গাজীপুর মহানগরীর পূবাইলে গণধোলাইয়ের শিকার ইমামের কারাগারে মৃত্যুতে তার স্ত্রীর করা হত্যা মামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন বিক্ষোভ মিছিল করেছে এলাকাবাসী।
রোববার বেলা ১১টার দিকে পূবাইলের ৩৯ নং ওয়ার্ডের হায়দরাবাদ তালগাছিয়ার টেক এলাকায় টঙ্গী-জয়দেবপুর আঞ্চলিক সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে এলাকার কয়েকশ নারী-পুরুষ। তারা শিশু নিপীড়নের বিচার ও মিথ্যা মামলা বাতিলের দাবিতে নানা স্লোগান দেন। এসময় প্রায় এক ঘণ্টা সময় ধরে সড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।
মৃত রইজ উদ্দিন বাংলাদেশ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অঙ্গসংগঠন ঢাকা মহানগর ইসলামি ছাত্র সেনার সাবেক সভাপতি ও ইসলামি যুব সেনার সক্রিয় সদস্য ছিলেন। তিনি গত আড়াই মাস ধরে পূবাইলের হায়দরাবাদ তালগাছিয়া আখলাদুল মাজার জামে মসজিদে ইমামের দায়িত্ব পালন করছিলেন।
বিক্ষোভ মিছিল শেষে দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী উস্কানিদাতা আলোচিত গিয়াসউদ্দিন তাহেরীর গ্রেফতার ও বিচার চেয়ে বক্তারা বলেন, গিয়াসউদ্দিন তাহেরী স্থানীয় স্বঘোষিত মাজারের পীর রিয়াজ উদ্দিনের পক্ষ নিয়ে আ'লীগের দোসর হয়ে দেশে নৈরাজ্য, অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে সারা দেশে প্রপাগাণ্ডা, মিথ্যাচার, অপপ্রচার উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে চলেছেন। ভারতে পালিয়ে যাওয়া হাসিনার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে ভন্ড তাহেরী ও তার সংগঠন আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত নির্লজ্জভাবে ৬টি শিশুকে যৌন নিপীড়নকারী রইস উদ্দিনের পক্ষ নিয়েছেন। তার পরিবারকে দিয়ে পূবাইল থানায় হত্যা মামলা করিয়েছেন। খুনি হিসাবে চিহ্নিতকরণ করলে আওয়ামী লীগের দোসর এই এলাকার একমাত্র ভণ্ড পীর রিয়াজ উদ্দিনকে করতে হবে। ইতোমধ্যে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার এন এম নাসিরুদ্দিন প্রাথমিক ঘটনার সত্যটা তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলন করে জাতিকে বিস্তারিত জানিয়েছেন।
বক্তারা আরও বলেন,আমরা এর সুষ্ঠু বিচারের স্বার্থে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন চাই। আমাদের সমাজের ১২০ পরিবারের একটি পরিবার ওই পীর রিয়াজ উদ্দিনের পরিবার। বাকিদের নামে মিথ্যা হয়রানিমূলক হত্যা মামলা দিয়েছে। মিথ্যা মামলায় আমাদের একজনকেও যদি গ্রেফতার করা তাহলে গাজীপুর অচল করে দেওয়া হবে। তাই অবিলম্বে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে দেশে অস্থিতিশীল নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসর ভণ্ড তাহেরীসহ মাজার পূজারীদের বিচারের আওতায় আনার জোর দাবি জানাচ্ছি।
প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার মৃত রইস উদ্দিনের স্ত্রী পূবাইল থানায় ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতপরিচয় ২৫-৩০ জনকে আসামি করে হত্যা মামলাটি করেছিলেন। নির্যাতিত ভিকটিম শিশুর পিতার করা নারী ও শিশু নির্যাতন মামলায় রইজউদ্দিনকে কারাগারে পাঠিয়েছিল পুলিশ। পরে যৌন হয়রানির শিকার ৫ ভিকটিম শিশু নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫ এর ২২ ধারা অনুযায়ী আদালতে জবানবন্দিও দিয়েছে।
উল্লেখ্য আখলাদুল মাজার মসজিদের স্বঘোষিত পীর রিয়াজউদ্দিন ইমাম রইস উদ্দিনকে সম্প্রতি নিয়োগ দিয়েছিলেন। এরই মধ্যে তার বিরুদ্ধে ৬ শিশুকে যৌন নিপীড়ন ও নির্যাতনের অভিযোগ উঠে। সর্বশেষ ২৭ এপ্রিল রোববার এক শিশুকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে রইস উদ্দিনকে আটক করে পীর রিয়াজ উদ্দিনের কাছে নিলে তিনি চড়-থাপ্পড় দিয়ে ছেড়ে দেন। পরে জনতা গণধোলাইয় দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করলে শিশু ও নারী নির্যাতন মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে পুলিশ আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করেন। পরদিন ২৮ এপ্রিল সোমবার ভোরে কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিলে তাকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। এই মৃত্যু ঘিরে বাংলাদেশ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত ও তার অঙ্গসংগঠন সারাদেশে মানববন্ধন, মিছিল, মিটিং, উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে দেশে অরাজকতা সৃষ্টির চেষ্টা চালায়। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বাসভবন অভিমুখী শুক্রবার বিকালে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত পদযাত্রা করলে ওই রাতেই রইস উদ্দিনের স্ত্রীর অভিযোগটি হত্যা মামলা হিসাবে পূবাইল থানায় এন্ট্রি হয়।