গত শতাব্দীর ষাটের দশক থেকে চাঁদে যাওয়াসহ মহাকাশের নানা রকম পরীক্ষায় এগিয়ে যেতে যুক্তরাষ্ট্র ও তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে চলেছে প্রতিযোগিতা। উভয় দেশই একের পর এক ছোট-বড় মনুষ্যবিহীন মহাকাশ অভিযান পরিচালনা করেছে; পাঠানো হয়েছে অসংখ্য কৃত্রিম উপগ্রহ। এর মধ্যে কিছু যান মহাকাশে রয়ে গেলেও বেশির ভাগই ফেরত এসেছে। এখনও প্রতিনিয়ত বিভিন্ন দেশ থেকে মহাকাশযান ও কৃত্রিম উপগ্রহ যাচ্ছে। কিন্তু ফেরত আসা এসব মহাকাশযানের শেষ ঠিকানা কোথায়, তা হয়তো অনেকেই জানে না।
মহাকাশযান ও পরিত্যক্ত কৃত্রিম উপগ্রহের তেমনই একটি কবরস্থান প্রশান্ত মহাসাগরের অন্তত চার কিলোমিটার পানির নিচে, যা পয়েন্ট নিমো নামে বিখ্যাত। পৃথিবীর সবচেয়ে নির্জন এই স্থানটি দক্ষিণ আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যে অবস্থিত। কোনো দেশের অধিকার নেই এই জায়গার ওপর। আর তাই অন্যান্য মহাকাশযানেও কখনো ত্রুটি দেখা দিলে জনবসতি থেকে অনেক দূরে স্থানে সেগুলো ফেলে দেওয়ার জন্য বেছে নেন বিজ্ঞানীরা।
জুল ভার্নের লেখা ‘টুয়েন্টি থাউজেন্ড লিগস আন্ডার দ্য সি’ সাইন্স ফিকশনের সাবমেরিন ক্যাপ্টেনের নামে স্যাটেলাইট সমাধির নাম নিমো রাখা হয়েছে। সেই ক্যাপ্টেনের সাবমেরিনটিরও সলিল সমাধি হয়েছিল। পয়েন্ট নেমোতে যাওয়ার পর ভাঙা স্যাটেলাইটগুলো ভাঙা জাহাজের মতোই কাজ করে। সেগুলো মাছ বা জলজ প্রাণীদের আবাসস্থলে রুপান্তরিত হয়। এভাবে নতুন জীবন পেয়ে কার্যকর হয় অকার্যকর স্যাটেলাইট ও মহাকাশযানগুলো।
এখান থেকে পৃথিবীর অন্য এলাকায় পৌঁছতে কঠিন হলেও মহাকাশে পৌঁছানো সহজ। বিশেষজ্ঞদের দাবি, এটিই না কি মহাকাশ থেকে পৃথিবীর সবচেয়ে কাছের জায়গা। পয়েন্ট নিমোর সবচেয়ে নিকটতম দ্বীপ হচ্ছে ডুসি। এটির অবস্থান পয়েন্ট নিমো থেকে প্রায় ২৭০০ কিলোমিটার দূরে। সেক্ষেত্রে কেউ যদি এই স্থান থেকে উপরে হাঁটা শুরু করেন, ডুসি দ্বীপের আগে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে পৌঁছে যাবেন তিনি।
মূলত এভাবেই পৃথিবীর থেকে মহাকাশের সবচেয়ে কাছের স্থান হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছে পয়েন্ট নিমো। ১৯৯২ সালে হোর্ভজ লুকাটেলা নামে এক জরিপ প্রকৌশলী এই দ্বীপ আবিষ্কার করেন। পরে জুলস ভার্নের কাল্পনিক চরিত্র ক্যাপ্টেন নিমোর নামের সঙ্গে মিল রেখে এই স্থানের নামকরণ করা হয় পয়েন্ট নিমো। প্রশান্ত মহাসাগরের বিচ্ছিন্ন এই স্থানটি পৃথিবীর সবচেয়ে দুর্গম এলাকা হিসেবেও পরিচিত।
১৯৭১ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত পয়েন্ট নিমোর আশপাশে প্রায় ২৬০টিরও বেশি মহাকাশযান ধ্বংসাবশেষ সমাহিত করা হয়েছে। এজন্য এই এলাকাকে মহাকাশযানের কবরস্থানও বলা হয়। ভয়ংকর নির্জন এই দ্বীপে এতটাই নীরবতা রয়েছে যে পাথর ভাঙার শব্দও আত্মাকে শিহরিত করে দেয়। পৃথিবীর নির্জন এই দ্বীপ নিয়ে তাই মানুষের কৌতূহলের কোনো শেষ নেই।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ