ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি এখন বিশ্বের অন্যতম সাধারণ পুষ্টিজনিত সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর প্রাথমিক উপসর্গ অনেক সময় গোপনেই থাকে—তবে একবার হাড়, মেজাজ, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বা শক্তির উপর প্রভাব ফেলতে শুরু করলে বোঝা যায় এর গুরুত্ব।

সাধারণত মনে করা হয় সূর্যালোকের অভাব মানেই ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি। তবে বাস্তবতা আরও গভীর। এমন অনেক কারণ রয়েছে, যেগুলোর কথা আমরা সচরাচর চিন্তাই করি না। নিচে এমনই ৫টি কারণ তুলে ধরা হলো, যেগুলো সূর্যের আলো যথেষ্ট পেলেও শরীরে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতির জন্য দায়ী হতে পারে।

১. পরিপাকতন্ত্র ভিটামিন ডি ঠিকভাবে শোষণ করতে না পারা:
শুধু ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়াই যথেষ্ট নয়, শরীরের তা শোষণ করাও জরুরি। ভিটামিন ডি একটি ফ্যাট-সোল্যুবল ভিটামিন—অর্থাৎ, এটি চর্বির সঙ্গে মিশে শরীরে শোষিত হয়।

সেলিয়াক ডিজিজ, ক্রোন্স ডিজিজ কিংবা আইবিএস-এর মতো পরিপাকতন্ত্রের সমস্যায় ভুগলে শরীর ঠিকভাবে ভিটামিন ডি গ্রহণ করতে পারে না। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, ইনফ্ল্যামেটরি বাওয়েল ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ভিটামিন ডি-এর মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে কম থাকে, যদিও তারা নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার খাচ্ছেন।

২. কিছু ওষুধ ভিটামিন ডি-এর কার্যকারিতা কমাতে পারে:
প্রতিদিন ব্যবহৃত কিছু সাধারণ ওষুধ নীরবে ভিটামিন ডি-এর বিপাকে প্রভাব ফেলে। উদাহরণস্বরূপ:
কর্টিকোস্টেরয়েড (অ্যাজমা বা বাতজ্বরের ওষুধ) ভিটামিন ডি-এর কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়, ফেনিটোইন বা ফেনোবারবিটালের মতো অ্যান্টি-এপিলেপটিক ওষুধ যকৃতে ভিটামিন ডি দ্রুত ভেঙে ফেলে, ওজন কমানোর ওষুধগুলো চর্বি শোষণ কমিয়ে দেয়, ফলে ভিটামিন ডি শোষণ বাধাগ্রস্ত হয়। এই ধরনের ওষুধ দীর্ঘ সময় ধরে সেবন করলে শরীরে ভিটামিন ডি-এর স্তর নেমে যেতে পারে—যদিও তা সরাসরি বোঝা যায় না।

৩. অতিরিক্ত শরীরের চর্বি ভিটামিন ডি আটকে রাখে:
ভিটামিন ডি শরীরের চর্বি কোষে জমে থাকে, এবং অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা থাকলে এই ভিটামিন শরীরের জন্য সহজলভ্য থাকে না। গবেষণায় দেখা গেছে, স্থূল ব্যক্তিদের রক্তে স্বাভাবিক ভিটামিন ডি স্তর বজায় রাখতে অন্যদের চেয়ে ২–৩ গুণ বেশি ভিটামিন ডি প্রয়োজন হয়। অতএব, শরীরে ভিটামিন ডি থাকলেও তা সক্রিয়ভাবে কাজ করতে না পারায় ঘাটতির লক্ষণ দেখা দিতে পারে।

৪. যকৃত ও কিডনির কার্যকারিতায় সমস্যা:
বেশিরভাগ মানুষই জানেন না যে, ভিটামিন ডি তৈরি হওয়ার পর এটি যকৃত এবং কিডনির মাধ্যমে সক্রিয় রূপে পরিণত হয়। যকৃতের ফ্যাটি লিভার, অ্যালকোহলজনিত ক্ষতি কিংবা হেপাটাইটিস এবং কিডনির বয়সজনিত দুর্বলতা ভিটামিন ডি রূপান্তর প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। এতে ভিটামিন ডি শরীরে থাকলেও তা ব্যবহারের উপযোগী হয়ে ওঠে না।

৫. জিনগত ভিন্নতা ভিটামিন ডি রিসেপ্টরকে প্রভাবিত করে:
এটি তুলনামূলকভাবে কম আলোচিত, তবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিছু ব্যক্তির শরীরে VDR (Vitamin D Receptor) জিনের ভিন্নতা থাকতে পারে, যা শরীরের ভিটামিন ডি ব্যবহারে বাধা সৃষ্টি করে—even যদি রক্তপরীক্ষায় স্তর স্বাভাবিক দেখা যায়। গবেষণায় জানা গেছে, এই ধরনের জিনগত ভিন্নতা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস এবং ভিটামিন ডি-এর কম কার্যকারিতার সঙ্গে যুক্ত।

ভিটামিন ডি-এর ঘাটতির পেছনে সূর্য দেখার অভাবই একমাত্র কারণ নয়। হজমতন্ত্রের অকার্যকারিতা, ওষুধের প্রভাব, অতিরিক্ত ওজন, অঙ্গের কার্যকারিতা বা জিনগত পার্থক্য—সবই এর জন্য দায়ী হতে পারে।

তাই উপসর্গ (যেমন—হাড় ব্যথা, দুর্বলতা, মনমরা ভাব) দেখা দিলে শুধু রোদে বসাই নয়, বরং একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সঠিক পরীক্ষার মাধ্যমে কারণ চিহ্নিত করাই বুদ্ধিমানের কাজ।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews