প্রশ্ন: আমার বয়স ৩৮ বছর। বিয়ে করেছি ৯ বছর আগে, একটা মেয়ে আছে ৫ বছরের। চাকরির সূত্রে দুইজন দুই শহরে থাকি বিয়ের পর থেকেই। মেয়েকে একাই বড় করতে হয়েছে বলতে গেলে। মেয়ে হওয়ার পর থেকেই স্বামীর উপর নানা কারণে আমার বিরক্তি বেড়েছে। সে এমনিতে খুব হেল্পফুল, যতটুকু সময় সাথে থাকে টেক কেয়ার করে বাচ্চার। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে যখন দূরে থাকে, বাচ্চার সবকিছুতে আমাকেই দোষারোপ করতে থাকে স্বামী। আমি যে একা হাতে বাচ্চাটা অনেক কষ্টে পালি, এটা নিয়ে তার কোনও ধরনের সহানুভূতি নেই। তার ধারণা এটা আর এমন কী? সব মায়েদেরই তো কষ্ট করতে হয় বাচ্চা নিয়ে। আমি যদি বাচ্চার জ্বালাতনে অতিষ্ঠ হয়ে তাকে বলি মেয়ে অনেক ট্যানট্রম করছে, সে বলে পাঁচ বছরের বাচ্চা কেন ট্যান্ট্রম করবে? এই বয়সের বাচ্চা তো ম্যানার শিখে যায়। তুমি ঠিক মতো শেখাওনি, তোমার প্যারেন্টিং এর ভুল। এভাবে পদে পদে আমার ভুল ধরতে থাকে বলে আমি এখন কিছু বলিও না। আমাদের মধ্যে শেয়ারিং এর গ্যাপ পড়ে যাচ্ছে, কেন যাচ্ছে এগুলো নিয়ে অনেক বুঝিয়েছি। লম্বা লম্বা চিঠি লিখেছি, কিন্তু সে যেটা বিলিভ করে সেটাই ধরে বসে থাকে। আমিও আজকাল এতো ধৈর্য্যহারা থাকি যে মনে হয় আর সম্ভব হচ্ছে না আমাকে দিয়ে। কী করবো?

উত্তর: ১. যোগাযোগের প্যাটার্ন বদলান, ‘আমি’ ভাষায় কথা বলুন। যখন সমস্যা নিয়ে কথা বলবেন, অভিযোগের বদলে বলুন ‘যখন তুমি বলো আমি মেয়েকে শেখাতে পারিনি, তখন আমি প্রচণ্ড কষ্ট পাই কারণ দিনরাত একা সংগ্রাম করছি। স্পষ্ট উদাহরণ দিন যেমন ‘গত মাসে যখন মেয়ে জ্বরে ৩ দিন স্কুল মিস করল, আমি অফিসের লিভ নিয়ে রাত জেগে সেবা-যত্ন করেছি। তোমার কাছে শুনতে চাই ‘কষ্ট হচ্ছে বুঝতে পারছি, সাহায্য চাও?’

২. তার দৃষ্টিভঙ্গি বুঝে তাকে বোঝানোর চেষ্টা করুন: সে হয়তো সন্তান পালনের বাস্তবতা প্রত্যক্ষ করে না বলে ‘আদর্শিক’ ধারণা পোষণ করছে। তাকে শিশু মনস্তত্ত্বের বই/লেখা (অনলাইনে বাংলা রিসোর্স আছে) পড়তে দিন। ‘সব মায়েরা করে’ কথাটি ভুল। গবেষণা বলে, সাপোর্ট সিস্টেম ছাড়া একা প্যারেন্টিং ডিপ্রেশন বাড়ায়। তাছাড়া ৫ বছর বয়সে ট্যানট্রম স্বাভাবিক, এটা প্যারেন্টিং দোষ নয়, শিশুর মানসিক বিকাশের অংশ।

৩. ব্যবহারিক সমাধান: সহ-প্যারেন্টিং প্ল্যান তৈরি করুন। যেমন সে প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে (যেমন রাত ৮টা) ভিডিও কল করে মেয়ের সাথে গল্প করবে বা বই পড়বে, সপ্তাহে একদিন সে মেয়ের স্কুল/ডাক্তারের খরচ বা অ্যাক্টিভিটির দায়িত্ব নেবে। শুধু সন্তান নয়, আপনাদের জুটির জন্য সময় আলাদা সময় নির্ধারণ করবেন। মাসে একবার তার শহরে গিয়ে রোমান্টিক ডেট করবেন ইত্যাদি। মেয়েকে বলুন, ‘আমাদের পরিবারে আব্বু দূরে কাজ করেন, তাই আমরা দুজনে টিম!’ এতে তার নিরাপত্তাবোধ বাড়বে।

৪. আপনার মানসিক শক্তি বাড়ান: সাপোর্ট সিস্টেম গড়ুন। পরিবার/বন্ধুদের সাহায্য নিন। ঢাকা/বড় শহরে ‘প্যারেন্টিং সাপোর্ট গ্রুপ’ খুঁজুন। অনলাইনে ‘বাংলাদেশ মাতৃত্ব ফোরাম’-এর মতো কমিউনিটিতে যোগ দিন। নিজের শরীর ও মনের যত্ন নিন। নিয়মিত ব্যায়াম, যোগবব্যায়াম, ইয়োগা, মেডিটেশন করুন। গান শুনুন, বই পড়ুন বা মুভি দেখুন।

৫. পেশাদার সহায়তা: যদি আপনাদের পারস্পারিক সম্পর্কের উন্নতি না হয়, আপনার স্বামীকে নিয়ে সাথে যৌথ বিবাহ পরামর্শ বা ম্যারেজ কাউন্সেলরের সহায়তা নিন। নিরপেক্ষ তৃতীয় পক্ষ তার দৃষ্টিভঙ্গি বোঝাতে এবং আপনার কষ্টের মাত্রা তাকে অনুধাবন করাতে সাহায্য করবে।

৬. সম্পর্কের সীমানা টানুন: তাকে বলুন, ‘তুমি যদি আমার প্যারেন্টিং নিয়ে সমালোচনা করো, আমি কথাটি শেষ করেই ফোন রেখে দেব। আমরা শুধু সমাধান নিয়ে কথা বলব।’ যদি কাউন্সেলিং কাজ না করে, নিজের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য কিছুদিন আলাদা থাকুন। বাংলাদেশে আইনগত বিচ্ছেদের আগে ৯০ দিনের ‘সালিশ’ বাধ্যতামূলক - এ সময়টাই ট্রায়াল সেপারেশনের জন্য ব্যবহার করতে পারেন যদি একান্তই অপরিহার্য হয়।

প্রশ্ন: আমার বয়স ২৭ বছর। দেশের বাইরে যাব বলে একজনকে ১২ লাখ টাকা দিয়েছিলাম। সে সেই টাকা নেওয়ার পর আমার সাথে সব যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। এই প্রতারণা আমাকে ভীষণভাবে ভেঙে দিয়েছে। আমার মনে হচ্ছে আমি আর সামনে আগাতে পারবো না।

উত্তর: ১. মানসিকভাবে ঘুরে দাঁড়ান: যখন জীবন আপনাকে পাথর ছোঁড়ে, তখন সেই পাথর দিয়ে সিঁড়ি বানান। মনে রাখবেন, এটাই জীবনের শেষ নয়- এই ক্ষতি সাময়িক। এই আঘাত আজ যত বড়ই মনে হোক, ৫ বছর পর আপনি হয়তো এই ঘটনাকেই জীবনের টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে দেখবেন। বিশ্বের ৬০% সফল মানুষ জীবনে বড় আর্থিক ধাক্কা খেয়েছেন। একজন ২৭ বছর বয়সী যে পরিমাণ সংগ্রামী মনোভাব দেখিয়েছে (বিদেশ যাওয়ার চেষ্টা), সেই দৃঢ়তাই আপনাকে আবার উঠে দাঁড় করাবে।

২. সাপোর্ট সিস্টেম তৈরি করুন: পরিবার/বন্ধুকে খুলে বলুন। লজ্জা পাবেন না বা নিজেকে দোষ দেবেন না। আপনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন– এটি আপনার ব্যর্থতা নয়, বরং সেই ব্যক্তির অপরাধ যিনি সুযোগ নিয়েছেন। মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রয়োজনে প্রফেশনাল কাউন্সেলিং সেবা গ্রহণ করুন।

৩. আর্থিক পুনরুদ্ধারের পদক্ষেপ নিন: যদি টাকা ধার করে থাকেন, লেনদেনকারীর সাথে পুনঃশিডিউল আলোচনা করুন। আয় বৃদ্ধির জনন্য ফ্রিল্যান্সিং (Upwork, Fiverr), পার্টটাইম জব (বেসিকস.কম), স্কিল ডেভেলপমেন্ট (10 Minute School) করুন। অর্থ ভাণ্ডার পুনঃর্নির্মাণে মাসিক আয়ের ১০% জরুরি তহবিলে রাখুন, ক্ষুদ্র সঞ্চয় শুরু করুন।

৪. আইনি সহায়তা ও পরামর্শ নিন: টাকা হস্তান্তরের রসিদ (ব্যাংক স্টেটমেন্ট/মোবাইল ট্রানজেকশন), চুক্তি (যদি থাকে), মেসেজ/কলের স্ক্রিনশট ইত্যাদি প্রমাণ জোগাড় করুন ও নিকটস্থ থানায় দণ্ডবিধি ৪২০ ধারা (প্রতারণা) ও ৪০৬ ধারা (আমানতের খিয়ানত) এ মামলা করুন। বাংলাদেশ সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেল (https://www.cybercrime.gov.bd) এ অভিযোগ করুন। ফোন: ০১৭৬৯৬৯১৬০০। প্রতারকের ফোন নম্বর, ফেসবুক প্রোফাইল, ইমেইল আইডি দিলে তারা ডিজিটাল ট্রেইস করতে পারবে। জেলা লিগ্যাল এইড অফিসে বিনামূল্যে পরামর্শ পাবেন (https://www.nlaso.gov.bd)। প্রাইভেট লেয়ার নিয়োগ করতে বিশেষজ্ঞ আইনজীবীর পরামর্শ নিন।

৫. ভবিষ্যতের জন্য সতর্ক হোন: টাকা হস্তান্তরের আগে লিখিত চুক্তি নিন, সাক্ষী রাখুন, কখনও ক্যাশ না দেওয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকুন। ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করুন। প্রতারক আপনার পরিচয়পত্রের কপি নিয়েছে কি? ক্রেডিট ব্যুরোতে CIB রিপোর্ট চেক করুন (https://www.creditinfo.gov.bd)। বিদেশ যাওয়ার বিকল্প খুঁজুন। IELTS/স্পন্সরশিপ ছাড়াও AusAID, Commonwealth স্কলারশিপ দেখুন, বৈধ এজেন্সি খুঁজুন।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews