মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন

অভিনন্দন ডোনাল্ড ট্রাম্প

বুধবার অনুষ্ঠিত এক ঐতিহাসিক নির্বাচনে পরবর্তী চার বৎসরের জন্য পুনরায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হইলেন রিপাবলিকান দলীয় প্রার্থী ডোনাল্ড জে ট্রাম্প। ঘোষিত ফল অনুযায়ী, ইতোমধ্যে ট্রাম্প জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ২৭০ ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট অপেক্ষা অন্তত ছয় ভোট বেশি পাইয়াছেন।

বুধবার ফ্লোরিডার পাম বিচে প্রদত্ত প্রথম বিজয়-ভাষণে ট্রাম্পও দাবি করিয়াছেন, অন্তত ৩১৫টি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট তাঁহার ঝুলিতে আসিবে। আমরা বিশাল এই বিজয়ের জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্প, তাঁহার রানিংমেট জে ডি ভান্স, সর্বোপরি যুক্তরাষ্ট্রের সর্বাধিক প্রাচীন দল রিপাবলিকান পার্টিকে অভিনন্দন জানাই।

২০১৬ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হইয়া মার্কিন এই ধনকুবের প্রথমবার হোয়াইট হাউসের বাসিন্দা হইয়াছিলেন। ২০২০ সালের নির্বাচনে তিনি ডেমোক্র্যাট জো বাইডেনের নিকট পরাজিত হন। তথাপি ট্রাম্প নিরস্ত হন নাই। তৃতীয়বারের চেষ্টায় বিরল এক নজির স্থাপন করিয়া দ্বিতীয়বার মার্কিন প্রেসিডেন্ট হইলেন। বিশেষত অর্থনীতি ও অভিবাসন– নির্বাচনের প্রধান দুই ইস্যুতে ডেমোক্র্যাট প্রার্থীর বিরুদ্ধে জনমত ছিল প্রবল। বর্তমান বাইডেন প্রশাসনের বিরুদ্ধে, যাহার আঁচ ভাইস প্রেসিডেন্টরূপে কমলা হ্যারিসকেও পাইতে হইয়াছে– জনমত কতটা প্রবল উহার প্রকাশ একই সঙ্গে অনুষ্ঠিত সিনেট ও প্রতিনিধি সভার একটা অংশের নির্বাচনী ফলেও ঘটিয়াছে। রিপাবলিকানরা এইবার হোয়াইট হাউস দখল, তৎসহিত কংগ্রেসের দুই কক্ষ সিনেট ও প্রতিনিধি সভায়ও সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করিয়াছে।

এই নির্বাচনটির সৌন্দর্য হইল, কোনো পক্ষ হইতেই কোনো অনিয়মের অভিযোগ উঠে নাই এবং জনগণ যাহাকে যোগ্য মনে করিয়াছে তাহাকেই রাষ্ট্রের চালকের আসনে বসাইতে পারিয়াছে। বাংলাদেশের ন্যায় রাষ্ট্রের জন্য, যেখানে নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনৈতিক অস্থিরতা দীর্ঘদিন যাবৎ সাংবৎসরিক সমস্যারূপে বিরাজ করে, সদ্য সমাপ্ত মার্কিন নির্বাচনটি শিক্ষণীয় হইতে পারে।

গত বৎসরের শুরুতেই সামাজিক মাধ্যমে ট্রাম্প লিখিয়াছিলেন, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদে থাকিলে তিনি এক দিনের মধ্যেই ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ বন্ধ করিতেন। দ্বিতীয় দফায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হইয়া ক্ষমতা হস্তগত হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই যুদ্ধ বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়াছিলেন তিনি। আশার বিষয়, নির্বাচনী ফল ঘোষণার পর প্রদত্ত ভাষণেও তিনি বলিয়াছেন, তাঁহার পূর্বের মেয়াদে যদ্রূপ কোথাও যুদ্ধ বাধান নাই, তদ্রূপ এই মেয়াদেও কোথাও যুদ্ধ থাকিবে না। তদুপরি নির্বাচনী প্রচারণায় রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নেরও ইঙ্গিত দিয়াছেন ট্রাম্প। তাঁহার প্রবাদপ্রতিম ইসরায়েলপ্রীতি সত্ত্বেও তিনি এইবার মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধ বন্ধে কাজ করার আশ্বাস দিয়াছেন। আমরা মনে করি, বিশ্বের সর্বাধিক শক্তিধর রাষ্ট্রের কর্ণধাররূপে ট্রাম্প আগামী দিনগুলিতে উক্ত প্রতিশ্রুতিসমূহ পালন করিলে বিশ্ব ক্রমশ শান্তির দিকে অগ্রসর হইবে। মনে রাখিতে হইবে, মাত্র চার বৎসর পূর্বে বিপুল জয় লইয়া ক্ষমতাসীন ডেমোক্র্যাটদের জনপ্রিয়তা তলানিতে পৌঁছার অন্যতম কারণ বিশ্বব্যাপী যুদ্ধ বাধাইয়া দেওয়ার বিষয়ে ডেমোক্র্যাট শিবিরের বিপজ্জনক প্রবণতা। জো বাইডেন ক্ষমতাসীন হইবার পরপরই ডেমোক্র্যাট শিবির বাংলাদেশসহ বর্তমান বিশ্বের অর্থনৈতিক দুর্দশার জন্য দায়ী ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ বাধাইয়া দেয়। ইসরায়েলকে হিসাবহীন অর্থ এবং অস্ত্র সহায়তা দিয়া মধ্যপ্রাচ্যে অশান্তির বীজ বপনেও দায়ী বাইডেন প্রশাসন। সে কারণে ডেমোক্র্যাটরা তাহাদের দীর্ঘদিনের ভোটব্যাংক মুসলিমদের বিরাগভাজন হন। ট্রাম্প উল্লিখিত প্রতিশ্রুতি পালনে ব্যর্থ হইলে রিপাবলিকান শিবিরও অনুরূপ প্রতিক্রিয়ার সন্মুখীন হইবে– ইহা হলফ করিয়া বলা যায়।

নিঃসন্দেহে ইহা উদ্বেগজনক, নির্বাচনী প্রচারে ট্রাম্প আমেরিকায় কথিত অনুপ্রবেশ বন্ধের যে প্রতিশ্রুতি দিয়াছিলেন, তাহাতে অন্যান্য উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশের ন্যায় বাংলাদেশও ক্ষতিগ্রস্ত হইবে। বুধবার বিজয়-ভাষণের মঞ্চ হইতেও ট্রাম্প অনুরূপ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করিয়াছেন। যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতীত যে কোনো দেশে ভিন্ন দেশের নাগরিকদের অবস্থান অবশ্যই অগ্রহণযোগ্য। তবে সেই ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক রীতিনীতি অনুসরণপূর্বক ভুক্তভোগীদের যথাযথ আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হইবে বলিয়া আমরা বিশ্বাস করি। সর্বোপরি অননুমোদিত অভিবাসনের বিষয়টি মানবিক দৃষ্টিতে দেখা হইবে– এমন প্রত্যাশা আমাদের।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews