১৬ বছরের কম বয়সিদের জন্য সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার নিষিদ্ধের আইন কার্যকর করতে চলেছে অস্ট্রেলিয়া। এ নিয়ে ভিডিও প্ল্যাটফর্ম ইউটিউব জানিয়েছে, এ আইন কার্যকর হলে শিশুদের নিরাপত্তা ঝুঁকি আরও বাড়বে। 

ইউটিউবের দাবি, এই আইন তড়িঘড়ি করে বানানো হয়েছে। এই আইন কার্যকর করা হলে কঠোর প্যারেন্টাল কন্ট্রোল ব্যবস্থা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়বে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। আর এ নিয়ে দেশটিতে চলছে—একদিকে প্রশংসা, অন্যদিকে সমালোচনা।

ইউটিউব আরও জানিয়েছে, ১০ ডিসেম্বর থেকে ১৬ বছরের কম বয়সিদের জন্য সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা শুরু হলে অভিভাবকরা আর তাদের অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানের অ্যাকাউন্ট নজরে রাখার সুযোগ পাবেন না। কনটেন্ট সেটিংস নিয়ন্ত্রণ বা কোনো চ্যানেল ব্লক করার সুযোগ তাদের হাতে থাকবে না। শিশুরা তখনো ভিডিও দেখতে পারবে, তবে অ্যাকাউন্ট ছাড়া। 

এ বিষয়ে বুধবার (৩ ডিসেম্বর) এক প্রতিক্রিয়া জানিয়ে অস্ট্রেলিয়ার যোগাযোগমন্ত্রী আনিকা ওয়েলস বলেছেন, শিশুদের জন্য নিজেদের প্ল্যাটফর্মের ঝুঁকি তুলে ধরছে ইউটিউব। এটি বেশ অদ্ভুত। যদি ইউটিউবই আমাদের মনে করিয়ে দেয়, তাদের প্ল্যাটফর্মটি নিরাপদ নয়; তাহলে সমস্যাটি ইউটিউবেরই সমাধান করা উচিত।

আনিকা ওয়েলস বলেন, শুরুতে কয়েক দিন বা কয়েক সপ্তাহ কিছুটা সমস্যা দেখা দেওয়া স্বাভাবিক। নিয়ন্ত্রণ আর সংস্কৃতির পরিবর্তন দুই-ই সময়সাপেক্ষ। ধৈর্য লাগে। ১৫ বছরের নিচের প্রজন্ম, যাদের বলা হয় জেন আলফা, তারা স্মার্টফোন ও সামাজিক মাধ্যম অ্যাকাউন্ট পাওয়ার পর থেকেই এক ধরনের ‘ডোপামিন ড্রিপ’-এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ে। তিনি বলেন, আগের প্রজন্মও নিপীড়ন বা ক্ষতিকর কনটেন্টের মুখোমুখি হয়েছে, তবে তা ছিল সীমিত। নতুন প্রযুক্তির কারণে আজকের শিশুরা অ্যালগরিদম ও নোটিফিকেশনের মাধ্যমে প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা এমন কনটেন্টে নিরবচ্ছিন্ন প্রবেশাধিকার পাচ্ছে, যা তাদের মনোযোগ কেড়ে নিচ্ছে অন্য সবকিছু থেকে।

ওয়েলস আরও বলেন, ‘একটি আইন দিয়েই আমরা জেনারেশন আলফাকে সেই শূন্যতাময় ঘূর্ণিপাক থেকে বাঁচাতে পারি, যেখানে তাদের টেনে নেয় শিকারি অ্যালগরিদম; যে বৈশিষ্ট্যটির উদ্ভাবক নিজেই এটিকে বলেছেন 'আচরণগত কোকেন’।

তিনি বলেন, প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোকে তাদের প্ল্যাটফর্মে ১৬ বছরের নিচে কতটি অ্যাকাউন্ট রয়েছে, এ নিয়ে ছয় মাস অন্তর নিয়মিতভাবে প্রতিবেদন দিতে হবে। 

অস্ট্রেলিয়ার সামাজিক মাধ্যম নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের খবরে কম পরিচিত প্ল্যাটফর্মের দিকে ঝুঁকছে কিশোর-কিশোরীরা। এসব অ্যাপ ডাউনলোডের ঢল নেমেছে তাদের মধ্যে। টিকটকের মালিকানাধীন লেমন ৮ ও ইয়োপ নামে দুটি ভিডিও ও ছবি শেয়ারিং অ্যাপ ডাউনলোডের মাত্রা বেড়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে সেসব অ্যাপের দিকেও নজর দিচ্ছে দেশটির ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

বুধবার (৩ ডিসেম্বর) এক বিবৃতিতে ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্মটি জানিয়েছে, তারা আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্য করবে। তবে নতুন আইনটি এক দশকের বেশি সময় ধরে গড়ে তোলা ‘দৃঢ় সুরক্ষা ব্যবস্থা ও প্যারেন্টাল কন্ট্রোল’কে দুর্বল করে দেবে।

এদিকে অস্ট্রেলিয়ার গুগল ও ইউটিউব জননীতিবিষয়ক সিনিয়র ম্যানেজার র্যাচেল লর্ড লিখেছেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো— এই আইন অনলাইনে শিশুদের নিরাপদ রাখার প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে পারবে না। বরং অস্ট্রেলিয়ার শিশুদের ইউটিউবে আরও কম নিরাপদ করে তুলবে। তবে অভিভাবক ও শিক্ষকরাও একই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বলে জানান তিনি।

এ ছাড়া অ্যাকাউন্টধারীদের জন্য চালু থাকা ‘বিরতি নেওয়ার’ বা ‘ঘুমাতে যাওয়ার’ মতো ডিফল্ট ওয়েলবিয়িং রিমাইন্ডারও আর শিশুদের জন্য পাওয়া যাবে না। কারণ এসব সুবিধা কেবল অ্যাকাউন্ট থাকাবস্থায়ই কার্যকর।

নিষেধাজ্ঞার আওতায় কোম্পানিগুলো বয়সসীমা মানতে ব্যর্থ হলে সর্বোচ্চ ৪ কোটি ৯৫ লাখ অস্ট্রেলীয় ডলার পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। তাদের বিদ্যমান অ্যাকাউন্ট নিষ্ক্রিয় করতে হবে, নতুন অ্যাকাউন্ট তৈরি বন্ধ করতে হবে এবং যে কোনো বিকল্প উপায় প্রতিরোধ করতে হবে। 

প্রসঙ্গত, অস্ট্রেলিয়ায় ইউটিউব ছাড়াও নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়া অন্যান্য প্ল্যাটফর্ম হলো— ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টিকটক, স্ন্যাপচ্যাট, এক্স, টুইচ, থ্রেডস, রেডিট এবং কিক।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews