ব্যাংক খাত সংস্কারে আশু করণীয়

দেশের ব্যাংক খাতে বিরাজমান পরিস্থিতি লইয়া বৃহস্পতিবার রাজধানীতে অনুষ্ঠিত এক সংলাপে বক্তাগণ যে উদ্বেগ প্রকাশ করিয়াছেন, উহা খাতটির নীতিনির্ধারকদের দ্রুত বিবেচনায় লওয়া উচিত বলিয়া আমরা মনে করি। শুক্রবার সমকালের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গবেষণা সংস্থা সেন্টার পর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডি আয়োজিত উক্ত সংলাপে বক্তারা বলেন, ব্যাংকগুলিতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাইয়াছে। উপরন্তু রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংক, তৎসহিত বেসরকারি ব্যাংকেও খেলাপি দ্রুত বৃদ্ধি পাইতেছে। এই সকল ব্যাংকে ব্যয়ের অনুপাতে আয় হ্রাস পাইতেছে। তারল্য পরিস্থিতির অবনতি হইয়াছে। প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতার কারণে ব্যাংকের পরিচালক নিয়োগ, ঋণ অনুমোদন, পুনঃতপশিল, অবলোপন ও মূলধন রাখার ক্ষেত্রে হেরফের হইতেছে। অপরদিকে, ব্যাংক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের দুর্বলতার সুযোগে, এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে ইহার অনাকাঙ্ক্ষিত সহযোগিতার কারণে ব্যাংকগুলিতে এক প্রকার গোষ্ঠীশাসন প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে। সামগ্রিক পরিস্থিতির কারণে ব্যাংক খাতের প্রতি মানুষের আস্থা ক্রমশ হ্রাস পাইতেছে, যাহা অত্যন্ত বিপজ্জনক। বর্তমানে আমানতে উচ্চ সুদ সত্ত্বেও বহু ব্যাংক প্রত্যাশিত আমানত পাইতেছে না। মানুষের মধ্যে গৃহে টাকা রাখিবার প্রবণতা ক্রমবর্ধমান। 

আমরা জানি, দেশের অর্থনীতি মূলত ব্যাংকনির্ভর। অতএব এই খাতে জনআস্থা ফিরাইতে না পারিলে অর্থনীতিতে বিপর্যয় নামিয়া আসিতে পারে। ব্যাংক খাতের এই দুর্দশা এমন সময়ে চলিতেছে যখন একটা বিশেষ গোষ্ঠীর সুবিধার্থে দীর্ঘদিন কৃত্রিম উপায়ে বিদেশি মুদ্রার বিপরীতে টাকার মান ধরিয়া রাখার কারণে স্থানীয় বাজারে মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে মার্কিন ডলারের মূল্য ৩৫-৪০ টাকা বৃদ্ধি পাইয়াছে। তৎসহিত ডলার সংকটে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে পতনের ধারা অব্যাহত। প্রায় একই কারণে রাজস্ব খাতে প্রয়োজনীয় সংস্কার না হওয়ায় রাজস্ব আহরণও প্রত্যাশা অপেক্ষা নিম্নে। এমতাবস্থায় মূল্যস্ফীতির লাগাম টানিতে গিয়া মানুষের উপর অধিকতর চাপ পড়িতেছে। জনজীবনে এক প্রকার ত্রাহি রব উঠিয়াছে বলিলেও ভুল হয় না। বলা যায়, ব্যাংক খাতের দুর্দশা হ্রাসে আশু পদক্ষেপ গৃহীত না হইলে জাতীয় অর্থনীতিই ভাঙিয়া পড়িতে পারে, যাহার রাজনৈতিক পরিণামও কাহারও জন্য সুখকর হইবে না।

তবে দুর্ভাগ্য, আমাদের অর্থনীতির নীতিনির্ধারকগণ সমস্যার গভীরতা একভাবে স্বীকার করিলেও অদ্যাবধি কার্যকর সমাধানের পথে হাঁটিতেছেন না। যে কারণে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল-আইএমএফের ঋণের শর্ত পূরণের প্রয়াস হিসাবে কিছু বিক্ষিপ্ত পদক্ষেপ দৃশ্যমান হইলেও প্রকৃত জায়গায় হাত পড়িতেছে না। যেমন বহুল প্রত্যাশিত রাজস্ব খাত সংস্কারের উল্লেখযোগ্য কোনো পদক্ষেপ পরিলক্ষিত হইতেছে না; মূল্যস্ফীতির অন্যতম কারণ সিন্ডিকেটবাজি ও মজুতদারি নিয়ন্ত্রণেও দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নাই। ব্যাংক খাতের সমস্যা চিহ্নিত করিয়া একটা অস্থায়ী ব্যাংকিং কমিশন গঠনের দীর্ঘদিনের প্রস্তাবও অবহেলিত। অন্তত রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক প্রভাবের বাহিরে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে স্বাধীনভাবে কাজ করিবার সুযোগ দিলেও পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি হইতে পারে। আমাদের বিশ্বাস, সরকার অবিলম্বে এই লক্ষ্যে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করিবে।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews