সবজি উৎপাদন

বিরূপ আবহাওয়ার বিপদ

ভোক্তাগণ যখন বাজার লইয়া উদ্বিগ্ন, তখন খোদ উৎপাদকের পরিস্থিতি যে অধিকতর নাজুক; বৃহস্পতিবার সমকালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে তাহা পরিস্ফুট। আর বিরূপ আবহাওয়ার কারণে সবজি উৎপাদনে কৃষকের যেই সর্বনাশ ঘটিয়াছে, বাজারে তাহার প্রভাবে ভোক্তা নাজেহাল হইতেছে অধিক মাত্রায়। বৃহস্পতিবার সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে যথার্থই উঠিয়া আসিয়াছে, বন্যা-খরা-বৃষ্টিতে বিস্তীর্ণ সবজি ক্ষেতের সর্বনাশ। শীতকালীন সবজি চাষের মৌসুম সমাগত হইলেও প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে উৎপাদন লইয়া উদ্বেগজনক শঙ্কা দেখা দিয়াছে। সমকালের প্রতিবেদনে যদিও বন্যা, খরা ও বৃষ্টির কারণে চট্টগ্রামের কৃষকের বেদনা ফুটিয়া উঠিয়াছে, বাস্তবে সমগ্র দেশের চিত্র অভিন্ন নহে। বোরো মৌসুম আরম্ভ হইলেও কৃষক রহিয়াছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায়। শাকসবজির ক্ষেত্রে তাহাদের বিনিয়োগ উঠিয়া আসিবে কিনা, তাহা লইয়াও শঙ্কা কৃষকের।

অতিবৃষ্টি ও বন্যার কারণে এইবার আগাম শীতকালীন সবজি কৃষক উৎপাদন করিতে পারেনি। বীজতলা প্রস্তুতকরণের ক্ষেত্রে প্রতিকূল পরিবেশ বাধা হইয়া দাঁড়াইয়াছে। চন্দনাইশ ও সাতকানিয়া উপজেলার মধ্য দিয়া প্রবাহিত শঙ্খ নদীর পাশের কৃষক আবু তৈয়বের বাস্তবতা সমকালে উঠিয়া আসিয়াছে। তিনি সবজি চাষ করার জন্য দেড় মাস পূর্বে একবার জমি প্রস্তুত করিলেও বন্যার পানি আসিয়া নষ্ট করিয়া দিয়াছে। ধনিয়া পাতার জন্য নূতন করিয়া জমি তৈয়ার করিলেও বাজারে তুলিবার পূর্বে উহাও বিনষ্ট হইয়াছে বৃষ্টির পানিতে।
একদিকে বাজারে পর্যাপ্ত সবজির অভাবে দাম ভোক্তার নাগালের বাহিরে। অন্যদিকে সমকালের প্রতিবেদনে উঠিয়া আসিয়াছে শূন্য পড়িয়া থাকা কৃষকের চাষযোগ্য বিস্তীর্ণ ভূমি। আমরা মনে করি, যেই সকল কৃষক ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত, উহাদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করিতে হইবে। নূতন করিয়া তাহারা যাহাতে সবজি উৎপাদন করিতে পারে, তজ্জন্য অর্থনৈতিক সহায়তার দরকার হইলেও কৃষি বিভাগের মাধ্যমে তাহা প্রদানের ব্যবস্থা করা চাই।

নাগরিকের নিয়মিত খাদ্য তালিকায় শাকসবজি অন্যতম উপাদান হইলেও ইহার বাড়তি মূল্যের কারণে অপুষ্টির শঙ্কা দেখা দিয়াছে। সবজির মাধ্যমে পুষ্টিপ্রাপ্তির যেই সুযোগ ছিল, উহাও ঊর্ধ্বমুখী। সবজির বাজার স্থিতিশীল করিতে প্রথমত ইহার উৎপাদন বৃদ্ধি করিবার বিকল্প নাই। বন্যা, খরা কিংবা বৃষ্টিপাত তথা প্রতিকূল আবহাওয়া সেই উৎপাদনে প্রভাব ফেলিয়াছে। তবে সময় এখনও শেষ হইয়া যায় নাই। বিশেষত রবি মৌসুম মাত্র আসিয়াছে। কালক্ষেপণ না করিয়া এই সময়কে কৃষক কাজে লাগাইতে পারিলে সবজির সংকট দূর হইতে পারে।

এখন সকল জেলাতেই প্রায় বৎসরব্যাপী সবজি চাষের মাধ্যমে মানুষের উপকার হইলেও কৃষক তাহার সুফল কতটা পাইতেছে, উহাই বড় প্রশ্ন। তাহাদের লাভের মধু ফড়িয়া খায় বলিয়া যেই অভিযোগ রহিয়াছে, সেইখানে কৃষক কীভাবে যথাযথ দাম পাইয়া উপকৃত হইতে পারে, তাহাও নিশ্চিত করা চাই। কৃষকের পণ্য সরাসরি ভোক্তার হস্তে তুলিয়া দিবার দায়িত্ব প্রশাসন লইতে পারিলে একদিকে কৃষক লাভবান হইবে, অপরদিকে ভোক্তাও উপকৃত হইবে।
স্মরণে রাখিতে হইবে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আবহাওয়ার অস্থিরতা ক্রমশ বাড়িবে বৈ কমিবে না। এহেন পরিস্থিতিতে আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাব উতরাইয়া সবজি উৎপাদন কীভাবে অব্যাহত রাখা যায়, সেই ভাবনা মস্তিষ্কে লইতে হইবে। বিশেষ করিয়া সবজি সংরক্ষণ বিষয়ে এই
ক্ষেত্রে জোর দেওয়া চাই। সঠিকভাবে সংরক্ষণ করিয়া সবজি দীর্ঘদিন রাখিবার ব্যবস্থা সুলভে নিশ্চিত করিতে পারিলে প্রতিকূল আবহাওয়াও উহার দাওয়াই হইতে পারে।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews