বিখ্যাত ব্রিটিশ শিল্পী এলটন জন, ডুয়া লিপা, স্যার ইয়ান ম্যাককেলেন ও ফ্লোরেন্স ওয়েলচসহ ৪০০-এর বেশি সংগীতশিল্পী, লেখক ও শিল্পী প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমারের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়ে কপিরাইট আইন আপডেটের দাবি জানিয়েছেন, যাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) তাদের কাজের অপব্যবহার করতে না পারে।
চিঠিতে তারা লিখেছেন, সরকার সুরক্ষা না দিলে তাদের শিল্পকর্ম প্রযুক্তি সংস্থাগুলোর হাতে তুলে দেওয়া হবে। একইসঙ্গে হুমকির মুখে পড়বে যুক্তরাজ্যের সৃজনশীল ক্ষমতার নেতৃত্ব।
তারা চায়, প্রধানমন্ত্রী ‘Data (Use and Access) Bill’-এ একটি সংশোধনী সমর্থন করবে, যা AI ডেভেলপারদের বাধ্য করবে কপিরাইট মালিকদের জানাতে যে তাদের কাজ AI মডেল প্রশিক্ষণে ব্যবহৃত হচ্ছে কি না।
সরকারি এক মুখপাত্র বলেছেন, আমরা চাই আমাদের সৃজনশীল খাত ও AI খাত একসঙ্গে বিকশিত হোক, সে জন্যই আমরা এমন একটি পদক্ষেপ নিয়ে পরামর্শ করছি যা উভয় পক্ষের জন্য কাজ করবে।
চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন লেখক কাজুও ইশিগুরো, নাট্যকার ডেভিড হেয়ার, গায়িকা কেট বুশ ও রব্বি উইলিয়ামস, ব্যান্ড কোল্ডপ্লে, নাট্যকার টম স্টপার্ড এবং চলচ্চিত্র নির্মাতা রিচার্ড কার্টিস। এতে বিটলসের স্যার পল ম্যাককার্টনিও আছেন, যিনি জানুয়ারিতে বলেছিলেন, তিনি চিন্তিত AI যেন শিল্পীদের নকল না করে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, আমরাই সম্পদ সৃষ্টিকারী, জাতীয় কাহিনী প্রচার ও প্রতিফলনকারী, আমরা ভবিষ্যতের উদ্ভাবক এবং AI-এর আমাদের প্রয়োজন, যেমনটা তার শক্তি ও কম্পিউটার দক্ষতার প্রয়োজন।
তারা উল্লেখ করেন, ব্যারোনেস বিবান কিডরন প্রস্তাবিত সংশোধনী সরকার সমর্থন করলে, সৃষ্টিশীল ব্যক্তি ও AI ডেভেলপারদের মধ্যে লাইসেন্সিং ব্যবস্থার সুযোগ তৈরি হবে, যার মাধ্যমে ভবিষ্যতেও মানুষের সৃষ্ট কনটেন্ট সংরক্ষিত থাকবে।
তবে সব পক্ষ এই অবস্থানকে সমর্থন করছে না। ব্রিটিশ থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ‘Centre for British Progress’-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়া উইলেমিনস বলছেন, এই পদক্ষেপ UK-এর প্রবৃদ্ধির পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে।
তিনি বিবিসিকে বলেন, এটি বিদেশি কোম্পানিগুলোকে আমাদের কনটেন্ট ব্যবহারে বাধা দেবে না, বরং কঠোর কপিরাইট নীতির ফলে AI উন্নয়ন বিদেশে চলে যাবে, উদ্ভাবন থেমে যাবে এবং দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
সম্প্রতি অনেক শিল্পী AI-এর ডেটা প্রশিক্ষণে তাদের অনুমতি ছাড়া ব্যবহৃত কনটেন্ট নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন। ফেব্রুয়ারিতে, অ্যানি লেনক্স ও ডেমন অ্যালবানের মতো শিল্পীরা নিরবতা নিয়ে একটি অ্যালবাম প্রকাশ করেন কপিরাইট আইনের প্রস্তাবিত পরিবর্তনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে।
সরকার AI ডেভেলপারদের “অপ্ট-আউট” ভিত্তিতে ইন্টারনেট থেকে সৃষ্টিশীল কনটেন্ট ব্যবহারের প্রস্তাব নিয়ে পরামর্শ চালাচ্ছে। দ্য গার্ডিয়ান-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, সরকারের পক্ষ থেকে এই প্রস্তাব পুনর্বিবেচনার কথা বলা হয়েছে।
কাজুও ইশিগুরো পূর্ববর্তী এক বিবৃতিতে বলেন, এটা কতটা ন্যায্য ও যুক্তিসঙ্গত, যে আমরা যুগযুগ ধরে চলে আসা কপিরাইট আইন পাল্টে দিচ্ছি স্রেফ বৃহৎ কর্পোরেশনগুলোর স্বার্থে?
তিনি আরও বলেন, সরকারের আগের অপ্ট-আউট ধারণা কার্যকর নয় বলেই প্রতীয়মান হয়েছে এবং এখন হয়তো নতুন একটি পরামর্শ পর্ব আসছে তবে সেটি কতটা অর্থবহ হবে তা এখনো স্পষ্ট নয়।
সম্প্রতি, সংসদে ব্যারোনেস কিডরনের আরেকটি সংশোধনী বাতিল হয়েছে, যেখানে AI ডেভেলপারদের ব্রিটিশ কপিরাইট আইনের আওতায় আনার চেষ্টা ছিল।
তবে তার মতে, নতুন সংশোধনীতে যে স্বচ্ছতার কথা বলা হয়েছে, তা সৃষ্টিশীল ব্যক্তি ও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে লাইসেন্সিং চুক্তির পথ উন্মুক্ত করতে পারে।
তিনি বলেন, যুক্তরাজ্য একটি বৈশ্বিক AI সরবরাহ শৃঙ্খলে নেতৃত্ব দিতে পারে। তবে সে সম্ভাবনা বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা অপরিহার্য, যা আমার প্রস্তাবিত সংশোধনীর মাধ্যমে নিশ্চিত করা সম্ভব।
সরকার জানিয়েছে, “আমরা পরামর্শের প্রতিক্রিয়াগুলোর ওপর কাজ করছি এবং পরবর্তী ধাপ বিবেচনার আগে অর্থনৈতিক প্রভাবসহ একটি পূর্ণাঙ্গ মূল্যায়ন প্রতিবেদন প্রকাশ করব।”
সূত্র: বিবিসি