যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা করতে সম্মতি আছে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের। কিন্তু তিনি কোনো ধরনের ভূমি ছাড় দিতে রাজি নন। পাশাপাশি তিনি চান, কিয়েভ যেন পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক জোট ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার বিষয়টি মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে। ক্রেমলিন কীভাবে চিন্তা করছে, সে বিষয়ে ধারণা রাখেন এমন পাঁচটি সূত্র রয়টার্সকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
বৈশ্বিক দুই পরাশক্তির মধ্যে গতকাল বুধবার ব্রিটিশ বার্তা সংস্থাটি তাদের প্রতিবেদনে জানায়, ট্রাম্প দ্রুত সময়ের মধ্যে ইউক্রেনে সংঘাত বন্ধের অঙ্গীকার করেছেন। তিনি এমন একসময়ে হোয়াইট হাউসে ফিরছেন, যখন ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে উত্তেজনা বেড়েছে। মস্কো ইউক্রেনের যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যের আকৃতির সমান একটি এলাকা দখলে নিয়েছে। ২০২২ সালে আগ্রাসন শুরুর পর সম্প্রতি তারা দ্রুতগতিতে ইউক্রেনের অধিকতর অঞ্চল দখলে নিচ্ছে। প্রেসিডেন্ট পুতিন কি ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় কোনো চুক্তিতে সম্মত হবেন– এমন প্রশ্নে পাঁচজন বর্তমান ও সাবেক রুশ কর্মকর্তা বলেন, সংঘাত বন্ধে ক্রেমলিন বেশ ভালোভাবেই এ ধরনের পদক্ষেপকে স্বাগত জানাবে। স্পর্শকাতর বিষয় হওয়ায় নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিন কর্মকর্তা বলেন, রাশিয়া ও তাদের সমর্থক সশস্ত্র সংগঠনের হাতে দখল হওয়া ইউক্রেনের দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, জাপোরিঝিয়া ও খেরসন নিয়ে আলোচনার সুযোগ আছে।
এ চার অঞ্চলকে মস্কো তাদের ভূখণ্ডের অংশ মনে করে। এসব অঞ্চলে রুশ বাহিনীর সদস্যরাও অবস্থান করছেন, যারা ৭০-৮০ শতাংশ এলাকা দখলে রেখেছেন। দুই কর্মকর্তা জানান, তবে ইউক্রেনের খারকিভ ও মাইকোল্যাইভের মতো ছোট অঞ্চল থেকে সেনা সরিয়ে নিতে সম্মত আছে রাশিয়া।
চলতি মাসে পুতিন বলেন, যে কোনো যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে যেন রণক্ষেত্রের বাস্তবতার প্রতিফলন ঘটে। কিন্তু তিনি স্বল্পকালীন যুদ্ধবিরতি চান না। কারণ, এতে পশ্চিমা দেশগুলোর মাধ্যমে ইউক্রেন আরও অস্ত্র সঞ্চয় করতে পারবে। ৭ নভেম্বর পুতিন বলেন, যদি নিরপেক্ষতার বিষয়টি না আসে, তাহলে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে ভালো প্রতিবেশী সুলভ সম্পর্ক কল্পনা করা কঠিন হবে। এ ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, এর কারণ হলো, ইউক্রেন ‘ভুল হাতে’র ঘুঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হবে, যা রুশ ফেডারেশনের স্বার্থবিরোধী।
দুটি সূত্র বলেছে, ইউক্রেনকে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি দূরপাল্লার এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্র রাশিয়ার গভীরে ব্যবহারের অনুমতি দিয়ে বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তা সমঝোতাকে জটিল ও বিলম্বিত করতে পারে। এরই মধ্যে গত মঙ্গলবার কিয়েভ রুশ সীমান্তের অভ্যন্তরে এ ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে। মস্কো এটাকে বড় ধরনের উস্কানি বলে বর্ণনা করেছে। দুটি সূত্র জানায়, কোনো ধরনের যুদ্ধবিরতি না হলে রাশিয়া লড়াই চালিয়ে যাবে।
ক্রেমলিন মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, পুতিন এরই মধ্যে বলেছেন, সংঘাতকে সাময়িক সময়ের জন্য স্থগিত রাখায় কোনো কাজ হবে না। ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের অনুমোদন যুক্তরাষ্ট্রের গুরুতর উস্কানি।