কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে দুই শতাধিক প্রাণ ঝরে গেছে। কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন জারির পর আগেরবার আন্দোলনটি থেমে যায়, আদালতের দোহাই না দিয়ে শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবি মেনে নিলে এবারও বিষয়টি অতি সহজেই সমাধান হয়ে যেত। প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক রায়ে আমাদের আপিল বিভাগও শিক্ষার্থীদের দাবির যৌক্তিকতার স্বীকৃতি দিয়েছেন; কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যাটি সমাধান না করে সরকারের নীতিনির্ধারকেরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ছাত্রলীগ–যুবলীগসহ দলীয় বাহিনী ব্যবহার করে বলপ্রয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়, যা পরিস্থিতিকে জটিল করে তোলে। ১৬ জুলাই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদ পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ার পর পরিস্থিতি বেসামাল পর্যায়ে পৌঁছায় এবং পরবর্তী কয়েক দিনে আমরা আরও রক্তপাত ও প্রাণহানি দেখলাম, যার দায় ক্ষমতাসীনদেরই নিতে হবে।
শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলনকে সমর্থন দেয় দেশের অগণিত সাধারণ মানুষ। গত ১৫ বছরের শাসনামলে বর্তমান সরকার জনগণের প্রতি তার অঙ্গীকারগুলো একের পর এক ভঙ্গ করেছে, যে কারণে অনেক নাগরিকের মনেই ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। স্মরণ করা যেতে পারে যে ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে প্রকাশিত ‘দিনবদলের সনদ’ শীর্ষক নির্বাচনী ইশতেহারে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ অঙ্গীকার করেছিল, ‘দুর্নীতি দমন কমিশনের স্বাধীনতা নিশ্চিত করে শক্তিশালী করা হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধে বহুমুখী কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে। ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের বার্ষিক সম্পদবিবরণী দিতে হবে। রাষ্ট্র ও সমাজের সব স্তরের ঘুষ–দুর্নীতি উচ্ছেদ, অনুপার্জিত আয়, ঋণখেলাপি, চাঁদাবাজি, কালোটাকা ও পেশিশক্তি প্রতিরোধ ও নির্মূলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।...বিচার বিভাগের প্রকৃত স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ করা হবে...আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, স্বাধীন মানবাধিকার কমিশন গঠন ও ন্যায়পাল নিয়োগ করা হবে। মানবাধিকার লঙ্ঘন কঠোরভাবে দমন করা হবে...নির্বাচন কমিশন এবং নির্বাচনপদ্ধতির চলমান সংস্কার অব্যাহত থাকবে।’