যুক্তরাষ্ট্র আর্মি ট্যাকটিক্যাল মিসাইল সিস্টেম ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারে ইউক্রেনের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে। চলতি বছরের শুরুতে ইউক্রেনের দখলে যাওয়া রাশিয়ার অঞ্চল পুনরুদ্ধারে রুশ বাহিনীকে প্রতিহত করতে তা কাজে লাগতে পারে। এ ছাড়া এ ঘটনা জানুয়ারিতে হোয়াইট হাউসে সদ্য নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আগমনের আগে ইউক্রেনের হাতকে আরও শক্তিশালী করতে পারে। তবে এটি ইউক্রেনের প্রতি খুব কম ও বিলম্বিত পশ্চিমা সমর্থন বলে চিহ্নিত করা যেতে পারে।
এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্রের পরিসীমা প্রায় ৩০০ কিলোমিটার। এর আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে কেবল ইউক্রেনের ভূখণ্ডে রাশিয়ান বাহিনীর বিরুদ্ধে ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ব্যবহার করতে বলেছিল। এটি ইউক্রেনের জন্য ছিল বিশাল এক হতাশা। ইউক্রেনের শহরগুলোতে রাশিয়ার অগণিত ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার পরও ইউক্রেন রাশিয়ার অভ্যন্তরে ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ব্যবহার করতে পারছিল না। জাতিসংঘের মতে, অক্টোবরে ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলায় ১৮৩ জন বেসামরিক লোক নিহত এবং ৯০৩ জন আহত হয়েছে।
রাশিয়া আগস্টে একটি সাহসী উদ্যোগ হিসেবে ইউক্রেনের দখল করা ৫০০ বর্গকিলোমিটারেরও বেশি অঞ্চল পুনরুদ্ধার করতে চায়। পশ্চিমা সংস্থাগুলো বিশ্বাস করে, রাশিয়ার দিকে ৫০ হাজার সৈন্য একত্র হচ্ছে, যেখানে কয়েক হাজার উত্তর কোরিয়ার।
উত্তর কোরিয়ার সম্পৃক্ততা এটিএসিএমএসের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার প্রধান কারণ হতে পারে। রাশিয়ার ভূখণ্ডে পা রাখার ইউক্রেনের সম্ভাবনা শক্তিশালী করার পাশাপাশি এই পদক্ষেপ উত্তর কোরিয়াকে আরও সৈন্য পাঠাতে নিরুৎসাহিত করতে পারে। উত্তর কোরিয়ার উপস্থিতি মার্কিন সিদ্ধান্তের জন্য কিছু ন্যায্যতারও জোগান দেয়, যা রাশিয়ার মাধ্যমে পরিস্থিতি আরও অস্থির হওয়ার উদ্বেগ কমিয়ে আনা যেতে পারে।
ক্রমবর্ধমান ভয় এবং রাশিয়া ও ন্যাটোর মধ্যে সরাসরি সংঘর্ষের আশঙ্কা এখন পর্যন্ত মার্কিন সতর্কতার একটি প্রধান কারণ। এতে রাশিয়ার পারমাণবিক কর্মকাণ্ড আংশিকভাবে প্রভাব ফেলেছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সেপ্টেম্বরে ঝুঁকির মাত্রা এই বলে বাড়িয়েছিলেন, রাশিয়ায় পশ্চিমা অস্ত্রগুলো আঘাত
করার অনুমতি দেওয়া মানে যুদ্ধে ন্যাটোর ‘সরাসরি অংশগ্রহণ’ নিশ্চিত করে।
বাইডেন প্রশাসনের কয়েকটি সূত্র সংবাদমাধ্যমে বলেছে, নাশকতার মাধ্যমে প্রতিশোধ নেওয়ার ভয়ও এটিএসিএমএসকে রাশিয়ায় আঘাত করার অনুমতি দিতে দেশটির সতর্কতায় ভূমিকা রেখেছে। রাশিয়ান গোয়েন্দা সংস্থাগুলো গত বছর ইউরোপে একটি উল্লেখযোগ্য নাশকতামূলক প্রচারণা চালিয়েছে। ২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার পূর্ণ মাত্রায় আগ্রাসনের শুরু থেকেই এ ধরনের ঝুঁকির প্রতি শত্রুতা স্পষ্ট হয়েছে। পশ্চিমা দেশগুলো পুতিনের অনুমিত ‘লাল রেখা’ অতিক্রম করা নিয়ে প্রতিটি পদক্ষেপে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
এটিএসিএমএস ব্যবহারে মার্কিন বিধিনিষেধ থেকে ইউক্রেনের ওপর ব্রিটেন ও ফ্রান্স একই সীমাবদ্ধতা আরোপ করেছিল। দেশ দুটির স্টর্ম শ্যাডো ও এসসিএএলপি ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারে ইউক্রেনের ওপর অনুরূপ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল, যার পরিসীমা ছিল ২৫০ কিলোমিটার। মনে হচ্ছে, মার্কিন পদক্ষেপ এখন যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সকে সেই সীমা শিথিল করে তাদের পথে হাঁটতে সক্ষম করবে। ইউক্রেনের অস্ত্রাগারে আরেকটি জোগান জার্মানি থেকে আসতে পারে, যেখানে গ্রিনস, সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট ও বিরোধী খ্রিষ্টান ডেমোক্র্যাটরা ইউক্রেনে ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র জোগানে সমর্থন দিতে পারে, যার পরিসীমা ৫০০ কিলোমিটার।
ওয়াশিংটনের কর্মকর্তারা সম্প্রতি দাবি করেন, এটিএসিএমএসের এখন সীমিত ব্যবহার হবে। কারণ রাশিয়া তার প্রধান প্রধান অস্ত্র, বিশেষ করে জেট ফাইটার তাদের আয়ত্তের বাইরে সরিয়ে নিয়েছে।
তবে কিছু সামরিক বিশ্লেষক মনে করেন, এখনও আয়ত্তের মধ্যে প্রচুর সামরিক নিশানা রয়েছে, সম্ভবত সংখ্যায় কয়েকশ হবে। এর মধ্যে রয়েছে কমান্ড ও যোগাযোগ-সংক্রান্ত ফাঁড়ি, লজিস্টিক হাব, অস্ত্রাগার, মিসাইল ইউনিট ও হেলিকপ্টার উড্ডয়নস্থল।
বাইডেন রাশিয়ার অভ্যন্তরে এটিএসিএমএস ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরও শিথিল করতে পারে। যেমন, ট্রাম্প দাপ্তরিকভাবে দায়িত্ব নেওয়ার আগে ইউক্রেনকে যতটা সম্ভব শক্তিশালী অবস্থানে ছেড়ে দেওয়ার চেষ্টায় কুরস্ক অঞ্চলের বাইরে ওই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দিতে পারে। ইউক্রেনীয়দের মধ্যে কেউ কেউ আশঙ্কা করছে, ট্রাম্প দ্রুত যুদ্ধ শেষ করার জন্য ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন কমিয়ে দিতে পারেন। তবে অন্যরা বিশ্বাস করেন, ট্রাম্প বাইডেন প্রশাসনের মতোই সাহায্য করতে পারেন। তবে পরবর্তী সতর্কতা মাথায় রেখে এবং ট্রাম্প ইউক্রেনের সঙ্গে প্রতারণা করবেন, এমনটা ভাবার পরিবর্তে তাঁকে বিশ্বাসযোগ্য একজন সমঝোতাকারী হিসাবে দেখা দরকার।
ট্রাম্পের নতুন মন্ত্রিসভায় এমন সব লোকের শক্তিশালী উপস্থিতি আছে, যারা ইউক্রেনকে সহায়তার কঠোর সমালোচক, এমনকি রাশিয়ার পক্ষে সাফাই গায়ক। এর ফলে ওই আশাবাদ ধাক্কা খেতে পারে। ট্রাম্প প্রশাসন এটিএসিএমএস ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্তও প্রত্যাহার করতে পারে।
জন রিচার্ডসন: অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর ইউরোপিয়ান স্টাডিজের ভিজিটিং ফেলো; দ্য কনভারসেশন থেকে ভাষান্তর ইফতেখারুল ইসলাম