আরবি ‘মেরাজ’ শব্দের অর্থ- ঊর্ধ্বগমন। লাইলাতুল মেরাজ বা মেরাজের রজনী উপমহাদেশে শবেমেরাজ হিসেবে পরিচিত। এ রাতে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) কুদরতিভাবে ঊর্ধ্বাকাশে আরোহণ করেছিলেন এবং মহান আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভ করেন। মেরাজের পটভূমি সম্পর্কে জ্ঞানীরা বলেন, জন্মের আগেই বাবাকে হারান প্রিয় নবীজি (সা.)। ৬ বছর বয়সে হারান মাকে। ৮ বছর বয়সে দাদার ইন্তেকালের পর শিশু নবীর দায়িত্ব নেন পিতৃতুল্য চাচা আবু তালেব। ৮ বছর থেকে ৫৫ বছর বয়স পর্যন্ত দীর্ঘ ৪৮ বছর ছায়া হয়ে নবীজির সঙ্গে ছিলেন চাচা আবু তালেব। কুরাইশরা যখন নবীজির ওপর চরম অত্যাচার শুরু করে, তখনো চাচা আবু তালেব তাঁকে ছেড়ে যাননি। নবুয়তের দশম বর্ষের রজব মাসে আবু তালেব মারা যান। এ দুঃখ নবীজি (সা.)-এর হৃদয় চৌচির করে দেয়। এর ঠিক তিন দিন পর প্রিয়তমা স্ত্রী খাদিজাও (রা.) ইন্তেকাল করেন। কষ্টের পর কষ্টের ঢেউ নবীজির হৃদয়ে আছড়ে পড়ে। এ জন্য ঐতিহাসিকরা এ বছরকে ‘আমুল হুজন’ বা দুঃখকষ্টের বছর বলে অভিহিত করেছেন। একে তো স্বজন হারানোর বেদনা, অন্যদিকে স্বগোত্রীয়দের বিরোধিতা নবীজির দাওয়াতি মিশনকে কঠিন করে তোলে। নবীজির পেরেশানি ও মনঃকষ্ট দূর করার জন্য এবার আরশের মালিক সিদ্ধান্ত নেন, নিজের কাছে নিয়েই প্রিয় বন্ধুকে সান্ত্বনা দেবেন পরম যত্নে। নবুয়তের দশম বর্ষের রজব মাসের ২৭ তারিখ রাতে বিশেষ নিরাপত্তায় প্রথমে বোরাক, তারপর রফরফে চড়ে নবীজি (সা.) খোদার সঙ্গে মেরাজে যান। এ ঘটনার বর্ণনা দিয়ে কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, ‘মহিমান্বিত সেই সত্তা, যিনি তাঁর বান্দাকে রাতের এক অংশে মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত ভ্রমণ করিয়েছেন, তাঁর নিদর্শনাবলি অবলোকন করার জন্য। যার চারপাশ আমি বরকতে পূর্ণ করে দিয়েছি। নিশ্চয় তিনি সব শোনেন ও সব দেখেন।’ (সুরা ইসরা, আয়াত ১)। মেরাজ সম্পর্কে আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের আকিদা হলো, নবীজি (সা.) কর্তৃক স্বশরীরে সজ্ঞানে জাগ্রত অবস্থায় মেরাজ হয়েছে। এক রাতে আল্লাহর রসুল (সা.) শুয়েছিলেন। হঠাৎ জিবরাইল (আ.) এসে নবীজিকে (সা.) জাগিয়ে তাঁর বক্ষ মোবারক বিশেষ উপায়ে বিদারণ করে জমজমের পানি দিয়ে হৃদয় ধুয়ে হিকমতে পূর্ণ করে আবার প্রতিস্থাপন করেন।

এরপর আনা হলো নবীজিকে বহন করার জন্য সওয়ারি। প্রাণীটি গাধার চেয়ে বড়, ঘোড়ার চেয়ে ছোট। নাম বোরাক। রং সাদা। এটা এতটাই ক্ষিপ্রগতির, যার একেকটি কদম পড়ে দৃষ্টির শেষ সীমায় গিয়ে। এভাবে নবীজি (সা.) মুহূর্তেই পৌঁছে গেলেন বাইতুল মুকাদ্দাসে। বোরাক বেঁধে রাখা হলো পাথর ছিদ্র করে। যে পাথরে অন্য নবীগণও নিজেদের বাহন বেঁধে রাখতেন। নবীজি সেখানে দুই রাকাত নামাজ আদায় করলেন। নামাজ পড়ে বের হওয়ার সময় জিবরাইল (আ.) নবীজির সামনে দুটি পেয়ালা পেশ করলেন। একটি দুধের অন্যটি শরাবের। নবীজি দুধের পেয়ালা গ্রহণ করলেন। জিবরাইল (আ.) বললেন, ‘আপনি স্বভাবসিদ্ধ বিষয়টি নির্বাচন করেছেন। আপনি যদি শরাবের পেয়ালা নিতেন তাহলে আপনার উম্মত বিভ্রান্ত হয়ে পড়ত।’

এরপর শুরু হলো ঊর্ধ্বজগতের সফর। জিবরাইল নবীজি (সা.)-কে নিয়ে চললেন। প্রথম আসমানে গিয়ে কড়া নাড়লেন। জিজ্ঞাসা করা হলো, কে? উত্তর দেওয়া হলো, আমি জিবরাইল। জিজ্ঞাসা করা হলো, আপনার সঙ্গে কে? আবার বললেন, মুহাম্মদ (সা.)। জিজ্ঞাসা করা হলো, তাঁর কাছে কি আপনাকে পাঠানো হয়েছে? বললেন, হ্যাঁ। এরপর নবীজিকে সম্ভাষণ জানানো হলো- মারহাবা, উত্তম আগমনকারীর আগমন ঘটেছে! খুলে দেওয়া হলো নবীজির জন্য আসমানের দরজা।

নবীজি প্রথম আসমানে গেলেন। সেখানে ছিলেন হজরত আদম (আ.)। জিবরাইল পরিচয় করিয়ে দিলেন। নবীজি আদমকে সালাম বললেন। বাবা আদম জবাব দিলেন। নবীজিকে সাদর অভিবাদন জানালেন- মারহাবা, নেক্কার পুত্র ও নেক্কার নবী। হজরত আদম (আ.) নবীজির জন্য দোয়া করলেন। এরপর নবীজি উঠতে থাকলেন দ্বিতীয় আসমানের দিকে। নবীজি সেখানে দেখতে পেলেন দুই খালাতো ভাই হজরত ঈসা (আ.) ও ইয়াহইয়া (আ.)কে। তাঁদের সঙ্গে নবীজির সালাম বিনিময় হলো। তাঁরা নবীজিকে স্বাগত জানালেন- মারহাবা, আমাদের পুণ্যবান ভাই এবং সজ্জন নবী। তাঁরা নবীজির জন্য দোয়া করলেন। এরপর নবীজিকে তৃতীয় আসমানের দিকে নিয়ে যাওয়া হলো। সেখানে দেখা হলো হজরত ইউসুফ (আ.)-এর সঙ্গে। হজরত ইউসুফের সঙ্গে নবীজির সালাম ও কুশল বিনিময় হলো। নবীজি (সা.) বলেন, হজরত ইউসুফকে দুনিয়ার অর্ধেক সৌন্দর্য় দেওয়া হয়েছে! এরপর চতুর্থ আসমানে হজরত ইদরিস (আ.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ হলো। সালাম ও কুশল বিনিময় হলো। হজরত ইদরিস (আ.) নবীজির জন্য দোয়া করলেন। এরপর পঞ্চম আসমানে হজরত হারুন (আ.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ হলো। ষষ্ঠ আসমানে হজরত মুসা (আ)-এর সঙ্গে এবং সপ্তম আসমানে হজরত ইবরাহিম (রা.)-এর সঙ্গে দেখা হলো। জিবরাইল ফেরেশতা পরিচয় করিয়ে দিলেন, ইনি আপনার পিতা, সালাম করুন। নবীজি হজরত ইবরাহিমকে সালাম দিলেন। নবীজি বলেন, ইবরাহিম (আ.) তখন বাইতুল মামুরে হেলান দিয়ে বসে ছিলেন।

লেখক : ইসলামি চিন্তাবিদ



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews