সলিমুল্লাহ খান: হাসিনা টিকে ছিলেন তাঁর আগের আমলের অত্যাচার, অবিচার, বিশেষ করে বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের যে ঐক্যের কারণে জনগণের মধ্যে যে ভয় ছিল তার সূত্রে। সেই ভয়কে মূলধন করেই হাসিনা টিকে ছিলেন। লোকে বলত, হাসিনা চলে গেলে যদি বিএনপি আসে! এটাকে বলা যায় ভারসাম্যজনিত শূন্যতা। পৃথিবী ও চাঁদের মাঝামাঝি মহাকাশে একটা জায়গা আছে, যেখানে নভোচারীর ওজন শূন্য হয়ে পড়ে। এ রকম একটা অচলাবস্থার মধ্যেই বিগত সরকার টিকে ছিল। বিএনপিই ছিল হাসিনার মূলধন।

গত ১৫ বছরে বিএনপি বহু আন্দোলন করেও সফল হতে পারেনি। এর কারণ বিএনপির ভেতরেও অজস্র টানাপোড়েন। বিএনপি একটা একক রাজনৈতিক দল নয়, অনেক দলের সমষ্টি। আওয়ামী লীগ খানিকটা দল হলেও সেটা এক পরিবার ও একব্যক্তিকেন্দ্রিক। ছাত্ররা সফল হয়েছেন এ কারণে যে, তাঁরা জনতাকে আকৃষ্ট করতে পেরেছিলেন। এই জনতাকে বিএনপি আকৃষ্ট করতে পারেনি। ছাত্ররা পেরেছেন তাঁদের কোনো অলৌকিক গুণ আছে বলে নয়, তাঁদের সাহস ও দূরদৃষ্টির কারণে। হাসিনা সরকারও বুঝতে পেরেছিল ছাত্রদের শক্তি। তাই ছাত্রদের বুকে গুলি করতে তারা পিছপা হয়নি। এ ধরনের গুলিবর্ষণ পৃথিবীর সব দেশেই জনতাকে আন্দোলনে টেনে নিয়ে আসে।

এ ছাড়া আমাদের এখানে প্রচণ্ড বেকারত্ব সৃষ্টি হয়েছে। মানুষের আর্থিক অবস্থা অত্যন্ত খারাপ হয়ে গিয়েছিল। এ অবস্থায় আর্থিক দুর্নীতির যে বিপুল চিত্র প্রকাশিত হলো সেটাও হাসিনা সরকারকে জনগণের সামনে সম্পূর্ণ উদোম করে দেয়। এই অবস্থায় একটা ক্ষুদ্র স্ফুলিঙ্গও দাবানল সৃষ্টি করতে পারে। বাংলাদেশে জুলাই-আগস্ট মাসে সেটাই ঘটেছে।

অন্তর্বর্তী সরকার এসেছে ছাত্রদের আন্দোলনকে মূলধন করে। ছাত্ররা নিরপেক্ষ লোক হিসেবে বিশ্ববরেণ্য মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে এসেছেন। সরকারের এক মাসও পার হয়নি এখন পর্যন্ত। অন্তর্বর্তী সরকার যা যা করতে পারে তার তালিকা দুই ভাগে বিন্যস্ত করা যায়। প্রথমত, বিগত সরকার, তার আগের সরকার এবং তারও আগের সরকারের আমল মিলে যে বিশাল জঞ্জাল স্তূপীকৃত হয়েছে, তা পরিষ্কার করা। সকল প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়েছে, দেশ দুর্নীতিতে ভরে গেছে। এসব দূর করতে হবে।

দ্বিতীয় কাজের মধ্যে আছে, নতুন কিছু গড়ার প্রস্তাব। নতুন একটা ব্যবস্থা প্রবর্তনের ম্যান্ডেট এই সরকারের আছে কি না, তা নিয়ে একটা বিতর্ক আছে। নির্বাচনের আগে কতটুকু সংস্কার করা যাবে, তাও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। নির্বাচন ও সংস্কার পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল। সংস্কার না করলে নির্বাচন হবে না, আবার নির্বাচন না করলে সংস্কারের কর্তৃত্ব পাওয়া যাবে না। এই দ্বন্দ্ব জীবিত আছে।

এখন তাহলে কোথা থেকে শুরু করতে হবে? শুরু করতে হবে ইতিহাসের দিক থেকে। ঘটনা যা ঘটে গেছে সেখান থেকে। দেশে একটা রাজনৈতিক অভ্যুত্থান ঘটেছে। সেটা জনসমর্থনধন্য। এই অভ্যুত্থানেই আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী পলায়ন করেছেন এবং জনগণ ছাত্রদের বৈধতা দিয়েছে। এটা নির্বাচনের বিকল্প। এই বিকল্পটা সাময়িক। সময়টা কত দীর্ঘ হবে, তাও জনগণের ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে। সময়টা আগে থেকে বলে দেওয়া যাচ্ছে না।

জনগণের ইচ্ছা, আগের সরকার যে প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করেছে, সেগুলোর ন্যূনতম মেরামত না হওয়া পর্যন্ত নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব হবে না। দুটি বিষয় এখানে বিবেচনা করা গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচন ব্যবস্থা পরিপক্ব হওয়ার আগে নির্বাচন অনুষ্ঠান করলে বড় ধরনের ক্ষতি হবে। আবার ব্যবস্থা ঠিক হওয়ার পরেও অনেকদিন পর্যন্ত নির্বাচন করা না গেলে তার ফল হবে আরো ভয়াবহ। নির্বাচনের জন্য কোনটা যে সঠিক সময়, সেটা মানুষই নির্ধারণ করবে।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews