ্বকাপজয়ী মহাতারকা লিওনেল মেসিকে সর্বকালের সেরা ফুটবলারের স্বীকৃতি দিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব ফুটবল হিস্টরি অ্যান্ড স্ট্যাটিসটিকস (আইএফএফএইচএস)।

নিজেদের ওয়েবসাইটে সোমবার সর্বকালের সেরা ১০ ফুটবলারের তালিকা প্রকাশ করেছে আইএফএফএইচএস, যেখানে মেসিই সবার ওপরে।

আইএফএফএইচএস হলো ফুটবলের পরিসংখ্যান, রেকর্ড ও ইতিহাস সংরক্ষণকারী একটি সংস্থা। ফিফার সঙ্গে এই সংস্থার কোনো অধিভুক্তি নেই, তবে ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির ওয়েবসাইটে আইএফএফএইচএসের দেওয়া বিভিন্ন পুরস্কার ও রেকর্ডের স্বীকৃতি আছে।

২১১টির বেশি ফুটবল খেলা দেশগুলোর প্রতিনিধিত্ব রয়েছে আইএফএফএইচএসে। বার্ষিকভাবে বিভিন্ন পুরস্কারও দেয় এই সংস্থা।

কিসের ভিত্তিতে সর্বকালের সেরা ফুটবলার নির্বাচন করা হয়েছে সে বিষয়ে অবশ্য কিছু জানায়নি সংস্থাটি। স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম মার্কা বলছে, আইএফএফএইচএস সর্বকালের সেরা খেলোয়াড়দের এই তালিকা প্রস্তুত করেছে খেলোয়াড়দের ব্যক্তিগত ও দলীয় পরিসংখ্যান ও অর্জনের নিরিখে। ফুটবল মাঠে প্রভাব বিস্তারের বিষয়টিও রাখা হয়েছে বিবেচনায়। 

সবকিছুর বিবেচনায় মেসির ধারেকাছেও নেই কেই। এখন পর্যন্ত মেসি ৪৬টি দলগত শিরোপা জিতেছেন। বার্সেলোনার হয়ে জিতেছেন ৩৫টি, পিএসজির হয়ে তিনটি, ইন্টার মায়ামির হয়ে দুটি এবং ছয়টি শিরোপা জিতেছেন আর্জেন্টিনার হয়ে।

আটবার জিতেছেন ব্যালন ডি’অর, ইউরোপিয়ান গোল্ডেন শু, ফিফা বিশ্বকাপ গোল্ডেন বল, কোপা আমেরিকা গোল্ডেন বলসহ ব্যাক্তিগত অনেক পুরস্কার জিতেছেন তিনি। দলীয় ও ব্যক্তিগত ট্রফি বিচারে মেসিই ফুটবলের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল। আর মাঠে তার প্রভাব, দর্শদের বিনোদোন দেওয়া মাঠে দর্শক টানার অনন্য সব ক্যারিশমার কারণে মেসেই হয়েছেন সর্বকালের সেরা।

দ্বিতীয় স্থানে থাকা পেলের শিরোপাসংখ্যা মেসির তুলনায় অনেক কম। মার্কা ২০২২ সালে পেলের মৃত্যুর পর প্রকাশ করা প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, ক্যারিয়ারে ২৯টি শিরোপা জিতেছেন পেলে। তবে ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তির চেয়ে বেশি বিশ্বকাপ (তিনটি) কেউ জিততে পারেনি। পেলের সময় ব্যালন ডি’অর কেবল ইউরোপিয়ানদের দেওয়া হতো। তবে ব্যালন ডি’অর যারা দেয়, সেই ফ্রান্স ফুটবল সাময়িকী ২০১৫ তাদের এক বিশেষ সংস্করনে জানিয়েছিল, পেলে তাঁর ক্যারিয়ারে ব্যালন ডি’অর পেতে পারতেন সাতবার।

তালিকার তৃতীয় স্থানে আর্জেন্টিনার ’৮৬ বিশ্বকাপের মহানায়ক দিয়েগো মারাদোনা। এই কিংবদন্তি জাতীয় দল ও ক্লাম মিলিয়ে জিতেছেন ১১টি শিরোপা। শিরোপা সংখ্যায় পিছিয়ে থাকলেও তার এই অবস্থানে উঠে আসার কারণ খেলাটির উপর তার প্রভাব। প্রায় একক প্রচেষ্টায় আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ জেতানো এবং আনকোরা একটি ক্লাব নাপোলিকে বিশ্বসেরাদের কাতারে নিয়ে আসা- এসব অবদানের জন্য অবিস্মরণীয় হয়ে আছেন মারাদোনা।

তালিকার চারে পর্তুগালের তারকা ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো। ক্যারিয়ারে মোট ৩৫টি শিরোপা জিতলেও বিশ্বকাপ জিততে না পারার কারণেই সম্ভবত পিছিয়ে পড়েছেন এই ইতিহাসের সর্বোচ্চ এই গোলদাতা (৯৩৫) । তালিকার শীর্ষ তিনজন দেশের হয়ে জিতেছেন বিশ্বকাপ, যেটা পারেননি রোনালদো। তবে একবার হয়েছেন ইউরোপসেরা।

পাঁচে ইয়োহান ক্রুইফ। রোনালদোর মতোই একই কথা প্রজোয্য তার বেলাতেও। ডাচ এই কিংবদন্তিকে বলা হয় ‘টোটাল ফুটবল’। ক্লাব ও আন্তর্জাতিক ফুটবলে তার প্রভাব অসামান্য; তবে তিনিও নেদারল্যান্ডসকে জেতাতে পারেননি বিশ্বকাপ। সত্তর দশকে আয়াক্সকে টানা তিনবার ইউরোপসেরা বানানো এবং ক্লাবটিকে বিশ্বসেরাদের কাতারে তুলে আনার পাশাপাশি ফুটবলের কৌশলেও অবিস্মরণীয় অবদান ’৭৪ বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলা ক্রুইফের।

ছয়ে থাকা রোনালদো নাজারিও ব্রাজিলের হয়ে দুবার বিশ্বকাপ জিতলেও চ্যাম্পিয়নস লিগের পদক নেই তাঁর নামের পাশে। সপ্তম স্থানে থাকা জিনেদিন জিদান প্রান্সের হয়ে জিতেছেন বিশ্বকাপ। রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে জিতেছেন চ্যাম্পিয়ন্স লিগও।

আটে আছেন ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার। পশ্চিম জার্মানির জয়ে বিশ্বকাপ জিতেছেন তিনি। বায়ার্ন মিউনিখকেও এনে দিয়েছেন টানা তিনবার ইউরোসেরার মুকুট। তবে এসব সাফল্যের পাশাপাশি ফুটবলের রক্ষণভাগে ‘লিবেরো’ পজিশনে তাঁর বিপ্লব ঘটানোও সমান গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়।

আর্জেন্টিনা, কলম্বিয়া ও স্পেনের হয়ে খেলা আলফ্রেদো দি স্তেফানোর আন্তর্জাতিক শিরোপা বলতে শুধু ১৯৪৭ কোপা আমেরিকা জয়। রিয়ালের হয়ে জিতেছেন টানা পাঁচবার ইউরোপিয়ান কাপ।

দশে থাকা রোনালদিনিয়োর ক্যারিয়ারে শিরোপা অর্জনের চেয়েও মাঠে তার প্রভাব অসামান্য। তার চেয়ে বেশি শিরোপা বা ব্যক্তিগত সাফল্য আছে অনেকের কিন্তু মাঠে তার প্রভাব, দর্শকদের বিনোদেন দেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি অবিস্মরণীয়।

রোনালদিনিয়োর অর্জনের পাল্লাহ কম ভারি নয়। ব্রাজিলের হয়ে বিশ্বকাপ ও বার্সেলোনার হয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছেন তিনি। একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে জিতেছেন বিশ্বকাপ, কোপা আমেরিকা, কনফেডারেশনস কাপ, চ্যাম্পিয়নস লিগ, কোপা লিবার্তোদোরেস ও ব্যালন ডি’অর। মানে দেশের হয়ে বিশ্ব জয়ের মুকুটের পাশাপাশি মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা, আন্তমহাদেশীয় শিরোপা, ক্লাব ফুটবলে দুই মহাদেশের শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা এবং ব্যক্তিগত সেরার শিরোপা জিতেছেন গাউচো’।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews