ঢাকায় এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (এসিসি) বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) উপস্থিত থাকবে না ভারত। স্পষ্টভাবেই এই বার্তা দিয়েছিল ভারতীয় ক্রিকেট সংস্থা বিসিসিআই। রাজনৈতিক নানা কারণে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তারা। তবে সেই অবস্থান থেকে সরে এসে অনলাইনে এজিএমে যুক্ত হয়েছে ভারত। তাতে আসন্ন এশিয়া কাপ আয়োজনে আশাবাদ প্রকাশ করেছে এসিসি। গতকাল ঢাকায় সংস্থাটির বার্ষিক সাধারণ সভা সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এই প্রথম এসিসির বড় পর্যায়ের কোনো সভার আয়োজক হলো বাংলাদেশ। সভার আগের রাতে ছিল আমন্ত্রিত অতিথিদের জন্য ডিনার ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন। বাংলাদেশের সংস্কৃতি সেখানে ফুটিয়ে তোলা হয় নানা প্রদর্শনীতে। আমন্ত্রিত অতিথিদের সঙ্গে ছিলেন বাংলাদেশ দল ও সফরে আসা পাকিস্তান ক্রিকেট দলও।
সভা শেষে এসিসি সভাপতি মহসিন নাকভি স্পষ্টভাবেই জানিয়েছেন বিষয়টি। তার বিশ্বাস, সমস্যাগুলো দ্রæতই সমাধান হবে এবং প্রতীক্ষিত এশিয়া কাপ অনুষ্ঠিত হবে, ‘আমরা এখন বিসিসিআইয়ের সঙ্গে সমন্বয়ে আছি। আশা করি খুব শিগগিরই ঝুলে থাকা বিষয়গুলো সমাধান হয়ে যাবে এবং আমরা এশিয়া কাপ আয়োজন করতে পারব।’ সভায় আরও একবার জোর দিয়ে বলা হয় এসিসির অভ্যন্তরে কোনো রাজনীতি নয়, বরং সদস্য দেশগুলো কেবল ক্রিকেটের জন্য একযোগে কাজ করবে। নাকভির ভাষায়, ‘আমরা সবাই একমত হয়েছি যে, আমরা ক্রিকেটের জন্য কাজ করব। আমাদের কেউই চায় না রাজনৈতিক প্রভাব আমাদের সংগঠনে আসুক। এটি একটি অত্যন্ত ইতিবাচক পরিবেশে অনুষ্ঠিত একটি সফল সভা ছিল।’
এজিএমে এসিসির ২৫টি সদস্য দেশই অংশ নেয়, যার মধ্যে অনেকে জুমের মাধ্যমে যুক্ত হন বলে জানান নাকভি, ‘আমাদের বার্ষিক সাধারণ সভা খুব ভালোভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের ২৫ জন সদস্য রয়েছেন এবং সব ২৫ জনই সভায় অংশ নিয়েছেন। আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই সকল সদস্যদের যারা সরাসরি উপস্থিত ছিলেন এবং যারা জুমের মাধ্যমে সভায় যুক্ত হয়েছেন।’ তিনি বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুলের আতিথেয়তার প্রশংসা করে বলেন, ‘বিশেষ ধন্যবাদ জানাতে চাই আমিনুল ভাইকে এবং বিসিবিকে, তাদের আতিথেয়তার জন্য। যেভাবে তারা আমাদের দেখভাল করেছেন, তা অভ‚তপূর্ব। এই দুই দিন ছিল দারুণ স্মরণীয়। এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের পক্ষ থেকে আমি কৃতজ্ঞতা জানাই এমন অসাধারণ আয়োজনের জন্য।’
সভা শেষে বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ‘বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পক্ষ থেকে আমি এসিসি ও এর চেয়ারম্যান মহসিন নাকভিকে ধন্যবাদ জানাই। আমরা গর্বের সাথে বলতে পারি, সভাটি অত্যন্ত সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। সকল সদস্য খুবই সহযোগিতাপূর্ণ ছিলেন, কারণ আমরা সবাই ক্রিকেটের উন্নয়নের জন্য কাজ করছি।’ এবারের এজিএমের মূল কৌত‚হল ছিল অবশ্য এশিয়া কাপ ঘিরে। নাকভি অনুরোধ করলেন অপেক্ষা করতে। বললেন, খুব শিগগিরই এশিয়া কাপ সংক্রান্ত আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসবে, ‘এটা ঘোষণা করা হবে দ্রæতই। আমরা আলোচনা করছি বিসিসিআইয়ের সঙ্গে। আশা করি, দ্রæত সমাধান করতে পারব।’ এশিয়া কাপ নিয়ে প্রশ্ন ঘুরেফিরে আসতেই থাকে। তবে নাকভির কথা বদলায় না, ‘এসিসি ও বিসসিআইয়ের বিষয় এটা। আমি আশা করি জমে থাকা বিষয়গুলো সমাধান করতে পারব এবং আশা করি এশিয়া কাপও হবে। ঘোষণার জন্য অপেক্ষা করুন।’
৮ দেশ নিয়ে আমিরাতে এশিয়া কাপ হওয়ার কথা আগামী ১০ থেকে ২৮ সেপ্টেম্বরের মধ্যে। তবে এই সময় কিছুটা এদিক-সেদিকও হতে পারে। শুরুটা আবুধাবিতে হয়ে পরের দিকের ম্যাচগুলো হতে পারে দুবাইয়ে। সভার একটি সূত্র ক্রিকেট বিষয়ক ওয়েবসাইট ক্রিকবাজকে জানিয়েছে, কমার্শিয়াল পার্টনারদের সঙ্গে কিছু বিষয়ের সমাধান করছে বিসিসিআই। কয়েকদিনের মধ্যে তাদেরই এশিয়া কাপের ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়ার কথা। তিনি জানান, এশিয়া কাপের ব্যাপারে চ‚ড়ান্ত কিছু যেমন হয়নি, এশিয়া কাপ হবে না- এমন কিছুও আলোচনা হয়নি। তবে টুর্নামেন্ট নিয়ে ইতিবাচক মনোভাবই ছিল সবার। সভায় এসিসির সহ-সভাপতি নির্বাচনের কথা থাকলেও সেটি শেষ পর্যন্ত হয়নি।
এসিসি জানিয়েছে, ২০২৬ সালে জাপানে অনুষ্ঠেয় এশিয়ান গেমসে র্যাঙ্কিংয়ের ভিত্তিতে ১০টি পুরুষ দল ও ৮টি নারী দল অংশ নেবে। এ ছাড়া তিনটি নতুন সদস্য দেশের অন্তর্ভ‚ক্তির কথাও জানিয়েছে এসিসি। দেশ তিনটি হচ্ছে মঙ্গোলিয়া, উজবেকিস্তান ও ফিলিপাইন।