দিন দিন উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতি। শেষবেলায় বাইডেন প্রশাসনের শক্তিশালী দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এমনকি পালটা আক্রমণে পারমাণবিক হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে রাশিয়া। ফলে ইউক্রেনে যে কোনো সময়ই হামলার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে কিয়েভজুড়ে দেখা দিয়েছে থমথমে পরিবেশ। বুধবার সিএনএনের প্রতিবেদনে উঠে উঠেছে এই তথ্য। 

ইউক্রেনের হামলার আশঙ্কায় যুক্তরাষ্ট্র রাজধানী কিয়েভে তাদের দূতাবাস বন্ধ ঘোষণা করেছে। মার্কিন দূতাবাসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ‘বড় ধরনের বিমান হামলার’ সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়ার পর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বুধবার মার্কিন দূতাবাসের এক নিরাপত্তা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে দূতাবাস বন্ধ রাখা হয়েছে এবং দূতাবাস কর্মীদের তাদের অবস্থান থেকে সরে না যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে’। একই সঙ্গে বিমান হামলার সতর্কতা জারি হলে মার্কিন নাগরিকদের নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও মস্কো ও ওয়াশিংটনের রাষ্ট্রনেতাদের মধ্যকার হটলাইন (ফোনে সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যম) এখন আর চালু নেই।

শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, ইউক্রেনে নিজেদের দূতাবাস বন্ধ রেখেছে ইউরোপের তিন দেশ। বুধবার ইতালি, স্পেন এবং গ্রিসও হামলার শঙ্কায় বন্ধ রেখেছে নিজেদের দূতাবাস।

এদিকে বুধবার ভোরে কিয়েভে রুশ ড্রোন হামলার ঘটনা ঘটেছে। কিয়েভ সিটি মিলিটারি প্রশাসনের প্রধান সেরহি পপকো জানিয়েছেন, ড্রোন হামলার ধ্বংসাবশেষ শহরের ডনিপ্রোভস্কি এলাকায় পড়েছে। তিনি এক টেলিগ্রাম বার্তায় জানান, ‘ড্রোন হামলার ঘটনায় একটি বহুতল আবাসিক ভবনের অ্যাপার্টমেন্টে আগুন ধরে গেছে। হতাহতের তথ্য যাচাই করা হচ্ছে’।

সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়ার ড্রোন হামলায় কিয়েভে এক ডজনেরও বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে এবং ইউক্রেনজুড়ে বিদ্যুৎ অবকাঠামোতে আঘাত হানায় ব্যাপক ব্ল্যাকআউটের ঘটনা ঘটছে। সম্প্রতি একের পর এক যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে যুদ্ধাস্ত্র ব্যবহারের অনুমোদন পাচ্ছে ইউক্রেন। দূরপাল্লার পর ইউক্রেনে অ্যান্টিপারসোনেল ল্যান্ডমাইন সরবরাহের অনুমতি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

মার্কিন কর্মকর্তারা বুধবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, ইউক্রেন তার নিজস্ব ভূখণ্ডে ল্যান্ডমাইন ব্যবহার করবে বলে আশা করে যুক্তরাষ্ট্র। যদিও তারা বেসামরিক জনবহুল এলাকায় সেগুলো ব্যবহার না করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বাইডেনের এই পদক্ষেপের খবর প্রথমে প্রকাশ করেছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট। যদিও এর আগে বেসামরিক জনগোষ্ঠীর প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে উদ্বেগের কারণে ইউক্রেনকে ল্যান্ডমাইন দিতে অনীহা প্রকাশ করেছিলেন বাইডেন। তবে বাইডেনের এ সিদ্ধান্তকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে মন্তব্য করেছে অ্যান্টিমাইন ক্যাম্পেইনাররা। এরইমধ্যে রুশ বাহিনীর আক্রমণ ঠেকানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি অ্যান্টি-ট্যাংক মাইন পেয়েছে ইউক্রেন।

তবে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ইউক্রেন ভূখণ্ডে রুশ বাহিনীর অগ্রসর রোধের লক্ষ্যে অ্যান্টিপার্সোনেল মাইন দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে রাশিয়ায় হামলা চালানোর ক্ষেত্রে মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করতে জো বাইডেন অনুমতি দেওয়ার পর ভ্রাম্যমাণ আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ শুরু করেছে রাশিয়া।

রাশিয়ার জরুরিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের গবেষণা ইনস্টিটিউট বলেছে, ‘কেইউবিএম’ নামের এসব আশ্রয়কেন্দ্র পারমাণবিক বোমা হামলা এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট বিপর্যয় থেকে ৪৮ ঘণ্টার জন্য সুরক্ষা দিতে পারে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলো বিস্ফোরণ ও প্রচলিত অস্ত্রের আঘাত, ভবন থেকে নেমে আসা ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়া এবং বিপজ্জনক রাসায়নিক দ্রব্য ও অগ্নিকাণ্ডের প্রভাব থেকে রক্ষা করবে। তবে এমন আশ্রয়কেন্দ্রের নির্মাণকাজ শুরুর সঙ্গে বর্তমান কোনো সংকটের সম্পর্ক নেই বলে জানাচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

সম্প্র্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাইডেন ইউক্রেনকে রাশিয়ায় হামলা চালানোর ক্ষেত্রে দেশটিকে দেওয়া দূরপাল্লার মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছেন। বাইডেনের এ সিদ্ধান্তকে বেপরোয়া আখ্যা দিয়ে ক্রেমলিন বলেছে, যদি সত্যি মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাশিয়ায় হামলা চালানো হয়, তবে এর যথোপযুক্ত জবাব দেবে মস্কো।

‘কেইউবিএম’ দেখতে জাহাজে পণ্য পরিবহণে ব্যবহৃত মজবুত কনটেইনারের মতো। এর দুটি মডিউল রয়েছে। একটি কক্ষে ৫৪ জন আশ্রয় নিতে পারবেন। অন্যটি কারিগরি ব্লক হিসাবে ব্যবহারের জন্য। প্রয়োজনে এক একটি আশ্রয়কেন্দ্রে আরও মডিউল যুক্ত করা যাবে। গবেষণা ইনস্টিটিউটটি বলেছে, ভ্রাম্যমাণ এসব আশ্রয়কেন্দ্র নানাবিধ কাজের উপযোগী করে নির্মাণ করা হচ্ছে। এগুলো লোকজনকে প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও মানবসৃষ্ট দুর্ঘটনাসহ বিভিন্ন ধরনের হুমকি থেকে সুরক্ষা দিতে পারবে। নাগরিকদের নিরাপত্তায় এটিকে একধাপ গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি বলে উল্লেখ করেছে ইনস্টিটিউট।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews