স্বাস্থ্যই একটা মানুষের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ, এটা সর্বজনবিদিত। সুখে-আনন্দে জীবন অতিবাহিত করতে হলে টাকাপয়সা, ধনসম্পদের পাশাপাশি সুস্বাস্থ্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ। লোকমুখে প্রচারিত শব্দ হলো, সব সম্পদের বড় সম্পদ সুস্বাস্থ্য। সুতরাং নীরোগ থাকা এবং স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া অবশ্যই কর্তব্য এবং প্রতিজন মানুষই অসুস্থ হলে যে কোনো উপায়ে হোক সুস্থ-সবল হয়ে ফিরতে চায়।  রক্ত, মাংস, বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নিয়ে গঠিত মানব শরীরগুলো যতই সচেতনতার সঙ্গে নিয়ম মেনে চলুক না কেন, চলতে চলতে প্রত্যেকটা শরীর নানান কারণবশত বিভিন্ন সময়ে মারাত্মকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে। এই অসুস্থ শরীর চিকিৎসায় সুস্থ-সবল করে তোলার জন্য পৃথিবীর প্রতিটি দেশে রয়েছে স্বাস্থ্য পরিষেবা। আমাদের দেশেও রয়েছে, তবে তা অপ্রতুল।

১৭ কোটি জনসংখ্যার দেশে কয়েকটি প্রধান মহানগর যেমন ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহীসহ আরও কয়েকটি শহর-নগরে থাকা কিছুসংখ্যক হাসপাতাল ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে ভুগতে থাকা রোগীরা চিকিৎসার জন্য অন্যত্র ভরসা করতে পারে না। এর মধ্যে সাধারণ মধ্যবিত্ত বা গরিব জনসাধারণের মধ্যে আবার সব থেকে বেশি জনপ্রিয় ঢাকার কয়েকটি হাসপাতাল। মধুমেহ, হৃদরোগ, লিভারের সমস্যা, কিডনির সমস্যা, অর্শ, দীর্ঘস্থায়ী আমাশয়সহ পেটের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে সারা দেশের মানুষ ঝাঁকে ঝাঁকে ঢাকায় গিয়ে থাকে। স্থানীয় চিকিৎসা পরিষেবার বিফলতার ওপর রাগ-ক্রোধ ঝাড়তে গিয়ে বেশির ভাগ ভুক্তভোগীই মূল কারণের গভীরে না গিয়ে চিকিৎসককে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে বসে। কিন্তু চিকিৎসককে কাঠগড়ায় তুলে আখেরে কোনো ফায়দা হাসিল হবে কি? আসল কথা হলো পরিকাঠামো, উন্নত মানের চিকিৎসাসামগ্রী, হাসপাতালে পর্যাপ্তসংখ্যক চিকিৎসক, বেড, চিকিৎসাকর্মী ইত্যাদির জোগান।

আমাদের দেশে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ বা সিভিল হাসপাতালে কি পরিকাঠামো রয়েছে? লাখ লাখ লোক যে হাসপাতালের ওপর নির্ভরশীল, সে হাসপাতালে কটি বেড রয়েছে? ব্লাড ব্যাংকের অবস্থা কী? ল্যাবের অবস্থা কী? চিকিৎসক যদি ছয়টি টেস্ট লিখে দেন, তা হলে তার মধ্যে নিশ্চয় দুটি টেস্ট মেডিকেল কলেজ বা সিভিল হাসপাতালে পাওয়া যাবে না। আর বেসরকারি হাসপাতালগুলোর যে পরিমাণ চিকিৎসামূল্য সেই পরিমাণে পরিকাঠামো এবং ফলাফল নেই। সুতরাং মানুষ বাধ্য হয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে ঢাকায় ভিড় জমায়।

আর্থিক দিক থেকে সচ্ছল লোকজন অস্বস্তিবোধ করলেই যখন তখন উড়াল ধরে যেখানে সেখানে চলে যায়। সংকটজনক অবস্থায় এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করেও চলে যায় সুতরাং তাদের কাছে এটা সহজ স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। আমাদের সুরমা উপত্যকার অনেক দরিদ্রপীড়িত পিছিয়ে পড়া মানুষের কজনের সাধ্য আছে প্রয়োজনে ঢাকা যেতে পারবে? আর্থিকভাবে দুর্বলরা ট্রেনের স্লিপারে, ওয়েটিংয়ে, সাধারণ কামরায়, রাতে শৌচাগারের পাশে লাগেজ নিয়ে বসতে বসতে অসুস্থ বাবা-মা, ভাই, স্বামী-স্ত্রী, সন্তানদের নিয়ে যারা ঢাকায় যান। এই বৃহৎসংখ্যক সাধারণ মধ্যবিত্ত বা গরিবদের মধ্যে আবার আরেক অংশ আছে, যারা জমি বিক্রি করে, গৃহপালিত পশু বিক্রি করে, মা-স্ত্রীর গয়না বন্ধক রেখে, ঋণ নিয়ে অথবা সোশ্যাল মিডিয়ায় আর্থিক সহায়তা চেয়ে অর্থ সংগ্রহ করে চিকিৎসা করতে যান অথবা কেউ কেউ সারা জীবনের জমানো টাকা নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। প্রথম চিকিৎসা শেষে ওষুধ দেওয়ার পর কয়েক মাস পরে অনেককে আবারও গিয়ে চিকিৎসা করানোর জন্য বলা হয়। কিন্তু একবার যাওয়া-আসা, থাকা-খাওয়া, চিকিৎসা, ওষুধ সবকিছু নিয়ে যে খরচ হয় পরেরবার আর অনেকে যাওয়ার জন্য ভাবতেই পারে না। বরং ফিরে এসে ঋণ মেটানোর চাপে মানসিক অশান্তি, অনিদ্রা ইত্যাদিতে ভুগতে ভুগতে অন্য আরও বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। সুতরাং মুষ্টিমেয় আর্থিক সচ্ছলদের জন্য সমাধান আছে ফায়দাও আছে আর বৃহৎ অংশের গরিব জনসাধারণ, যারা রোগমুক্ত হয়ে সুস্বাস্থ্য নিয়ে বাঁচার স্বপ্নে প্রাণপণ চেষ্টা করে, তাদের কোনো সমাধান নেই। সমাধান কী এবং কোথায়? সরকারি উদ্যোগে উন্নত মানের হাসপাতাল তৈরি করাই আসল সমাধান। বিশেষত উপত্যকার মতো জনবহুল অঞ্চলের জন্য একটি এইম্স হাসপাতাল স্থাপন অত্যন্ত জরুরি। কারণ তখন সুলভ মূল্যে ভালো চিকিৎসা পরিষেবা লাভ করতে পারবে সাধারণ মানুষ।

লেখক : সাংবাদিক কলামিস্ট



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews