বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলায় রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের শ্যামপুর গ্রামের মৃত নিজাম সিকদার গ্রামে গ্রামে ভিক্ষা করে তার সংসার চালাতেন। শারীরিক অসুস্থতায় চিকিৎসার অভাবে গত এক বছর আগে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। 

দুই শিশু সন্তান নিয়ে তার স্ত্রী  নিলুফা বেগম (৬০) জীবনের শেষ প্রান্তে এসে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ছেলে-মেয়ের মুখে দুমুঠো ভাতের জন্য এখন তিনি ভিক্ষার ঝুলি হাতে নিয়ে ঘুরছেন দুয়ারে দুয়ারে। 

মঙ্গলবার (১৪ মে) দুপুর ১২টার ভরপাশা ইউনিয়নে দেখা হয় ৬০ বছরের বৃদ্ধা ভিক্ষুক নিলুফা বেগমের সঙ্গে। গ্রামীণ সড়কে এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়ি দু'মুঠো চালের জন্য ঘুরছেন দ্বারে দ্বারে। জীবনের শেষ প্রান্তে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে না পেরে ভুগছেন ভিক্ষুক নিলুফা বেগম।

জনকণ্ঠ সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় চোখের পানি ছেড়ে করুন সুরে কেঁদে কেঁদে নিলুফা বেগম বলেন, বাবা মোড় কেউ নেই! ঘর দুয়ার হারিয়েছি অনেক আগেই। বাকেরগঞ্জ সাহেবগঞ্জ ৫ নং ওয়ার্ডে একটি ভাড়া বাসায় মোড় অসুস্থ স্বামী নিয়া ঐহানে ভাড়া বাসায় থাকতাম। মোর স্বামী নিজাম সিকদার ভিক্ষা করে সংসার চালাতেন। প্রায় এক বছর হয়েছে তিনি মারা গেছেন। তাই এখন কি করমু যেদিন ভিক্ষা করতে বের না হই, সেই দিন মোগো না খাইয়া থাকতে হয়। 

তাই এহন জীবন বাঁচানোর লইগ্যা সারাদিন রোদে মধ্যে ঘুরতাছি মানুষের দুয়ারে দুয়ারে। সন্ধ্যার পর হলে হাটবাজারে দোকানে দোকানে পাঁচ-দশ টাকার জন্য মানুষের কাছে হাত পাতি। মাস গেলেই ১৫০০ টাকা ঘর ভাড়া দিতে হয়। মুই নিজেও অসুস্থ ঔষধের টাকাও ভিক্ষা করেই যোগাড় করতে হয়। এখন বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়েছি। বাবা জীবনডা আর চলে না। গরিবের কষ্ট কেউ দেহে না। 

ভিক্ষুক নিলুফা বেগম আক্ষেপ করে বলেন, সুখ কি জিনিস জীবনে চোখে দেখলাম না। এখন টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারিনি। ভিক্ষার টাকায় মাঝেমধ্যে সামান্য চিকিৎসা করালেও ভালো হয়নি। এভাবেই ভিক্ষে করতে করতে কখন জানি শ্বাসটা মোড় বন্ধ হয়ে যায়। মোড় ১৩ বছরের ছেলে আব্দুল্লা ফাজিল মাদ্রাসার সপ্তম শ্রেণিতে লেখাপড়া করে। মেয়ে মারজিয়া ১১ বছর বয়স ও সরকারি মডেল ইস্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে লেখাপড়া করে। মুই একলা মানুষ সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ভিক্ষা করেই সংসার চালাতে হয়। নিলুফা বেগম একপর্যায়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। 

তিনি বলেন, মোরা এত অসহায় তবু কেউ সহযোগিতা করে না। সরকার গরিবের জন্য ঘর দেয়, শুনছি সরকার নাকি কার্ডের চাউল দেয় কোন মেম্বার চেয়ারম্যান একটা চাউলের কার্ড মোরে এখনো দিল না। আল্লাহ্ মোড়ে কোনো মতে বাঁচায়ে রাখছে। খুব কষ্ট হয় সারাদিন রোদে ঘুরতে। একদিন বইসা থাকতে পারি না। তাইলে ঘরে আর খাবার জুটবে না।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ সাইফুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, আপনাদের মাধ্যমেই আমি এ রকম একটি সংবাদ পেয়েছি। অবশ্যই এই ভিক্ষুক পরিবারটির খোঁজখবর নিয়ে তাদের সহায়তা করা হবে। 



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews