রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারের সামরিক জান্তার সঙ্গে আলোচনাই যথেষ্ট নয়। আরাকান আর্মির সঙ্গেও আলোচনা করতে হবে। কেননা রোহিঙ্গাদের বসতবাড়ি রাখাইন রাজ্যে অবস্থিত। ওই রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ এখন আরাকান আর্মির হাতে। তাই তাদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়া রোহিঙ্গাদের বাস্তবে ফেরত পাঠানো সম্ভব নয়।

প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গাবিষয়ক উচ্চ প্রতিনিধি খলিলুর রহমান ব্যাংককে মিয়ানমারের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী উ থান শিউয়ের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান যে, রোহিঙ্গাদের পরিচয় তারা যাচাই করছেন। এখন পর্যন্ত এক লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা মিয়ানমারের নাগরিক বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

জানতে চাইলে মিয়ানমারে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত সুফিউর রহমান শনিবার যুগান্তরকে বলেন, ‘মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের পরিচয় যাচাইয়ের যে তালিকা প্রকাশ করেছে সেটা অবশ্যই ইতিবাচক। তবে এটা বাস্তবায়ন করতে হলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সম্পর্কে আরাকান আর্মির সদিচ্ছা কতটুকু সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে রাজি হলে এই যাচাই তালিকা বাস্তবায়নযোগ্য হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘মিয়ানমার সরকার যেগুলো যাচাই করেছে তাকে আরাকান আর্মি কীভাবে দেখবে সেটি খুবই জরুরি বিষয়। ফলে মিয়ানমার সরকারের রোহিঙ্গাদের পরিচয় যাচাইয়ের প্রায়োগিক দিক বিবেচ্য বিষয় হতে পারে। আরাকান আর্মির সঙ্গে এই ব্যাপারে আলাপ-আলোচনা করতে হবে। আরাকান আর্মির সঙ্গে আলোচনার ক্ষেত্রে মিয়ানমার সরকারের যাচাইকৃত তালিকা রেফারেন্স পয়েন্ট হিসাবে ব্যবহারযোগ্য হবে।’

সুফিউর রহমান বলেন, ‘আরাকান আর্মি এখন এক বাস্তবতা। আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্যে যেসব জায়গা দখল করে নিয়েছে; সেসব জায়গা মিয়ানমারের সামরিক সরকারের পুর্নদখল কঠিন হবে। ফলে আরাকান আর্মির সঙ্গে আলোচনা করে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোই চ্যালেঞ্জ হবে।’ তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের যাচাই তালিকা প্রকাশ করাটা থিওরিটিক্যালি ভালো। কারণ এটাকে ভবিষ্যতে রেফারেন্স হিসাবে ব্যবহার করা যাবে। কিন্তু প্র্যাকটিক্যালি এটা সমাধানে আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ সৃষ্টি করতে হবে। বাংলাদেশের এখনো তেমন যোগাযোগ হয়নি।’

জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআরের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের একটি ডাটাবেজ তৈরি করা হয়েছে। এই ডাটাবেজে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের সংখ্যা প্রায় আট লাখ। এই ডাটাবেজে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের কোন এলাকার বাসিন্দা ছিলেন তার উল্লেখ আছে। এই তালিকা বাংলাদেশ আগেই মিয়ানমারের কাছে হস্তান্তর করেছে। মিয়ানমার এই তালিকা যাচাই করে পর্যায়ক্রমে নিশ্চিত করছে। তবে নিশ্চিত করা মানেই ফেরত নেওয়া নয়।

মিয়ানমার ২০১৭ সালে রোহিঙ্গাদের ওপর নিষ্ঠুর নির্যাতন শুরু করলে সংখ্যালঘু এই মুসলমানদের বাংলাদেশ অভিমুখে ঢল নামে। বর্তমানে প্রায় ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা কক্সবাজারের উখিয়া, টেকনাফ এবং বঙ্গোপসাগরে ভাসানচর ক্যাম্পে আশ্রিত হিসাবে আছে। তবে আন্তর্জাতিক দাতারা সাহায্যের পরিমাণ কমিয়ে দেওয়ায় এত বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গার আশ্রয় দিতে গিয়ে বাংলাদেশ হিমশিম খাচ্ছে। রোহিঙ্গাদের সংকটের বিষয়টি সম্প্রতি জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসও বাংলাদেশ সফরের সময় অনুধাবন করেছেন। তিনি এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। বাংলাদেশ সেপ্টেম্বরে রোহিঙ্গাবিষয়ক একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজন করতে যাচ্ছে। সংকটটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সঙ্গে নিয়ে মোকাবিলার লক্ষ্যে এই সম্মেলনের আয়োজন বলে কর্মকর্তারা বলছেন।

মিয়ানমারের ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব চীনের। প্রধান উপদেষ্টা সম্প্রতি চীন সফরকালে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে চীনের সহায়তা চেয়েছেন। চীন অবশ্য ইস্যুটিকে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের দ্বিপক্ষীয় বলে মনে করে। ফলে তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সম্পৃক্ততার বিরোধী। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে এবারের আলোচনাতেও চীন একই কথা পুনর্ব্যক্ত করেছে।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews