প্রায় ২৫০ বছর আগে কলকাতার ডালহৌসিতে রাইটার্স বিল্ডিং গড়ে উঠেছিল। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রশাসনিক ও করণিক কাজ করার জন্য ইংল্যান্ড থেকে আসা ক্লার্ক বা কেরানিদের থাকার জায়গা ছিল সেটা। রাইটার্স বিল্ডিংই হয়ে উঠেছিল ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলের প্রশাসনিক কাজের জায়গা। সে কারণে এটিকে পরবর্তী সময়ে মহাকরণ বলা হতো। ২০১৩ সাল পর্যন্ত সেখানে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের সচিবালয় ছিল।
যাহোক, রাইটার্স বিল্ডিংয়ের সেই কেরানিরাই আজকের আমলাতন্ত্রের আদি মানুষ। বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে আসা ব্রিটিশদের ১৯০ বছরের প্রত্যক্ষ ঔপনিবেশিক শাসন-শোষণের মূল ভিত্তিই ছিল আমলাতন্ত্র। ঔপনিবেশিক এই প্রায় ১০০ বছর তাদের আমলাতন্ত্রে এদেশীয় কাউকে জায়গা দেওয়া হয়নি। ১৮৩৫ সালে মেকলে তাঁর শিক্ষানীতিতে এমন একটা মধ্যশ্রেণি তৈরির পরিকল্পনা করেন, যারা শাসক ও শাসিতের মধ্যে কাজ করবে দোভাষীর, রং ও রক্তের পরিচয়ে হবে এদেশীয়; কিন্তু রুচি, মতামত, নীতিজ্ঞান ও বুদ্ধিতে হবে ইংরেজ।
মেকলের এই শিক্ষানীতির তিন দশক পর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম স্নাতক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এদেশীয়দের মধ্যে প্রথম ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে ব্রিটিশ আমলাতন্ত্রে নিয়োগ পান। তিনি ডেপুটির সঙ্গে ‘বিড়ালের’ তুলনা দিয়েছিলেন।
বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু মনমোহন সিংয়ের আমলে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ২০২১ সাল তাঁর স্মৃতিচারণামূলক ‘পলিসিমেকারস জার্নাল: ফ্রম নিউ দিল্লি টু ওয়াশিংটন ডিসি’ বইয়ে লিখেছেন, ভারতীয় আমলারা মিনিটে ১৬ বার ‘স্যার’ ডাকেন। আমলাতন্ত্রে লালফিতার দৌরাত্ম্য নিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘এসব ঔপনিবেশিক শক্তির কাছ থেকে পাওয়া অভ্যাস। দীর্ঘদিন ধরে সরকারি চাকরিতে থাকা আমলারা এসব পছন্দ করেন। তাই সময় বদলালেও এমন আচরণ ও প্রথা বদলায়নি।’