ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের ব্যালট পেপার আলাদা হলেও ভোট দিয়ে জমা দিতে হবে একই বাক্সে। ১২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠেয় এ নির্বাচনে গণভোটের জন্য গোলাপি রঙের ব্যালট থাকবে। আর সংসদ নির্বাচনের জন্য আগের মতোই থাকবে সাদা রঙের ব্যালট। সংসদ ও হ্যাঁ-না (গণভোট) ভোট দিতে হবে সিল দিয়ে। তবে পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিতে হবে টিক/ক্রস চিহ্ন দিয়ে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন বৃহস্পতিবার ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণা করেন। সেদিনই গণভোটের প্রশ্ন, ভোটদানের সময়, রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগ, ভোট গ্রহণ পদ্ধতি নির্ধারণ, ফল প্রকাশ, ফল একত্রীকরণ ও গেজেট প্রকাশ সংক্রান্ত পরিপত্র জারি করে নির্বাচন কমিশন।
ইসি সচিবালয়ের উপসচিব (নির্বাচন পরিচালনা-২ অধিশাখা) মোহাম্মদ মনির হোসেন স্বাক্ষরিত এ পরিপত্র মন্ত্রিপরিষদ বিভাগসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগে পাঠানো হয়েছে। পরিপত্রে বলা হয়, ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনের সরবরাহ করা স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সই গণভোটের ব্যালট বাক্স হিসেবে ব্যবহৃত হবে। ভোটার তার ভোট দিয়ে জাতীয় সংসদের ব্যালট ও গণভোটের ব্যালট একই বাক্সে ফেলবেন।
ভোট দেবেন যেভাবে : সংসদ নির্বাচনের ব্যালট পেপারের সঙ্গে গণভোটের একটি ব্যালট পেপার সরবরাহ করা হবে এবং গণভোটের ব্যালট পেপারে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ তে সিল দিয়ে ব্যালট পেপার ভাঁজ করে নির্ধারিত ব্যালট বাক্সে ফেলতে হবে। পোস্টাল ব্যালটের ক্ষেত্রে ব্যালট পেপারে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ এর পাশে ফাঁকা ঘরে টিক বা ক্রস চিহ্ন দিয়ে ভোট দিতে হবে।
গণভোটের বিষয় : জনগণের মতামত গ্রহণের জন্য গণভোটের ব্যালট পেপারে ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ অনুযায়ী সংবিধান সংস্কারের গুরুত্বপূর্ণ চারটি প্রস্তাব রাখা হয়েছে। এসব প্রশ্নের বিপরীতে ভোটারদের কাছে কেবল একটি ঘরে ‘হ্যাঁ’ অথবা ‘না’ ভোট চাওয়া হয়েছে।
ব্যালট পেপারটি এমন : জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫ এবং জুলাই জাতীয় সনদে লিপিবদ্ধ সংবিধান সংস্কার সম্পর্কিত নিম্নলিখিত প্রস্তাবসমূহের প্রতি আপনার সম্মতি আছে? : (হ্যাঁ/না)
(ক) নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নির্বাচন কমিশন এবং অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান জুলাই সনদে বর্ণিত প্রক্রিয়ার আলোকে গঠন করা হবে।
(খ) আগামী জাতীয় সংসদ হবে দুই কক্ষ বিশিষ্ট ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে ১০০ সদস্যবিশিষ্ট একটি উচ্চকক্ষ গঠিত হবে এবং সংবিধান সংশোধন করতে হলে উচ্চকক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের সম্মতির প্রয়োজন হবে।
(গ) সংসদে নারী প্রতিনিধি বৃদ্ধি, বিরোধী দল হতে ডেপুটি স্পিকার ও সংসদীয় কমিটির সভাপতি নির্বাচন, মৌলিক অধিকার, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, স্থানীয় সরকার, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতাসহ তফসিলে বর্ণিত যে ৩০টি বিষয়ে জুলাই জাতীয় সনদে ঐকমত্য হয়েছে- সেগুলো বাস্তবায়নে আগামী সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী রাজনৈতিক দলগুলো বাধ্য থাকবে।
(ঘ) জুলাই জাতীয় সনদে বর্ণিত অপরাপর সংস্কার রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিশ্রুতি অনুসারে বাস্তবায়ন করা হবে।
ভোট গ্রহণ একসঙ্গে, আলাদা করে গণনা : গণভোট অধ্যাদেশ জারি হলেও কোনো বিধিমালা করা হয়নি; এ ক্ষেত্রে ভোটদান থেকে ফল প্রকাশের সব ধাপ তুলে ধরা হয়েছে গণভোট সংক্রান্ত পরিপত্রে।
সংসদ নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন যাদের রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগ করেছে, তারাই গণভোটেরও দায়িত্ব পালন করবেন। একই ভাবে প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসার রয়েছেন; তারাই থাকবেন ভোট গ্রহণ কর্মকর্তার দায়িত্বে।
ভোট গ্রহণ কর্মকর্তারা একই সঙ্গে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট কার্যক্রম পরিচালনা করবেন বলে পরিপত্রে বলা হয়েছে।
এবার ভোটার প্রায় পৌনে ১৩ কোটি; ব্যালট পেপার লাগবে দ্বিগুণ। ভোটার সংখ্যার সমান সংখ্যক ব্যালট পেপার সংসদ ও গণভোটের জন্য মুদ্রণ করা হবে।
পরিপত্রে বলা হয়, ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার পর প্রিসাইডিং অফিসার ভোট কেন্দ্রে বা পোস্টাল ভোটের গণনা কেন্দ্রে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে নিয়োজিত এজেন্টদের উপস্থিতিতে (যদি থাকে) প্রত্যেকটি ব্যালট বাক্স খুলে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যালট ও গণভোটের ব্যালট আলাদা করবেন। এরপর সংসদ নির্বাচনের ব্যালটগুলো প্রার্থীভিত্তিক এবং গণভোটের হ্যাঁ-সূচক ও না-সূচক ব্যালট পেপার আলাদা করে গণনা করা হবে বলে এতে জানানো হয়েছে। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে। দুই ভোট একসঙ্গে হওয়ায় এবার ভোট গ্রহণের সময় এক ঘণ্টা বাড়িয়ে ৯ ঘণ্টা করা হয়েছে। সেদিন সকাল সাড়ে ৭টা থেকে শুরু হয়ে ভোট গ্রহণ চলবে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত।