যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় সব বাণিজ্যিক অংশীদার রাষ্ট্রের ওপর শুল্প আরোপ করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। যাকে ‘রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ’ বলছে তার প্রশাসন অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো যে শুল্ক নেয় তার প্রতিক্রিয়া হিসেবে নতুন এ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। বুধবার এ শুল্প আরোপের সময় চীনের বিরুদ্ধে কড়া ভাষায় কিছু কথা বলেছিলেন তিনি। 

ট্রাম্প বলেন, চীনের প্রেসিডেন্ট শি’র প্রতি আমার অগাধ ভক্তি রয়েছে, চীনের প্রতিও আমার সম্মান রয়েছে। তবে তারা আমাদের কাছ থেকে অনেক বেশি সুবিধা নিচ্ছে। 

১৮০টি দেশের ওপর নতুন এ শুল্ক ঘোষণা করেছেন তিনি। সর্বনিম্ন ১০ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ৫৪ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক ধার্য করেছেন ট্রাম্প। বুধবার শুল্প আরোপের ঘোষণার সময় প্রায় একঘণ্টাব্যাপী বক্তব্য দেন এ নেতা। 

এ সময় তিনি বিভিন্ন দেশ কর্তৃক যুক্তরাষ্ট্রের ওপর আরোপিত শুল্ক ও রেসিপ্রোকাল শুল্কের একটি তালিকা সাংবাদিকদের দেখিয়ে চীনের ব্যাপারে বলেন, দেখুন, একেবারে উপরের সারিতে, চীন আমাদের ওপর নানা উপায়ে ৬৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে রেখেছে। পক্ষান্তরে আমরা মাত্র ৩৪ শতাংশ রেসিপ্রোকাল শুল্ক আরোপ করছি। 

ট্রাম্প আরও বলেন, আমরা বরং তাদেরকে অনেক ছাড় দিচ্ছি। তারাও আমাদের ওপর শুল্ক বসিয়েছে, আমরাও বসিয়েছি। তাহলে কেউ কেন মন খারাপ করবে?

তবে চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপকে ‘একতরফা উৎপীড়ণ’ বলে আখ্যায়িত করে এর প্রতিশোধে পাল্টা পদক্ষেপের হুমকি দিয়েছে। দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম সিনহুয়া বলছে, ট্রাম্প ‘ব্যবসাকে একটি দা-কুমড়ার লড়াইয়ে’ পরিণত করেছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই শুল্কনীতি অবশ্যই চীনের জন্য দুঃখজনক। 

প্রথমত, চীনের পণ্যের ওপর আগে থেকেই ২০ শতাংশ শুল্ক রয়েছে। তার ওপর বুধবার নতুন শুল্ক ঘোষিত হলো। দ্বিতীয়ত, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশ কম্বোডিয়া, লাওস ও ভিয়েতনামের ওপরও বড় অংকের শুল্ক আরোপ করল যুক্তরাষ্ট্র। এর মাধ্যমে মূলত ওই দেশগুলোর মাধ্যমেও যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য আমদানির পথ রুদ্ধ করে দিল যুক্তরাষ্ট্র।

যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক আরোপিত সবচেয়ে বেশি শুল্কভূক্ত ১০ দেশের তালিকায় এশিয়ারই পাচঁটি দেশের নাম রয়েছে।

ট্রাম্পের শুল্ক চীনের জন্য ‘কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা’

ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউসে ফেরার পরই চীনের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন। এর এক সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যেই তিনি চীন থেকে আমদানিকৃত গাড়ি, স্টিল, অ্যালুমিনিয়ামসহ কিছু পণ্যের ওপর ৫৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন। 

হিনরিখ ফাউন্ডেশন কনসালটেন্সির বিশ্লেষক ডেবোরাহ এলমস বলেন, একসঙ্গে হিসাব করা হলে এটি বেইজিংয়ের জন্য খুবই উদ্বেগজনক চিত্র। আমি মনে করি না যে নতুন শুল্ক চীনকে লক্ষ্য করে ধার্য করা হয়েছে। এবার যখন চীনও পাল্টা শুল্ক আরোপ করবে, তখন কান্না ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না। 

এই বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, চীনও এর পাল্টা জবাব দেবে। তারা বসে বসে এসব সহ্য করবে না।

চীনের প্রতিবেশী দেশের ওপরও কড়া শুল্ক

চীনের প্রতিবেশী রাষ্ট্র লাওস, কম্বোডিয়া ও ভিয়েতনামের ওপরও ৪৬ থেকে ৪৯ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এটাও চীনকে কাবু করতে যুক্তরাষ্ট্রের অনন্য কৌশলের অংশ। 

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের সবচেয়ে গরীব দুই দেশ লাওস ও কম্বোডিয়া। দেশ দুটির অর্থনীতি অনেকটাই চীনের ওপর নির্ভরশীল। তবে এবার ব্যাপকভাবে অর্থনৈতিক কষাঘাতের কবলে পড়তে পারে দেশ দুটি। 

এদিকে ভিয়েতনামেরও সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার চীন। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে চীন-মার্কিন বাণিজ্য যুদ্ধে সবচেয়ে লাভবান হয়েছিল এই দেশটি। 

২০১৮ সালে যখন চীনের ওপর ট্রাম্প শুল্ক আরোপ করেন। তখন ব্যবসার ভিন্ন উপায় খোঁজা শুরু করেন ব্যবসায়ীরা। ভিয়েতনামেই পণ্য উৎপাদনের সিদ্ধান্ত নেয় অনেক কোম্পানি। সেখান থেকে সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা হয়। বিনিয়োগ সংস্থা এসপিআই অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট এর বিশেষজ্ঞ স্টিফেন ইনস বলেছেন, এবার ভিয়েতনাম ঠিক এ কারণেই লক্ষ্যবস্তু হয়েছে। 

যুক্তরাষ্ট্র কি ‘একঘরে’ হয়ে পড়বে? 

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতির প্রতিশোধে চীন কী পদক্ষেপ নেবে তা একটি বড় প্রশ্ন। চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সদস্য ও ‘সেন্টার ফর চায়না ও গ্লোবালাইজেশন’ নামক থিংক ট্যাংক এর গবেষক ওয়াং হুইয়াও মনে করেন, শেষ পর্যন্ত একঘরে হয়ে পড়বে যুক্তরাষ্ট্র। এশিয়ার দেশগুলো নিজেদের সুরক্ষার জন্য ‘মুক্ত বাণিজ্য’ নীতি গ্রহণ করবে। এরই মধ্যে কিছু আলোচনা শুরু হয়েছে। 

ওয়াং এশিয়ার দেশগুলোকে ‘এই কঠিন সময় অতিক্রম করতে একসঙ্গে কাজ করার’ আহ্বান জানিয়েছেন। তার দাবি, শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র এশিয়ায় প্রভাব হারিয়ে ফেলবে এবং শেষ পর্যন্ত একঘরে হয়ে পড়বে। 

মার্কিন বাণিজ্য মধ্যস্থতাকারী স্টিফেন ওলসন বিবিসিকে বলেন, তিনি মনে করছেন শুল্ক ও অন্যান্য পদক্ষেপের মাধ্যমে বেইজিংও জোরাল প্রতিক্রিয়া দেখাবে। যার ফলে মার্কিন কোম্পানিগুলোর জন্য চীনে কার্যক্রম পরিচালনা করা আরও কঠিন হয়ে পড়বে।

একপর্যায়ে তারা আলোচনার টেবিলের দিকে ফিরবে। সেখানে ব্যাপক দরকষাকষি হবে। তবে তখনপর্যন্ত অনেক দেরি হয়ে যাবে, দু’পক্ষেরই বেশ ক্ষতি হয়ে যাবে। 

লেখক: অ্যানাবেল লিয়াং, বিবিসির বিজনেস রিপোর্টার

অনুবাদ: সজীব হোসেন



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews