কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক সংঘটিত গণহত্যার দায় এড়াতে এবং শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে অবৈধ এই সরকার ছাত্রশিবিরকে জড়িয়ে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে।

ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম ও সেক্রেটারি জেনারেল জাহিদুল ইসলাম এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলন দমন করতে সরকার কর্তৃক ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর গণহত্যা চালিয়ে তা ধামাচাপা দেয়ার জন্য ছাত্রশিবিরসহ বিরোধী দলের ওপর যে ধ্বংসযজ্ঞের অভিযোগ দিচ্ছে, তা আওয়ামী প্রোপাগান্ডা ছাড়া আর কিছুই নয়। তাদের মিথ্যা গালগল্পের প্রথাগত চরিত্র জনগণের সামনে পরিষ্কার। মূলত আওয়ামী লীগ প্রধান ও তার দলের সিনিয়র নেতাদের উস্কানি এবং প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে খুনের হুকুমে এই গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে। দেশের অরাজক পরিস্থিতির দায়ভার বিরোধী দলের ওপর চাপিয়ে দিয়ে এ গণহত্যার দায় এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। মিথ্যা দিয়ে সত্যকে চাপা দেয়া যায় না।’

নেতারা চলমান ঘটনাপ্রবাহ উল্লেখ করে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবিদাওয়াকে শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমাধানের পরিবর্তে গণহত্যায় অভ্যস্ত আওয়ামী সরকার বলপ্রয়োগ, হত্যা ও নির্যাতনের পথ বেছে নেয়। অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবিদাওয়াকে অগ্রাহ্য করে মেধাবী শিক্ষার্থীদের নিয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্য ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেন। তার এই বক্তব্য প্রত্যাহার চেয়ে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ‘ক্যাম্পাসে আন্দোলনকারীদের জবাব দিতে ছাত্রলীগ প্রস্তুত’ বলে ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের নিরীহ ছাত্রদের ওপর লেলিয়ে দেয়। ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ ও ভাড়াটিয়া গুন্ডাদের তাণ্ডবে মেধাবীদের খুন প্রবাহিত হয়।’

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দেয়ার পরিবর্তে ছাত্রলীগ নামধারী সন্ত্রাসীদের অবাধে হামলা চালানোর সুযোগ করে দেয়। শুধু তাই নয়, রংপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক বুক পেতে দাঁড়ানো আবু সাঈদকে কাছ থেকে গুলি করে হত্যা করে পুলিশ। সেদিন ছাত্রলীগ ও পুলিশের হামলায় ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রংপুরে কমপক্ষে ছয় জন শিক্ষার্থী নির্মমভাবে শহীদ হন। পরদিন নিহতদের স্মরণে শিক্ষার্থীদের গায়েবানা জানাযার মতো শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ও ছাত্রলীগ-যুবলীগ মিলে নৃশংস হামলা চালায়। এর প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা দেশব্যাপী সর্বাত্মক ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি দিলে শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনে পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর সরাসরি গুলি চালায়। এক্ষেত্রেও ডামি সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আওয়ামী গুন্ডাদের উদ্দেশ্য করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে প্রতিরোধ গড়ে তুলুন। এটা জনগণের ওপর গণহত্যা চালানোর সুস্পষ্ট নির্দেশ।’

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দেয়ার পরিবর্তে তাদের বুকে গুলি চালালে তাদের সহপাঠী ও অভিভাবকসহ সর্বস্তরের জনগণ রাস্তায় নেমে আসেন। তখন আপামর জনতার ওপর ইতিহাসের নির্মম গণহত্যা চালায় রক্তপিপাসু এই অবৈধ সরকার। অসংখ্য মানুষকে গুলি করে হত্যা করার পর মাটিতে পড়ে থাকা লাশের মাথার ওপর গাড়ি তুলে দিয়ে চাপা দেয়া, হত্যা করে সাঁজোয়া যানের ওপর তুলে লাশ গুমের চেষ্টায় লিপ্ত হওয়া, হেলিকপ্টার ও বাসা-বাড়ির ছাদ থেকে গুলি চালিয়ে আন্দোলনকারীদের হত্যা করাসহ এমন কোনো বর্বরতা নেই, যাতে এই হায়েনারা লিপ্ত হয়নি। শিশু থেকে বৃদ্ধ কেউ রেহাই পায়নি আওয়ামী জাহেলিয়াত থেকে। তাদের নির্মম হত্যালিলায় এখন পর্যন্ত ২০৪ (প্রথম আলো) নিহতের খবর প্রকাশ হয়েছে। কিন্তু আমরা মনে করি, প্রকৃত সংখ্যা এর কয়েকগুণ বেশি। এছাড়াও হাজার হাজার মানুষ আহত ও পঙ্গুত্ববরণ করেন। আহত অনেকে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন।

অন্যদিকে, এই গণহত্যার ঘটনা দেশবাসীসহ বিশ্ববাসীর নজর এড়াতে পরিকল্পিতভাবে ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে এবং মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে সকল হত্যাকাণ্ডকে গোপন করার অপচেষ্টা করে স্বৈরাচার সরকার।’

নেতারা বলেন, ‘একদিকে শত শত সন্তানহারা মায়ের আহাজারি এবং স্বজনহারা মানুষের আর্তনাদে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে, অপরদিকে পাষাণ্ড হাসিনা ও তার সেবাদাসরা লাশের সাথে উপহাস করছে। তথ্য প্রতিমন্ত্রীর পদধারী তথ্য সন্ত্রাসী মুহাম্মাদ এ আরাফাত বলেছে, ‘ছাত্ররা নাকি নেশাগ্রস্ত হয়ে আন্দোলনে নেমেছিল।’ ছাত্রসমাজের সাথে এ কেমন উপহাস! মানবিকতার সাথে এ কেমন পাশবিকতা!

এ দিকে রক্তপিপাসু সরকার তার চালানো গণহত্যাকে বৈধ করতে দেশব্যাপী বিশৃঙ্খলার দায় বরাবরের মতো শিবিরসহ বিরোধী দলের ওপর চাপানোর অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। গত ২২ জুলাই ব্যবসায়ীদের সাথে বৈঠকে শেখ হাসিনা অভিযোগ করে বলেন, ‘ছাত্রদের আন্দোলনের ওপর ভর করে বিরোধী দলসমূহ ও শিবির জ্বালাও পোড়াও করেছে’। আমরা তার এই চিরাচরিত হাস্যকর বক্তব্যের নিন্দা জানাচ্ছি। জ্বালাও পোড়াও কারা করে, এর বেনিফিশিয়ারি কারা, সেটা দেশের সকল মানুষই জানেন। প্রথম আলোর রিপোর্ট (২৫ জুলাই), ‘চট্টগ্রামে বাসে আগুন দিতে ৪ লাখ টাকায় চুক্তি, শ্রমিক লীগ নেতা গ্রেপ্তার’-এ ঘটনাই প্রমাণ করে সারাদেশে নৈরাজ্য কারা করেছে। বিভিন্ন পত্রিকার রিপোর্ট অনুযায়ী জনমনে এটা স্পষ্ট যে, আন্দোলনকারীদের ভেতরে ঢুকে আওয়ামী গুন্ডারাই জ্বালাও পোড়াও করেছে। আমরা মনে করি, শিক্ষার্থীদের নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে সরকার পরিকল্পিতভাবে নৈরাজ্য ঘটিয়ে বিরোধীদের ওপর এর দায় চাপানোর অপচেষ্টা করছে। তাদের এই মিথ্যা প্রোপাগান্ডা দেশবাসী বিশ্বাস করে না।’

আমরা আরো লক্ষ্য করছি, ‘সরকারি প্রোপাগান্ডার সাথে সুর মিলিয়ে প্রশাসনের কতিপয় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা শিবিরের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে ও হুমকি দিচ্ছে; যা কোনো পেশাদার রাষ্ট্রীয় বাহিনীর বৈশিষ্ট্য হতে পারে না। ইতোমধ্যে মিথ্যা মামলা দিয়ে হাজার হাজার নেতাকর্মী ও সাধারণ জনতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হয়ে জনগণকে নিরাপত্তা দেয়ার পরিবর্তে প্রশাসনের এ অপেশাদার লোকেরা দেশের মধ্যে ভয়ের রাজত্ব কায়েম করেছে।’

আমরা সুস্পষ্ট ভাষায় বলে দিতে চাই, ‘সারাদেশে ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর যে দায় শিবিরের ওপর চাপানোর চেষ্টা করা হচ্ছে, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও বানোয়াট। শিবির নিয়মতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে বিশ্বাসী একটি আদর্শিক সংগঠন। ধ্বংসাত্মক কোনো কর্মকাণ্ডের সাথে ছাত্রশিবিরের দূরতম কোনো সম্পর্কও নেই। এসব ঘটনার সাথে যারা জড়িত, বিশ্বাসযোগ্য তদন্তের মাধ্যমে তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানাচ্ছি।’

নেতারা আরো বলেন, ‘২০১৩ সালে আল্লামা সাঈদী (রহ.)-এর রায়কে কেন্দ্র করে চালানো গণহত্যা, ৫ মে শাপলা চত্বরে আলেম-ওলামাদের ওপর সংঘটিত গণহত্যাসহ বিরোধী দল-মতের ওপর অসংখ্য হত্যাযজ্ঞ চালানোর যে আওয়ামী বর্বরতা, এর চূড়ান্ত পৈশাচিক রূপ প্রকাশিত হয়েছে কোমলমতি শিক্ষার্থী ও প্রতিবাদী জনতার ওপর চালানো গণহত্যার মধ্য দিয়ে। আর এসব গণহত্যার জন্য প্রশাসন ও দলীয় ক্যাডার বাহিনীকে ব্যবহার করা হচ্ছে।’

নেতারা হত্যাকারীদের শাস্তির দাবি করেন এবং শহীদদের জন্য জান্নাতের সর্বোচ্চ মর্যাদা কামনা করেন। আর গণহত্যার দায় নিয়ে অনতিবিলম্বে এই অবৈধ সরকারকে জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানান। অন্যথায় ছাত্রসমাজ ও গণতন্ত্রকামী জনগণ অধিকার আদায়ে ঐক্যবদ্ধভাবে গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।

প্রেস বিজ্ঞপ্তি



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews