হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস (এইচএমপিভি) নিয়ে আতঙ্কের পরিবেশ চারিদিকে। চীনের পর বাংলাদেশসহ বেশ কয়েকটি দেশে এই ভাইরাস হানা দিয়েছে। এরই মধ্যে ফের এক প্রকার ভাইরাস নিয়ে হইচই শুরু হয়েছে। আমেরিকা জুড়ে হানা দিয়েছে ‘র্যাবিট ফিভার’। রোগটির নাম টুলারেমিয়া। শিশু থেকে বয়স্ক অনেকেই সংক্রমিত হচ্ছেন এই ভাইরাসে।
র্যাবিট ফিভার কী:
র্যাবিট ফিভার ভাইরাস ঘটিত রোগ নয়। এর পেছনে রয়েছে এক অতি সংক্রামক ব্যাক্টেরিয়া, যার নাম ফ্রান্সিসেল্লা টুলারেনসিস।
আমেরিকার সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) তথ্য অনুযায়ী, খরগোশ, ইঁদুর জাতীয় প্রাণি থেকে এই ব্যাক্টেরিয়া ছড়ায়। এই সব প্রাণির শরীরে ব্যাক্টেরিয়া বাসা বাঁধে। সেখান থেকে মাছি বা কোনও পতঙ্গের মাধ্যমে জীবাণু মানুষের শরীরে ঢুকতে পারে। প্রাণির দেহাবশেষ, মলমূত্র থেকেও ব্যাক্টেরিয়া ছড়ায়। খামারে যারা খরগোশ প্রতিপালন করেন, তাদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। পোষ্য খরগোশ থেকেও রোগ ছড়াতে পারে।
ফ্রান্সিসেল্লা টুলারেনসিস ব্যাক্টেরিয়া নোংরা ও অপরিস্রুত পানি থেকেও ছড়াতে পারে। আবার বাতাস বাহিত হয়েও এই ব্যাক্টেরিয়া ছড়ায় বলে জানা গেছে। বাতাসের পানিকণায় ভর করে এই ব্যাক্টেরিয়া বহু দূর অবধি ছড়াতে পারে। প্রাণিদের পাশাপাশি সংক্রমণ ঘটতে পারে মানুষের শরীরেও। আক্রান্তের হাঁচি-কাশি, থুতু-লালার মাধ্যমে খুব দ্রুত এক জনের থেকে অন্য জনের শরীরে ছড়াতে পারে এই রোগ।
র্যাবিট ফিভারের উপসর্গ ভয়ঙ্কর হতে পারে:
সাধারণত জ্বর, বমি, পেটখারাপ, গলাব্যথা, শ্বাসকষ্টের লক্ষণ দেখা দিতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে ত্বকে র্যাশ, ফুস্কুরি বা ত্বকের সংক্রমণও দেখা দিতে পারে। টুলারেমিয়ায় আক্রান্তদের বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্টের উপসর্গও দেখা গেছে।
সিডিসি জানিয়েছে, ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণ বাড়াবাড়ি পর্যায়ে গেলে ত্বকের আলসার হতে পারে, যাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলা হয় ‘আলসেরোগ্ল্যান্ডুলার টুলারেমিয়া।’ এতে শরীরের লসিকা গ্রন্থিগুলি ফুলে যেতে পারে।
চোখেও সংক্রমণ হতে পারে। চোখে ফুলে যাওয়া, লাল হয়ে ওঠা, দৃষ্টি ক্ষীণ হতে পারে। যাকে বলা হয় ‘অকুলোগ্ল্যান্ডুলার টুলারেমিয়া।’
নিউমোনিয়ার লক্ষণও দেখা দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট হতে পারে, যাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হচ্ছে ‘নিউমোনিক টুলারেমিয়া’। এই রোগ হলে রোগীকে ভেন্টিলেশনেও রাখতে হতে পারে।
টুলারেমিয়া থেকে বাঁচতে পরিচ্ছন্নতায় জোর দিতে বলছেন চিকিৎসকেরা। বাইরে বেরোলে মাস্ক পরা জরুরি। বার বার হাত ধুতে হবে। আক্রান্তের থেকে দূরে থাকাই ভালো। উপসর্গ দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। রাস্তাঘাটে কাটা ফল, স্যালাড, ঠান্ডা পানীয়ও খেতে বারণ করছেন চিকিৎসকেরা।