রাষ্ট্রায়ত্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে লোকসান বেড়েই চলেছে। এক বছরের ব্যবধানে এই নিট লোকসানের পরিমাণ বেড়েছে ছয় হাজার ২২৪ কোটি টাকা। এর ফলে সমাপ্ত ২০২৪-২৫ অর্থবছর শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত ১৮টি প্রতিষ্ঠানের নিট লোকসান দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ৮৫৩ কোটি ৯১ লাখ টাকা। এর মধ্যে ১৭টি প্রতিষ্ঠান এর আগের অর্থবছরেও লোকসান দিয়েছিল। ওই অর্থবছরে (২০২৩-২৪) প্রতিষ্ঠানগুলোর নিট লোকসানের পরিমাণ ছিল ১৩ হাজার ৬২৯ কোটি ৪১ লাখ টাকা।
অর্থ বিভাগের মনিটরিং সেল সূত্রে এ হিসাব পাওয়া গেছে। এটি অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০২৫-এ প্রকাশ করা হবে বলে জানা গেছে।
‘নিট মুনাফা/লোকসান’ এর পরিবর্তে ‘উদ্বৃত্ত/ঘাটতি’ : অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক হিসাব (নিট মুনাফা/ লোকসান) প্রণয়নে বেশকিছু নতুন প্রতিষ্ঠান অন্তর্ভুক্ত ও শব্দগত পরিমার্জন করা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এ তালিকায় প্রায় ৫০টি প্রতিষ্ঠান অন্তর্ভুক্ত ছিল এবং এ তালিকার শিরোনাম ছিল- ‘রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলোর নিট মুনাফা/ লোকসানের বিবরণ’। বর্তমানে এ তালিকার শিরোনাম করা হয়েছে- ‘রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলোর উদ্বৃত্ত/ঘাটতির বিবরণ’। এ তালিকায় নতুন ৪১টি সংস্থা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এবং মোট রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯১টি। এর মধ্যে শিল্প খাতের ১৫টি, ইউটিলিটি (সেবা) খাতের ৩০টি, পরিবহন ও যোগাযোগ খাতের ৯টি, বাণিজ্যিক খাতের ১১টি, কৃষি ও মৎস্য খাতের দু’টি, নির্মাণ খাতের ছয়টি ও সেবা খাতের ১৮টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। অর্থ বিভাগের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, এর আগের হিসাবে ৫০ প্রতিষ্ঠানের তালিকা অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে লোকসানি প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ১২টি এবং এগুলোর নিট লোকসানের পরিমাণ ছিল ১৯ হাজার ৩৯৫ কোটি ৫১ লাখ টাকা।
লোকসানে থাকা ১৮ শীর্ষ প্রতিষ্ঠান : অর্থ বিভাগের হিসাব মতে, ২০২৪-২৫ অর্থবছর শেষে লোকসানি প্রতিষ্ঠানগুলোর শীর্ষে রয়েছে- বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)। এর আগের অর্থবছরেও প্রতিষ্ঠানটি লোকসানের শীর্ষে ছিল। গত জুন (২০২৫) শেষে প্রতিষ্ঠানটির নিট লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে আট হাজার ৮০৩ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। সংশোধিত হিসাব অনুযায়ী, গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটির নিট লোকসানের পরিমাণ ছিল আট হাজার ৪৮৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে বিপিডিবির নিট লোকসান বেড়েছে ৩১৭ কোটি ৩৬ লাখ টাকা।
দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে- ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। প্রতিষ্ঠানটির নিট লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে সাত হাজার ৮৭৬ কোটি ছয় লাখ টাকা। এর আগের অর্থবছরেও প্রতিষ্ঠানটি লোকসানে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল। সংশোধিত হিসাব অনুযায়ী, গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটির নিট লোকসানের পরিমাণ ছিল এক হাজার ৪০৬ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে টিসিবির নিট লোকসান বেড়েছে ছয় হাজার ৪৬৯ কোটি ১২ লাখ টাকা।
তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে- ‘বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি’। এ সংস্থাটি নতুন সংযুক্ত হয়েছে। গত জুন (২০২৫) শেষে সমিতির নিট লোকসান দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৩২৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এর আগের বছর (জুন, ২০২৪) একই সময়ে নিট লোকসানের পরিমাণ ছিল এক হাজার ৪৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে সমিতির নিট লোকসান বেড়েছে ২৮৫ কোটি ৪৬ লাখ টাকা।
অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে- বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন (বিএসএফআইসি) ৪৩৯ কোটি ৫১ লাখ টাকা; বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি) ২৭৪ কোটি ৯৮ লাখ টাকা; ঢাকা ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (ডেসকো) ২২৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা; পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) ২১৪ কোটি ৭২ লাখ টাকা; ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি অব বাংলাদেশ ২০০ কোটি ৭৪ লাখ টাকা; বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশন (বিজেএমসি) ১৩২ কোটি ৩৭ লাখ টাকা; বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেড (বিজিএফসিএল) ১২২ কোটি ৮ লাখ টাকা; মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড ৮৫ কোটি ৯৩ লাখ টাকা; খুলনা ওয়াসা ৭৮ কোটি ৪৯ লাখ টাকা; বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) ২৯ কোটি ২৪ লাখ টাকা; বাংলাদেশ ফিল্ম ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন (বিএফডিসি) ১৪ কোটি ৮১ লাখ টাকা; অ্যাটলাস বাংলাদেশ লিমিটেড তিন কোটি ৭১ লাখ টাকা; বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন দুই কোটি ৯৫ লাখ টাকা ও বাংলাদেশ ব্লেড ফ্যাক্টরি লিমিটেড দুই কোটি ৩০ লাখ টাকা নিট লোকসান দিয়েছে।