টেলিকম অপারেটর বাংলালিংকের স্বত্বাধিকারী কোম্পানি ভিওন গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কান তেরজিওলু জানিয়েছেন, বাংলালিংক বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার পরিকল্পনা করছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী তিন বছরের মধ্যে বাংলালিংকের শেয়ারবাজারে আসার ইচ্ছা রয়েছে। সম্প্রতি ঢাকা সফরকালে সমকালসহ কয়েকটি গণমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমন তথ্য দেন ভিওনের এই শীর্ষ নির্বাহী। আমস্টারডাম ভিত্তিক ভিওন গ্রুপ
বাংলালিংকের শতভাগ শেয়ারের মালিক। শেয়ারবাজারে কত শতাংশ শেয়ার ছাড়ার পরিকল্পনা রয়েছে এমন প্রশ্নের উত্তরে কান তেরজিওলু বলেন, এ ব্যাপারে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আলোচনা এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। বর্তমানে তাদের প্রধান লক্ষ্য, সারাদেশে তাদের গুণগত নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ এবং উদ্ভাবনী বিভিন্ন সেবা চালুর মাধ্যমে বাংলালিংককে দ্রুত লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা। এরপর তারা শেয়ারবাজারে আসার ব্যাপারে সক্রিয় হবেন।
ভিওন গ্রুপ বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৯টি দেশে ২১ কোটি গ্রাহককে সংযোগ এবং ডিজিটাল সেবা দিচ্ছে। এসব দেশে ভিওনের অপারেশনে নির্বাহী টিমের নেতৃত্ব দিচ্ছেন কান তেরজিওলু। ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে টেলিকম, প্রযুক্তি এবং ব্যবস্থাপনা পরামর্শ খাতে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পর্যায়ে নেতৃত্বস্থানীয় পর্যায়ে কাজ করেছেন তিনি। গত ২০ মার্চ তিনি চার দিনের সফরে ঢাকা আসেন।
গত ২৩ মার্চ ঢাকার গুলশানে বাংলালিংকের প্রধান কার্যালয়ে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি টেলিকম, পুঁজিবাজার, তথ্যপ্রযুক্তিসহ বিভিন্ন খাতের ওপর মতামত দেন। এর আগের দিন শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। একই দিনে বাংলালিংকের ডিজিটাল হেলথ প্ল্যাটফর্ম 'হেলথ হাব'-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
বাংলালিংকের কার্যক্রম প্রসঙ্গে কান তেরজিওলু বলেন, 'আমরা গত দু'বছরে কভিডের মধ্যেও বাংলাদেশে আমাদের বিনিয়োগ অব্যাহত রেখেছি। আমরা এখানে বিনিয়োগ বাড়াব। দেশের কিছু জায়গায় আমাদের অবকাঠামোর অপর্যাপ্ততা রয়েছে। এই ঘাটতি পূরণের মাধ্যমে আমরা 'ন্যাশনাল অপারেটর' হতে চাই। আমরা সারাদেশে সবার জন্য উচ্চ মানের ফোরজি সেবা দিতে চাই। আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার সবার জন্য ফোরজি। বাংলাদেশে এখনও সর্বত্র ইন্টারনেটের ব্যবহার নেই। আমরা সেই ঘাটতি পূরণে কাজ করতে চাই।' তিনি মনে করেন, টেলিকম খাতের প্রকৃত অগ্রাধিকার হওয়া উচিত, আগে সবার জন্য ফোরজি নিশ্চিত করা। কেননা এখনও ৫০ শতাংশের কম মানুষ স্মার্টফোন ব্যবহার করে। তিনি বলেন, 'আপনি ফোরজি, নাকি ফাইভজি' ব্যবহার করছেন, তা বড় বিষয় নয়। দিন শেষে আপনি দ্রুত গতির সহজলভ্য ইন্টারনেট পাচ্ছেন কিনা, সেটা বড় বিষয়'।
ভিওন গ্রুপের সিইও আরও বলেন, বাংলালিংক একটি স্বাধীন আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে চারবার সবচেয়ে ভালো নেটওয়ার্কের অপারেটর হিসেবে মনোনীত হয়েছে। তারা এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে চান। গত বছর তারা সিদ্ধান্ত নেন, তারা দেশের সব জায়গায় পৌঁছাতে প্রয়োজনীয় বেস স্টেশন এবং টাওয়ার নির্মাণ দ্রুততার সঙ্গে শেষ করবেন। এ কারণে তারা প্রচুর বিনিয়োগ করছেন। প্রতি মাসে নতুন টাওয়ার ও বেস স্টেশন নির্মিত হচ্ছে। তিনি মন্তব্য করেন, আমরা বাজারের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং সব সময় সেরা নেটওয়ার্কের অপারেটর হিসেবে থাকতে চাই।
বাংলাদেশের অর্থনীতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এদেশের অর্থনীতিতে ধারাবাহিকভাবে ভালো প্রবৃদ্ধি রয়েছে। বাংলাদেশ দারিদ্র্য বিমোচনে উল্লেখযোগ্য সাফল্য দেখিয়েছে। বাংলাদেশ এখন ডিজিটাইটেশন, উদ্ভাবন এবং জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতিতে মনোযোগ বাড়িয়েছে, যা অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করবে। মোবাইল ইন্টারনেটকে সহজলভ্য এবং সাশ্রয়ী করার ক্ষেত্রে এদেশ অনেক এগিয়ে গেছে। সারা বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশে মোবাইল ইন্টারনেট সবচেয়ে সস্তা। এটি অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি। তবে টেলিকম সেবার পাশাপাশি শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আর্থিক সেবায় আরও মনোযোগ দিতে হবে। বাংলালিংক যে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম শুরু করেছে, তার ফলে মানুষ সহজে ও সাশ্রয়ী উপায়ে সেবা পাবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
বাংলালিংকের ভবিষ্যৎ লক্ষ্য সম্পর্কে এক প্রশ্নের উত্তরে কান বলেন, 'টেলিকম অপারেটর নয়, আমাদের লক্ষ্য ডিজিটাল অপারেটর হওয়া। গতানুগতিক ডাটা বা ভয়েস সেবা থেকে আমাদের রূপান্তর ঘটছে। আমরা আর্থিক সেবা, ক্লাউড সার্ভিসসহ নানা ক্ষেত্রে উদ্ভাবনী ব্যবসায় যাচ্ছি। বাংলালিংকের লাইভ টিভি স্ট্রিমিং অ্যাপ 'টফি' বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। নতুন চালু হওয়া 'হেলথ হাব' নিয়ে আমরা খুবই আশাবাদী। বাংলাদেশে টেলিকম খাতের রূপান্তরে আমরা নেতৃত্ব দিতে চাই।'
টেলিকম খাতের কর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশে অনেক দেশের তুলনায় করহার বেশি। করহার কমালে এ খাতে আরও প্রবৃদ্ধি হবে। ডিজিটাইজেশনে অপারেটররা আরও বেশি অবদান রাখতে পারবেন। তবে বাংলাদেশ বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য অনেক উদার নীতি গ্রহণ করছে। তারা এ জন্য খুব খুশি।