অবশেষে সিলেটে ‘জুলাই বিপ্লব ভিজ্যুয়াল করিডোর’-এ শহীদ সাংবাদিক এ টি এম তুরাবের রক্ত মাখা ছবি সাঁটানো হয়েছে।
শনিবার (২ আগস্ট) রাতে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ দৈনিক নয়া দিগন্তকে তুরাবের ছবি লাগানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
উদযাপনী ব্যানার-ফেস্টুনে জুলাই শহীদ আবু সাঈদসহ অনেকের ছবি থাকলেও ছিল না সিলেটে পুলিশের গুলিতে শহীদ সাংবাদিক এ টি এম তুরাবের ছবি। বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদমুখর হন সিলেটের সাংবাদিক সমাজ। এতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়ে নিন্দা ও প্রতিবাদ।
বিষয়টি জেনে সিলেটের জেলা প্রশাসক সিলেট জেলা পরিষদের কর্মকর্তাদের তা অবহিত করেন। তারা তাৎক্ষণিক নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে তা সংশোধনের উদ্যোগ নেন। তবে কেউ কেউ এটাকে সহজভাবে নেননি। তাদের বক্তব্য, কোনো কোনো কর্মকর্তা ইচ্ছে করেই এই অপকর্মে লিপ্ত হয়েছেন।
সিলেটে ‘জুলাই বিপ্লব ভিজ্যুয়াল করিডোরে স্মৃতির পথ’ ব্যানার-ফেস্টুনে গণঅভ্যুত্থানের সময় পুলিশের গুলিতে নিহত দৈনিক নয়া দিগন্ত ও দৈনিক জালালাবাদ পত্রিকার তরুণ সাংবাদিক এ টি এম তুরাবের ছবি ছাড়াও যুক্ত করা হচ্ছে গ্যাজেটভুক্ত সিলেটের বাকি ১৩ শহীদের ছবিও।
চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে স্বৈরশাসক পতনের এই আন্দোলনকে স্মরণীয় করে রাখতে সিলেটসহ সারা দেশে ‘জুলাই বিপ্লব ভিজ্যুয়াল করিডোর স্মৃতির পথ’ এবং এর স্মৃতিতে গণঅংশগ্রহণের লক্ষ্যে ‘আমার চোখে জুলাই বিপ্লব’ সপ্তাহ উদযাপন করা হচ্ছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে সপ্তাহব্যাপী বিশেষ এসব কর্মসূচি পালিত হচ্ছে।
তবে এই উদযাপনী ব্যানার-ফেস্টুনে জুলাই শহীদ আবু সাঈদসহ অনেকের ছবি থাকলেও ছিল না সিলেটে পুলিশের গুলিতে শহীদ সাংবাদিক এ টি এম তুরাবের মুখ। বিষয়টি নজরে আসার পরই প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠেন সিলেটের সাংবাদিকরা।
বিষয়টি নিয়ে শুক্রবার (১ আগস্ট) সকাল থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও অনলাইনে জোর প্রতিবাদ শুরু হয়। ব্যক্তিগতভাবেও অনেক সিনিয়র সাংবাদিক জেলা প্রশাসনসহ কর্তাব্যক্তিদের সাথে কথা বলেন।
পরে রাত ১০টার দিকে সিলেট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আলোচনা ও সংবাদ হওয়ায় ভালো হয়েছে। এ বিষয়ে আমি তাৎক্ষণিকভাবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেছি। সাংবাদিক এ টি এম তুরাবসহ গ্যাজেটভুক্ত সিলেটের ১৪ শহীদের ছবি যুক্ত করতে জেলা পরিষদকে বলা হয়েছে।’
এর আগে বিশেষ এই সপ্তাহ উপলক্ষে ৩০ জুলাই থেকে লাইটিং করে সাজানো হয় সিলেটের ঐতিহ্যবাহী কিন ব্রিজ। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অগ্নিগর্ভ দিনগুলোর ছবি-সম্বলিত ব্যানার-ফেস্টুন লাগানো হয়েছে কিন ব্রিজের দক্ষিণ প্রান্ত থেকে শুরু করে বন্দরবাজার হয়ে রিকাবীবাজার পর্যন্ত।
এসব ব্যানার-ফেস্টুনে লেখা আছে, তারুণ্যের আইডিয়ায় গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি পালন, আমার চোখে জুলাই বিপ্লব, জুলাই বিপ্লব ভিজ্যুয়াল করিডোর স্মৃতির পথ, ৩০ জুলাই ২০২৫ হতে ৫ আগস্ট ২০২৫।
এদিকে সিলেট জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সন্দ্বীপ কুমার সিংহ জানিয়েছেন, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ৩০ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ‘জুলাই বিপ্লব ভিজ্যুয়াল করিডোর স্মৃতির পথ’ পালিত হচ্ছে।
এতে রয়েছে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ভিডিওচিত্র প্রদর্শনী, জনসাধারণের স্মৃতি রোমন্থনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি। ৩ আগস্ট বিকেলে সিলেট বিভাগীয় কমিশনার খান মো: রেজা-উন-নবী কিন ব্রিজ পরিদর্শন করবেন এবং পরে রিকাবীবাজারে কবি নজরুল অডিটোরিয়ামে ভিডিওচিত্র প্রদর্শনীর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। সেখানে প্রদর্শনী চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত।
জুলাই বিপ্লব ভিজ্যুয়াল করিডোর’ সপ্তাহ উদযাপনে জেলা পরিষদকে সহযোগিতা করছে সিলেট সিটি করপোরেশন ও সিলেট জেলা প্রশাসন।