চলমান প্রকল্প বাস্তবায়নসহ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের উন্নয়নে অন্তর্বর্তী সরকারকে ১০০ দিনের বিশেষ কর্মপরিকল্পনা নওয়ার আহ্বান জানিয়েছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। তারা বলছে, গত সরকারের সময় বিদ্যুৎ খাতে নানা অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে। তবে বেশকিছু ভালো প্রকল্প চলমান রয়েছে। যেগুলো বাস্তবায়ন হওয়া জরুরি। তাই অন্তর্বর্তী সরকারকে ওই প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে করতে হবে। একই সঙ্গে দ্রুত বিদ্যুৎ ক্রয়ের বিশেষ আইন বাতিল করার পাশাপাশি বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে জবাবদিহিতা বাড়াতে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে (বিইআরসি) স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে।

রোববার রাজধানীর ধানমন্ডিতে সিপিডির নিজস্ব কার্যালয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সংস্কার চেয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এ আহ্বান জানান। সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। সিপিডি বলছেন, চলতি বছরে বাজেটে ৪০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে। এই বরাদ্দের বড় অংশ ব্যয়ের পরিকল্পনা ছিল ভর্তুকিতে। আর ভর্তুকিতে টাকা সংগ্রহ করা হতো বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির মাধ্যমে। এমন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে গ্রাহক পর্যায়ের মানুষ ভোগান্তিতে পড়ে। ফলে এমন পরিকল্পনার বিরোধিতা করেছে সিপিডি। এই গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি মনে করে, নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন ছাড়াই বর্তমান উৎপাদন দিয়ে ২০৩০ সাল পর্যন্ত দেশের বিদ্যুৎ চাহিদা পূরন সম্ভব। সেজন্য আইন সংশোধন এবং প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের জোর দিতে হবে। এছাড়াও আন্তর্জাতিক ফার্ম দিয়ে দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোর রির্পোট পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে। একই সঙ্গে গ্রাহকদের ভোগান্তি কমাতে প্রিপেইড মিটার পর্যালোচনা করার তাগিদ দেন।

ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বে পরিবর্তন আনতে হবে। টেকসই জ্বালানি রূপান্তরে জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহারে জোর দিতে হবে।

তিনি বলেন, ২০৪১ সালে বিদ্যুতের চাহিদা হতে পারে ২৭ হাজার মেগাওয়াট। এতে রিজার্ভ মার্জিনসহ ৩৫ হাজার মেগাওয়াট হতে পারে। কিন্তু বিদ্যুৎ খাতের মহাপরিকল্পনায় লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫৮ হাজার মেগাওয়াট, যা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। তাই এটার সংশোধন করা দরকার।

তিনি জানান, দেশের সার্বিক অর্থনীতির যে পরিস্থিতি, তার জন্য দায়ি দুর্নীতি। আগের ক্ষমতাসীনদের বিভিন্ন নীতির কারণে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতকে দায়ী করা যায়। এসব নীতি তৈরিই করা হয়েছে একটা গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে। ফলে এই সকল নীতি ও আইন সংস্কার দরকার। এজন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে প্রথমে দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বড় ধরনের সংস্কারে মনোনিবেশ করতে হবে। বৈষম্য দূরীকরণ এবং ক্রয়-প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে। সংস্কারের অংশ হিসাবে এই সরকারকে প্রথমে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ বিশেষ আইন ২০১০ বাতিল করতে হবে। যেসব কোম্পানি বিদ্যুৎ ক্রয়ের চুক্তির জন্য অযাচিতভাবে নির্বাচিত হয়েছে-তাদের লেটার অব ইনটেন্ট (এলওআই) বাতিল করতে হবে।

গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, উচ্চমূল্যে বিদ্যুৎ কিনার কারণে বিপিডিবিকে বছরে ৪৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি ক্ষতি সম্মুখীন হতে হচ্ছে। একই সঙ্গে বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদকদের সঙ্গে চুক্তির আওতায় ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধে প্রতিবছর ৩৭ হাজার ৯৩ কোটি টাকার বাড়তি বোঝা টানতে হচ্ছে। এমন অবস্থায় কিছু প্রতিষ্ঠান সংস্কার করা দরকার। এগুলো হচ্ছে-নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (স্রেডা), বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি), বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি), বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)।

তার মতে, বিইআরসির ক্ষমতা খর্ব করা হয়েছে ধীরে ধীরে। আইন সংশোধন করে কমিশনকে আগের জায়গায় ফিরিয়ে আনতে হবে। এটিকে যুগোপযোগী করে ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা দরকার। বিপিসি ও পিডিবি থেকে নিয়মিত তথ্য পাওয়া যায় না। তথ্য নিয়মিত ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে। বিপিসির স্বয়ংক্রিয় দাম নির্ধারণ প্রক্রিয়া ত্রুটিযুক্ত। এখানে মুনাফা দেখা হয়েছে। ভোক্তাস্বার্থ দেখা হয়নি। গত পাঁচ বছরে বিপিসি ও পিডিবির বার্ষিক প্রতিবেদন আন্তর্জাতিক সংস্থা দিয়ে পুনর্মূল্যায়ন করা জরুরি।

নবায়নযোগ্য জ্বালানির সংকট উত্তরণে স্রেডার সক্ষমতা বাড়াতে হবে দাবি করে ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, এই প্রতিষ্ঠানকে পিএম অথবা প্রধান উপদেষ্টা কার্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত করা উচিত। এছাড়া বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি), বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি), আরপিজিসিএলসহ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গত কয়েক বছরের আর্থিক প্রতিবেদন আবারও নিরীক্ষা করতে হবে।

সিপিডি বলছে, আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে পরিবর্তন আসতে পারে। কোনো আন্তর্জাতিক চাপে যেন আবার দেশি কয়লা উত্তোলনে জোর দেওয়া না হয়। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অংশীদারত্ব ও সহযোগিতা নতুন সমীকরণ তৈরি করতে পারে। তবে এটা যেন তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানিভিত্তিক না হয়। সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধানে তারা আসতে পারে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়নে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে সহযোগিতার নতুন দিগন্ত সূচনা হতে পারে। ভারতের সঙ্গে সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলো অনিশ্চয়তা তৈরি করতে পারে। রাশিয়ার সঙ্গে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চলমান থাকবে। চীনের সঙ্গে কাজের ক্ষেত্রে কোনো জটিলতা তৈরি হবে না। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এএফবির মতো বৈশ্বিক আর্থিক সংস্থার সঙ্গে ব্যাপক অংশীদারত্ব তৈরি হতে পারে।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews