ঝিনাইদহে শীতকালীন সবজি ফুলকপির বাম্পার ফলন হয়েছে। বেশি ফলন নিয়ে বিপাকে চাষিরা। তাদের ভাষ্য, বাজারে ফুলকপির ক্রেতা নেই। দাম পড়ে যাওয়ায় বিঘাপ্রতি ২৪ হাজার টাকার বেশি লোকসান গুনতে হচ্ছে। কৃষি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উৎপাদন খরচের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সরকারি উদ্যোগে দর ঠিক না করলে চাষিরা পথে বসবেন। আবাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলে ভবিষ্যতে সংকট তৈরি হবে।
ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলায় এ বছর ৩৮৫ ও হরিণাকুণ্ডুতে ১৬৫ হেক্টর জমিতে ফুলকপি আবাদ হয়েছে। কৃষকদের মধ্যে আগাম জাত যারা করেছেন, তারা ভালো দাম পেয়েছেন। কিন্তু ভরা মৌসুমে দাম পড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন অধিকাংশ কৃষক।
সরেজমিন শনিবার শৈলকুপা ও হরিণাকুণ্ডুর বিভিন্ন বাজারে প্রতি পিস ফুলকপি ২ থেকে সর্বোচ্চ ৬ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়। অনেক কৃষক ক্ষোভে রাস্তায় ফেলে দিয়ে বাড়ি ফিরছেন। তারা বলছেন, যে দাম বলছেন ব্যবসায়ীরা, তাতে ভ্যান ভাড়াও উঠছে না।
শৈলকুপার ২ নম্বর মির্জাপুর ইউনিয়নের মহম্মদপুর গ্রামের চাষি হবিবর রহমান জানান, ৬৬ শতাংশ জমিতে তিনি ফুলকপি আবাদ করেছেন। এক বিঘা জমিতে চার হাজার পিস চারা লাগে। তাতে আড়াই টাকা করে ১০ হাজার খরচ। উৎপাদন পর্যন্ত কয়েক ধাপে চারাপ্রতি ৫ টাকার বেশি সার-ওষুধ দিতে হয়। সেচ ও শ্রম ধরলে বিঘায় ৪০ হাজার টাকা পার হয়ে যায়। প্রতি পিস কপি উৎপাদনে প্রায় ১০ টাকা ব্যয় হলেও দাম মিলছে গড়ে ৪ টাকা।
উপজেলার ফুলহরি গ্রামের চাষি বদর উদ্দিন জানান, তাদের পরিচিত অনেকে মাঠেই ফুলকপি কেটে নষ্ট করছেন। কারণ দেড় কেজি ওজনের একটি কপি বাজারে নিয়ে ৫ টাকাও পাচ্ছেন না। ভ্যান ভাড়া যোগ করলে প্রতি পিসে ৬ থেকে ৮ টাকা লোকসান হচ্ছে। তবে হরিণাকুণ্ডুর দৌলতপুর ইউনিয়নের ভূঁইয়াপাড়া গ্রামের কৃষক বসির উদ্দিন জানান, আগস্টে তিনি এক বিঘা জমিতে ফুলকপির চাষ করেন। নভেম্বরের শুরুতে বিক্রি করায় প্রায় ১ লাখ টাকা লাভের মুখ দেখেছেন।
দুই উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মারফর হোসেন ও লিটন আলী সমকালকে জানান, আগস্ট বা সেপ্টেম্বরে চারা রোপণ করা হয়। ৬০ থেকে ৭০ দিনের মধ্যে ফুলকপি তোলা যায়। এ সবজি আবাদে তিন ধাপে সার প্রয়োগ করতে হয়। প্রতিবার বিঘায় ৬০ কেজি ডিএপি, ৭০ কেজি ইউরিয়া, ৩০ কেজি পটাশ, ২৫ কেজি জিপ ও ২ কেজি ব্রোন সার লাগে। বর্তমান দরে সারের পেছনেই প্রায় ২০ হাজার টাকা ব্যয় হয়। শ্রম ও পরিবহন খরচ ধরলে এক পিস ফুলকপির উৎপাদন খরচ পড়ে ১০ টাকা। অথচ এখন চাষিরা বিক্রি করছেন ২ থেকে ৬ টাকা।
শৈলকুপা বাজারের খুচরা বিক্রেতা মোশারফ হোসেন বলেন, পাইকারিতে প্রতি পিস ফুলকপি আমরা ২ থেকে ৬ টাকায় কিনছি। দেড় কেজি ওজনের একটি খুচরায় ১০ টাকা বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে। আমরা যেমন কিনছি, তেমন বিক্রি
করছি। গায়ে লাগছে না। কিন্তু চাষির তো সর্বনাশ। ভবিষ্যতে কেউ ফুলকপি আবাদের আগে দশবার ভাবতে বাধ্য হবেন।
শৈলকুপা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরিফুজ্জামান বলেন, বর্তমান দরে ফুলকপি চাষির অনেক লোকসান হচ্ছে। চাষিকে বাঁচাতে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের উচিত প্রতিটি পণ্যের উৎপাদন খরচের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দাম নির্ধারণ করা।