ঢাকার বাড়িগুলোকে নয়া ঔপনিবেশিক স্থাপত্য বলে মনে করেন লেখক ও অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান। তিনি বলেছেন, ঢাকায় বাড়িগুলো সাড়ে ৯ ফুটের বেশি ফ্লোর করে না। এটা নয়া ঔপনিবেশিক স্থাপত্য। মানুষকে খোপের মধ্যে চেপে রাখা হয়েছে। ঢাকায় এমন কোনও পায়ে হাঁটা পথ নেই, যেখানে দোকান বসছে না। যেখানে হকাররা কিছু একটা না কিছু করছে। সব জায়গায় সিন্ডিকেট।
বুধবার (২০ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ (পিআইবি) মিলনায়তনে রিভার অ্যান্ড ডেলটা রিসার্চ সেন্টার ও জাস্ট আরবানের আয়োজনে দুই দিনব্যাপী ‘ন্যায্য নগর ইশতেহার’ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে ‘নাগরিক সুবিধার ন্যায়সংগত বণ্টন এবং স্থানীয় নেতৃত্বে স্বচ্ছতাভিত্তিক শহর গঠন’ শীর্ষক আলোচনায় প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন তিনি।
ঢাকার আবাসিক এলাকাগুলো বাণিজ্যিক এলাকায় পরিণত হয়েছে উল্লেখ করে সলিমুল্লাহ খান বলেন, ঢাকায় ধানমন্ডি বলে একটা আবাসিক এলাকা করা হয়েছিল। এখন আবাসিক কথাটা আর কেউ ব্যবহার করে না। শুধু ধানমন্ডি। এটা এখন বাণিজ্যিক এলাকা হয়েছে। আগে ছিল মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকা, দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকা। যেটা একটা নদী ছিল, সেটা কেটে লেক বানিয়েছে। দুর্নীতি এক জায়গায় হয়নি। সব জায়গায় হয়েছে।
সলিমুল্লাহ খান আরও বলেন, তারা গোটা এলাকায় (ধানমন্ডি আবাসিক এলাকা) একটা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জায়গা রাখেনি। সাড়ে তিন কাঠা, পাঁচ কাঠার প্লট। তিন কাঠার প্লট তিন হাজার টাকা, পাঁচ কাঠার প্লট পাঁচ হাজার টাকায় আমার বহু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এই বাড়িঘর পেয়েছে। কিন্তু সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বলেননি এখানে আমাদের বাচ্চাদের জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জায়গা থাকবে। একটা পাবলিক লাইব্রেরি থাকবে। এখন আবাসিক প্লট ভাড়া নিয়ে ধানমন্ডি এলাকায় নানা রকম স্কুল করা হচ্ছে।
অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান বলেন, ১৯৭১ সালে ঢাকার জনসংখ্যা ছিল ১০ লাখ। এখন বলা হচ্ছে দুই কোটি বা আড়াই কোটি। ২০ থেকে ২৫ গুণ জনসংখ্যা বেড়েছে। একটি ক্ষুদ্র ভৌগোলিক এলাকায় এই যে বিপুল জনসমাগম, এটি এখন বড় আকারের জেলখানার মতো হয়েছে।
অনুষ্ঠানে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, বাংলাদেশে আমরা যখন রাজনীতির দিকে তাকাই, সর্বব্যাপী লুণ্ঠনমূলক রাজনৈতিক ব্যবস্থা কায়েম থাকে। তখন নগরের চেহারা এমন হওয়ার কথা। সর্বব্যাপী লুণ্ঠনের ব্যবস্থা বহাল রেখে এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটানো বেশ কঠিন। পথ তৈরি করা সম্ভব যেমন ছাত্র-শ্রমিক-জনতার অভ্যুত্থান তৈরি করেছে, যদি আমরা রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ এই লুটেরাদের হাত থেকে জনগণের প্রতিনিধিত্ব যারা করবে তাদের হাতে দিতে পারি।
পিআইবির মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফের সঞ্চালনায় আলোচনায় আরও অংশ নেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ (স্বপন), গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়নের সহসভাপতি জলি তালুকদার, রিভার অ্যান্ড ডেলটা রিসার্চ সেন্টারের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র ওমামা ফাতেমা।