ছবির উৎস, Empics
ছবির ক্যাপশান,
সৌদি প্রকল্পে বাংলাদেশে পাঁচ শতাধিক মসজিদ নির্মাণে অর্থায়নের কথা ছিল
Author,
সাইয়েদা আক্তার
Role,
বিবিসি বাংলা, ঢাকা
২৭ জুন ২০১৮
বাংলাদেশে সৌদি অর্থায়নে যে ৫৬০টি 'মডেল মসজিদ' তৈরির যে পরিকল্পনা ছিল, এখন তার অর্থায়ন করতে যাচ্ছে সরকার নিজেই।
দেশের ইতিহাসে ধর্মীয় খাতে এককভাবে সর্বোচ্চ ব্যয়ের প্রকল্প এটিই।
জানা যাচ্ছে, সৌদি অর্থ এখনো পাওয়া যায় নি। কিন্তু সেক্ষেত্রে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প সরকার কেন নিজেরাই বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে?
বিশ্লেষকদের অনেকেই বলছেন, জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সাধারণত সরকার এ ধরণের পদক্ষেপ নিয়ে থাকে।
গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলছিলেন, নির্বাচনের আগে জনতুষ্টির জন্য জনপ্রিয় প্রকল্পে সরকার অর্থায়ন করতে চায়, এক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে।
"নির্বাচনের আগে প্রত্যেক সরকারের একটা প্রবণতা থাকে জনপ্রিয় কিছু প্রকল্প হাতে নেবার, যাতে জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যায়। সে কারণে জাতীয় বাজেটেও এমন কিছু প্রকল্প থাকে যেগুলো হয়ত খুব প্রয়োজনীয় না, কিন্তু তাতে বরাদ্দ থাকে। এটিও তেমন একটি প্রকল্প বলেই মনে হয়।"
নতুন সময়সমী অনুযায়ী, বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় ১টি করে ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র তৈরির এ প্রকল্প ২০২০ সালের ডিসেম্বর নাগাদ শেষ হবে।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অবশ্য জানিয়েছে, প্রকল্পে অর্থায়নে এখনো অস্বীকৃতি জানায়নি সৌদি আরব। 'তবে মসজিদের কাজ ফেলে রাখতে পারি না' বলেই কাজ শুরু করে দেয়া হচ্ছে - জানিয়েছেনএকজন কর্মকর্তা।
ছবির উৎস, Getty Images
ছবির ক্যাপশান,
সরকার বলছে, তারা নিজেরাই এ মসজিদগুলো তৈরিতে অর্থায়ন করবে
প্রশ্ন ওঠে, সৌদি আরব কেন প্রতিশ্রুত অর্থায়ন করছে না? সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, ঐ প্রকল্পে অর্থায়নের বিষয়ে এখনো নেতিবাচক কিছু জানায়নি সৌদি আরব।
"এটা এমন নয় যে তাদের অর্থায়ন করার কথা, আমরা রিকোয়েস্ট করেছিলাম, তারা সম্মত হয়েছে। এখন তারা আমাদের মানা করেনি, বা রিগ্রেট করেনি। তবে কি, এ ধরণের বড় প্রকল্পে কিছুটা সময় লাগে, বারো পনের মাস লাগে। নাথিং আনইউজুয়াল" - বলেন তিনি।
মি. মসীহ জানিয়েছেন, হজ্জের মৌসুমের পর একটি সৌদি দল বিষয়টি নিয়ে আলাপ করতে বাংলাদেশে আসবে, এর পরেই হয়তো বিষয়টি সুরাহা হয়ে যাবে।
শুরুতে এই মডেল মসজিদ তৈরির এ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৯ হাজার ৬২ কোটি টাকা, এর মধ্যে সৌদি সরকারের অনুদান হিসেবে দেবার কথা ছিল আট হাজার ১৭০ কোটি টাকা। কিন্তু মঙ্গলবার একনেকে যে সংশোধিত প্রকল্প পাস করা হয়েছে, তার ব্যয় ধরা হয়েছে সাড়ে আট হাজার কোটি টাকার বেশি। আর পুরো ব্যয়ই সরকারের থেকে বহন করা হবে। এটি ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতায় ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাস্তবায়ন করবে।
ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজালের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, সৌদি অর্থায়ন পাওয়া না গেলে সরকার নিজেই কেন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে?
তিনি বলেন, "তারা বলেছিল তারা টাকা দেবে, কিন্তু সেটা এখনো হাতে না পাওয়ায় সরকার কাজ শুরু করতে যাচ্ছে। এটা আল্লাহর ঘরের কাজ, পরে কেউ শরিক হতে চাইলে হবে, তাতে বাধা নেই। কিন্তু মসজিদের কাজ, আমরা তো ফেলে রাখতে পারি না।"
ছবির উৎস, Getty Images
ছবির ক্যাপশান,
নির্মিতব্য মসজিদগুলোকে বলা হয়েছিল 'মডেল মসজিদ'
বাংলাদেশে সরকার বলছে, ২০১৪ সালে প্রতিটি জেলা এবং উপজেলায় একটি করে মডেল মসজিদ তৈরি করার একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিল। পরে ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সৌদি আরব সফরের সময় তার সঙ্গে বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ আল-সৌদের বৈঠকের পর বাংলাদেশের ঐ প্রকল্পে অর্থায়ন করতে সম্মত হয় দেশটি।
পরে ২০১৭ সালে প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি বা একনেক সভায় অনুমোদন দেয়া হয়।সে সময়ই ২০১৯ সালের ডিসেম্বর নাগাদ প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় ধরা হয়।
কিন্ত এরপর এক বছর পেরিয়ে যাবার পরেও সৌদি আরবের অর্থায়ন না পাওয়ায় মঙ্গলবার সরকারের সাহায্য প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত হয়নি।
এরপর গতকাল পরিকল্পনামন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল ঘোষণা করেন, সৌদি অর্থায়ন না পাওয়ায় এখন সরকার নিজেই এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে। মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত সংশোধিত প্রকল্প পাস হয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি বা একনেক সভায়।
বিবিসি বাংলায় আরও পড়ুন: