ছবির উৎস, Rakibul Islam
ছবির ক্যাপশান,
নবাব শেখের চলমান খাট-গাড়িটি নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ
Author,
অমিতাভ ভট্টশালী
Role,
বিবিসি নিউজ বাংলা, কলকাতা
২৭ মিনিট আগে
কদিন ধরেই একটা ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক মাধ্যমে, যেখানে দেখা যাচ্ছে যে এক ব্যক্তি বিছানার মাঝখানে বসে আছেন, আর তোষক, চাদর, বালিশসহ পুরো খাটটাই চলছে – ঠিক যেন একটা গাড়ি।
আসলেই এটা একটা চলমান বিছানা কিংবা চলমান খাট-গাড়ি।
পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা নবাব শেখ প্রায় দেড় বছরের পরিশ্রমে এই খাট-গাড়িটি বানিয়েছেন।
ঈদের দিন একটু 'ট্রায়াল' দিতে বেরিয়েছিলেন নিজের বিচিত্র এই গাড়িটি নিয়ে।
মুহূর্তেই সেই ভিডিও ভাইরাল হয়ে যায়। ওই চলমান-বিছানা দেখতে ব্যাপক ভিড়ও হচ্ছিল।
তবে নবাব শেখের এখন মন খারাপ। কারণ তার সাধের গাড়িটি মুর্শিদাবাদের ডোমকল থানার পুলিশ নিয়ে গেছে।
মোটর ভেহিকলস আইন অনুযায়ী কোনও গাড়িকে এভাবে বদলে ফেলে চালানোর অনুমতি যে ছিল না নবাব শেখের।

ছবির উৎস, Rakibul Islam
ছবির ক্যাপশান,
চলমান খাট-গাড়ির নির্মাতা নবাব শেখ
ভাইরাল হয়ে যাওয়ার নেশায় মানুষ যে কত কিছু করেন, নবাব শেখের এই গাড়ি-বিছানা তার একটা উদাহরণ।
ভাইরাল হওয়ার স্বপ্ন তো ছিলই, তার সঙ্গেই ছিল বিছানায় বসে বসেই চায়ের দোকানে চা খেতে যাওয়ার স্বপ্নও।
"আমি ঘুমের মধ্যেই একদিন স্বপ্ন দেখি যে খাটে চেপেই যদি আমি চা খেতে যেতে পারতাম! সেই ভাবনা থেকেই শুরু," বলছিলেন মি. শেখ।
এরপরে তিনি খাটটিতে চারটি চাকা লাগান। সেটি ধাক্কা দিলে এগোচ্ছে, কিন্তু এমনিতে সেটি নড়াচড়া করছে না!
তার কথায়, "এরপরে আমি ওটাতে একটা ইঞ্জিন ফিট করে চলন্ত খাট বানাই। ঈদের দিন একটু ট্রায়াল দিতে বেরিয়েছিলাম। আমার কয়েকজন বন্ধু সেটার দুটো ভিডিও করে। সেটা আমি আমার ফেসবুক পেজে দিয়েছিলাম।"

ছবির উৎস, Rakibul Islam
ছবির ক্যাপশান,
চলমান খাট-গাড়ি নিয়ে রাস্তায় নবাব শেখ
নবাব শেখের এক ভাই আলমগীর শেখও চলমান-খাট বানানোয় তাকে সহায়তা করেছেন।
প্রায় দেড় বছর ধরে দুই লাখ ১৫ হাজার টাকা খরচ করে একে একে ইঞ্জিন, স্টিয়ারিং, তেলের ট্যাংক আর স্থানীয় একটা গাড়ি সারানোর কারখানা থেকে একটি গাড়ির খাঁচাও কেনেন মি. শেখ।
তিনি বলছিলেন, "নবাব ভিডিও কনটেন্ট বানায় আগে থেকেই। প্রথমে আইডিয়াটা ওর মাথায় আসে। পরে আমাদের জানায়। কাঠের কাঠামো তো আছেই, তাতে ৮০০ সিসি ইঞ্জিন লাগানো হয়েছে। আর মারুতি 'ওমনি' গাড়ির চেসিস ব্যবহার করা হয়েছে।"
বাড়ির পাশেই কাঠমিস্ত্রি, গাড়ির মেকানিকদের সহায়তায় গাড়িটি তৈরি করেছিলেন মি. শেখ।
পেশায় গাড়িচালক নবাব শেখ মাসে মোটামুটি নয় হাজার ভারতীয় টাকা রোজগার করেন।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে তিনি জানিয়েছেন যে এই চলমান-খাট বানাতে স্ত্রীর কিছু গয়না বিক্রি করতে হয়েছে।

ছবির উৎস, Rakibul Islam
ছবির ক্যাপশান,
চলমান খাট-গাড়িটি ডোমকল থানায় রাখা হয়েছে এখন
নবাব শেখের কথায়, "ঈদের দিন গাড়িটি ট্রায়াল দিতে বের করেছিলাম। সেই সময়ে আমার বন্ধুরা দুটো ভিডিও করে। আমি সেটাই আমার পেজে আপলোড করি।"
তার নিজের পেজে প্রায় আড়াই কোটি ভিউ হয়েছিল কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই।
"তবে তারপরে বাংলাদেশের একটি চ্যানেল – আরটিভি ওই ভিডিওটি ডাউনলোড করে তাদের নিজস্ব ভিডিও বলে আপলোড করে। এটাও দাবি করা হয় যে এটা নাকি বাংলাদেশের কেউ বানিয়েছে," অভিযোগ নবাব শেখ ও আলমগীর শেখের।
এরপরে বাংলাদেশের ওই চ্যানেলের পক্ষ থেকে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের কাছে কপিরাইট ভাঙার জন্য রিপোর্ট করা হয় বলে মি. শেখের অভিযোগ।
"তারপরেই আমাদের পেজটি বন্ধ করে দিয়েছে ফেসবুক। থানায় অভিযোগ করতে এসেছিলাম। তবে পুলিশ প্রশাসন বলছে আমাদের গাড়িটাই বেআইনি," জানাচ্ছিলেন মি. শেখ।
চলমান-খাট দেখতে রাস্তায় ভিড় জমে যাওয়ায় প্রথমে পুলিশের পক্ষ থেকে গাড়িটি রাস্তায় না চালানোর কথা বলা হয়েছিল।
তারপরে সেটি শেখ পরিবারের গুদামে রাখা ছিল।
কিন্তু এ ধরনের গাড়ি চালানোর আইনি অনুমতি না থাকায় পুলিশ ওই খাট-গাড়িটি থানায় নিয়ে গেছে।
স্থানীয় সাংবাদিকদের তোলা ভিডিওতে দেখা গেছে, নবাব শেখ গাড়ির স্টিয়ারিংয়ে বসেছিলেন, আর লাফ দিয়ে ওই চলমান গাড়িতেই উঠে পড়লেন এক সিভিক পুলিশ কর্মী।
বিছানার ওপরে বেশ গুছিয়েই বসেছিলেন ওই স্বেচ্ছাসেবক পুলিশ। আর রাস্তার মানুষ বেশ মজা করেই ব্যাপারটা দেখছিলেন।
কিন্তু নবাব শেখের এখন মন খারাপ।
এক তো তার ফেসবুক আইডি বন্ধ, তাই ভাইরাল ভিডিও থেকে রোজগারও হচ্ছে না, তারওপরে স্ত্রীর গয়না বিক্রি করে যে শখের গাড়ি বানালেন দেড় বছর ধরে, সেটাও এখন থানায়।
এ যেন সেই প্রবাদের মতো – 'আমও গেল ছালাও গেল'।