আফগানিস্তানে তালেবানের উত্থানে বড় সংকটের মুখে পড়েছেন দেশ-বিদেশের ব্যবসায়ীরা। সীমান্তবর্তী শহরগুলো বিদ্রোহী গোষ্ঠীটির দখলে চলে যাওয়ায় পণ্য পরিবহণ খরচ হু হু করে বাড়ছে। ব্যবসায়ীদের একদিকে তালেবানকে ট্যাক্স দিতে হচ্ছে। কর ছাড় দিচ্ছে না সরকারও। তবে তালেবানের কারণে বড় অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। গত এক মাসেই সরকারের ক্ষতি হয়েছে অন্তত ৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার। এখানেই শেষ নয়, মোড়ে মোড়ে ‘টি মানি’র জন্য হাত পাতছে পুলিশ-আর্মির সদস্যরা। পথে ওঁৎ পেতে আছে ডাকাত দলও। পণ্য ছাড়াতে তাদেরও গুনতে হচ্ছে মোটা অঙ্কের নোট।
মার্কিন ও ন্যাটো সেনারা চলে যাওয়ার পর গত কয়েক মাসে আফগানিস্তানের বেশিরভাগ অঞ্চল দখল করে নিয়েছে তালেবান।
আন্তর্জাতিক সীমান্তের ৯০ শতাংশই এখন তাদের দখলে বলে দাবি গোষ্ঠীটির। শুধু তাই নয়, এসব সীমান্তের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য রুটগুলোও এখন তারাই নিয়ন্ত্রণ করছে। তোলো নিউজ জানিয়েছে, গত এক মাসে তালেবানের কাছে সীমান্তবর্তী শহরগুলোর অন্তত সাতটি রাজস্ব বিভাগের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে সরকার।
শহরগুলোর মধ্যে রয়েছে হেরাত প্রদেশের ইরান সীমান্তবর্তী ইসলাম কালা, ফারাহ প্রদেশের আবু নাসর ফারাহি, পাকিস্তান সীমান্তে কান্দাহার প্রদেশের স্পিন বোলদাক, তাখান প্রদেশের আই খানুম, পাকতিয়া প্রদেশের দান্দ পাতান ও কুন্দুজ প্রদেশের শিরখান সীমান্ত ক্রসিং। এর ফলে কোটি কোটি ডলার রাজস্ব হারাচ্ছে আফগান সরকার। চলতি সপ্তাহে আফগান অর্থ মন্ত্রণালয় এক রিপোর্টে জানিয়েছে, সীমান্তবর্তী শহরগুলোর নিয়ন্ত্রণ হারানোর কারণে গত এক মাসে অন্তত ৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার রাজস্ব হারিয়েছে তারা।
চলতি মাসের শুরুর (৬ জুলাই) দিকে পশ্চিমাঞ্চলের স্পিন বোলদাক সীমান্ত ক্রসিং দখলে নেয় তালেবান। এ ক্রসিংটি দক্ষিণ আফগানিস্তানের বেশিরভাগ অঞ্চলের একটি অর্থনৈতিক লাইফলাইন হিসাবে বিবেচিত। পাকিস্তান থেকে আসা সব পণ্যের প্রবেশদ্বার হিসাবে কাজ করে এটা। দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের চামান থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার পণ্যবাহী ট্রাক এ ক্রসিং পার হয়ে ওপারে স্পিন বোলদাকের মধ্যদিয়ে কান্দাহারে যায়। ফেরার পথে আফগানিস্তান থেকে কৃষিজাত বিভিন্ন পণ্য নিয়ে আসে। এএফপি জানিয়েছে, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের এই দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য শত শত কোটি ডলারের। এ বাণিজ্য থেকে প্রতিবছর কোটি কোটি ডলার রাজস্ব আয় করে আফগান সরকার। কিন্তু চলতি মাসে সীমান্ত শহরটি তালেবানের দখলে চলে যাওয়ায় থমকে যায় বাণিজ্য। চলতি সপ্তাহেই ফের চালু হয়েছে। কিন্তু এর সব নিয়ন্ত্রণ এখন তালেবানের হাতে। ফলে চরম বিপাকে পড়েছে ব্যবসায়ীরা। কারণ তাদের পণ্য পরিবহণের খরচ কয়েকগুণ বেড়ে গেছে।
পাকিস্তানের চামান স্থলবন্দরে এএফপিকে এক সাক্ষাৎকারে হেদায়েতুল্লাহ খান নামে এক ট্রাক চালক বলেন, ‘আমরা ট্রাকে করে আঙুর নিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু পথে আমাদের অন্তত তিন জায়গায় চাঁদা দেওয়া লেগেছে।’ তিনি জানান, প্রথমে এক জায়গায় ৩ হাজার রুপি (২০ ডলার), এরপর আরেক জায়গায় ২ হাজার রুপি এবং শেষে আরও এক জায়গায় ১ হাজার রুপি চাদা দিতে হয়েছে। এই ট্রাকচালক আরও জানান, সীমান্ত পার হয়েই প্রথমে স্পিন বোলদাকে তালেবানকে ট্যাক্স দিতে হয়েছে। ওদিকে কান্দাহারে ট্যাক্সের জন্য অপেক্ষায় ছিল আফগান সরকারের শুল্ক কর্মকর্তারা। টাকা দিতে হয়ে তাদেরও। একই অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন পাক-আফগান জয়েন্ট চেম্বার অব কমার্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট ইমরান কাকার। তিনি জানান, সম্প্রতি তার একটি ট্রাক কাপড় নিয়ে কান্দাহার যাচ্ছিল। সীমান্ত পার হয়ে স্পিন বোলদাকে পৌঁছাতেই প্রায় দেড় লাখ আফগান রুপি (১ হাজার ডলার) চাঁদা নেয় তালেবান। আবার কান্দাহারে পৌঁছার পর সরকারকেও ফের ট্যাক্স দিতে হয়েছে। কাকার বলেন, ‘এভাবে উভয়পক্ষকেই আমাদের টাকা গুনতে হচ্ছে।’
দোভাষীদের প্রথম দল যুক্তরাষ্ট্রের পথে : অবশেষে অপেক্ষার প্রহর শেষ হচ্ছে। আফগান দোভাষীদের পুনর্বাসন শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। প্রথম ধাপে আড়াই হাজার আফগান দোভাষী ও তাদের পরিবার যুক্তরাষ্ট্রে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে একটি দল পৌঁছে গেছে। ২২১ জন দোভাষী ও তাদের পরিবারকে নিয়ে একটি বিমান শুক্রবার ওয়াশিংটন ডালাস ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে অবতরণ করেছে। প্রাথমিকভাবে তাদেরকে রাজধানীর ফোর্ট লি আর্মি বেজে রাখা হবে। এখানেই তাদের বিশেষ অভিবাসী ভিসা (এসআইভি) প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। এপি।
আগস্টের শেষ নাগাদ আফগানিস্তান ছেড়ে যাবে মার্কিন বাহিনীর অবশিষ্টাংশ। মে মাসে ওই প্রক্রিয়া শুরুর পর থেকে তালেবানরা দেশটির একের পর এক অংশ দখলে নিচ্ছে। এরপর থেকে জীবন নিয়ে শঙ্কায় আছেন দোভাষীরা। এরই মধ্যে কমপক্ষে ৩০০ আফগান মিত্র ও তাদের পরিবারকে হত্যা করার খবর পাওয়া গেছে।