ভারতে বসবাসকারী বাংলাভাষী মুসলমানদের নাগরিকত্ব বাতিল, গ্রেপ্তার ও জোরপূর্বক বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানোর অভিযোগ উঠে এসেছে। এই সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বছরের পর বছর ধরে পরিচালিত হয়ে আসা রাজনৈতিক ও প্রচারমাধ্যমের ঘৃণা অভিযানের বিষয়টি সম্প্রতি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার দীর্ঘদিন ধরেই মুসলমানদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করছে।

বিশেষ করে বাঙালি মুসলমানদের ‘বিদেশি’ বা ‘অনুপ্রবেশকারী’ হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের দেশছাড়া করার প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছে। এর পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক স্বার্থ এবং নির্বাচনী হিসাব-নিকাশ।

আসামে এনআরসি (নাগরিকপঞ্জি) হালনাগাদ করার সময় থেকেই অনেক প্রকৃত ভারতীয় নাগরিক, যারা জন্মসূত্রে ভারতেই বেড়ে উঠেছেন, নাগরিকত্ব হারানোর মুখে পড়েন। এই তালিকাভুক্তির বাইরে থাকা মানুষেরা এখন গ্রেফতার, বন্দি শিবিরে প্রেরণ কিংবা সীমান্ত পার করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়ার হুমকির মধ্যে রয়েছেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই প্রক্রিয়া শুধুই প্রশাসনিক নয়, এর পেছনে রয়েছে বিস্তৃত রাজনৈতিক প্রোপাগান্ডা। দেশটির টেলিভিশন মিডিয়া ও সংবাদপত্রগুলো অনেকাংশেই মুসলমানদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছে।

অনেক গণমাধ্যম এবং রাজনৈতিক বক্তৃতায় মুসলমানদের সংখ্যাগুরু হিন্দুদের জন্য হুমকি হিসেবে চিত্রিত করা হচ্ছে। মুসলমানদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক বানিয়ে তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ বিশ্লেষকদের।

সাংবাদিক শোয়েব দানিয়াল জানিয়েছেন, মুসলমানদের আটক করে নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে বাধ্য করা হচ্ছে, আর ব্যর্থ হলেই তাদের ‘বিদেশি’ ঘোষণা করে সীমান্তে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এ কারণে মুম্বাই, গুজরাট, উড়িষ্যা থেকে অনেক মুসলিম শ্রমিক এখন নিরাপত্তার খোঁজে পশ্চিমবঙ্গে ফিরে আসছেন।

আসাম, দিল্লি ও মুম্বাইসহ নানা অঞ্চলে মুসলমানদের বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও এমনকি মসজিদও বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই ধ্বংসযজ্ঞের পেছনে যথাযথ আইনগত প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয় না। এই ঘটনাগুলোকেই হিন্দু জাতীয়তাবাদীরা ‘ন্যায়বিচার’ বলে প্রচার করছে।

বুলডোজার এখন ভারতের রাজনীতিতে একধরনের প্রতীকে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন চলচ্চিত্র নির্মাতা ও সাংবাদিক পরান গুহ ঠাকুরতা। আর সাংবাদিক ফাতিমা খান বলেন, মিডিয়া এই বিষয়টিকে যেমন সহজে গ্রহণ করেছে, তেমনিভাবে তা প্রচার করাও অত্যন্ত দুঃখজনক।

ভারতের গণতন্ত্র, সংবিধান ও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উদ্বেগ বাড়ছে এই পরিস্থিতি নিয়ে। বিশেষ করে যারা ধর্ম, ভাষা বা জাতিগত পরিচয়ের কারণে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন, তাদের অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে ভারতের সরকারের ভূমিকাই এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews