সরকার পতনের পরেও উত্তপ্ত ছিল সবজিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের বাজার। ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ঊর্ধ্বমুখী সবজি বাজারে কিছুটা স্থিতিশীলতা এসেছে। কমেছে আলু-পেঁয়াজসহ অন্যান্য সবজির দাম। তবে এখনও চড়া মাছ, মাংস ও মুরগির বাজার।
শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) সকালে পুরান ঢাকার রায় সাহেব বাজার, শ্যামবাজার, কাপ্তানবাজার ও নয়াবাজার ঘুরে এ তথ্য জানা গেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বাজারে আলু, শিম টমেটোসহ সব ধরনের শাকসবজির দাম কমেছে। আজ আলু ৩০-৩৫ টাকা, পেঁয়াজ ৫০ টাকা, মানভেদে প্রতি কেজি বেগুন ৪৫-৫০ টাকা, বরবটি ৫০-৬০ টাকা, মুলা ২০ টাকা, পটোল ৬০ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকা, গাজর ৪০ টাকা, টমেটো ৪০-৫০ টাকা, শিম ২৫ টাকা, শসা বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকা কেজি দরে। এছাড়া ঢেঁড়স ৭০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, ধুন্দল ৭০ টাকা, ঝিঙা ৬০ টাকা, পেঁয়াজকলি ৫০ টাকা, কচুর লতি ও কচুরমুখী ৮০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৩০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৮০ টাকা, ধনেপাতা ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মানভেদে প্রতিটি লাউ ৮০ টাকা, চাল কুমড়া ৬০ টাকা, ফুলকপি ২০-৩০ টাকা, বাঁধাকপি ২০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি হালি কাঁচা কলা ২০ টাকা, হালি লেবু বিক্রি হচ্ছে ২০-২৫ টাকা করে।
আজ দেশি রসুন ২৪০-২৫০ টাকা, চায়না রসুন ২২০-২৩০ টাকা, চায়না আদা ২৪০ টাকা, নতুন ভারতীয় আদা ১২০ কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহের তুলনায় অন্যান্য পণ্যের দাম তেমন পরিবর্তন হয়নি।
রায় সাহেব বাজারে সবজি বিক্রেতা আজমির হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সবকিছুর দাম গত সপ্তাহের মতোই আছে। কোনোকিছুর দাম বাড়েনি। বরং আলুর দাম কমেছে।’
শাহাদাত হোসেন নামে আরেক বিক্রেতা বলেন, ‘শীতকালে এমনিতেই সবজির দাম কম থাকে। এ রকম যদি সবসময় থাকে তাহলে আমরা যেমন মালামাল বিক্রি করে শান্তি পাবো তেমনই ক্রেতারাও কিনে স্বস্তি পাবেন।’
আলু-পেঁয়াজ বিক্রেতা মোবারক মিয়া বলেন, ‘গত সপ্তাহের তুলনায় আলুর দাম কমেছে। দেশি পেঁয়াজের দামও এখন নাগালের মধ্যে আছে। তাই ভারতীয় পেঁয়াজের দরকার হয় না। দেশি পেঁয়াজের চেয়ে ভারতীয় পেঁয়াজের দাম অনেক বেশি। দেশি পেঁয়াজ আমরা ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করলে আমাদেরও লাভ, দেশের কৃষকেরও লাভ।’
এদিকে স্থিতিশীল সবজি বাজার দেখে অনেকটাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন বাজারে আসা ক্রেতারা। শ্যামবাজারে বাজার করতে আসা জসিম উদ্দিন নামে এক ক্রেতা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শীত আসার পর থেকে সবজির বাজারে চোখ বন্ধ করে কেনাকাটা করা যায়। সবকিছুর দাম মোটামুটি নাগালের মধ্যে আছে। এমন বাজার আমরা সবসময় প্রত্যাশা করি।’
মাছ মাংসের বাজার চওড়া
সবজি বাজারে এসে স্বস্তি পেলেও মাছ-মাংসের বাজারে এসে অস্বস্তি বোধ করেন ক্রেতারা। মাছ মাংসের ঊর্ধ্বমুখী দাম কবে সহনীয় পর্যায়ে আসবে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ক্রেতারা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকা কেজি দরে। খাসির মাংস ১ হাজার ১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া আজ ব্রয়লার মুরগি ২০০-২১০ টাকা, কক মুরগি ৩৪০-৩৫০ টাকা, লেয়ার মুরগি ২৮০-২৯০ টাকা, দেশি মুরগি ৫৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ফার্মের মুরগির প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকায়।
গত সপ্তাহের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায়, প্রতি কেজিতে ব্রয়লার মুরগি দাম ৫-১০ টাকা বেড়েছে। কক মুরগির দাম আগের মতোই আছে। এছাড়া প্রতি কেজিতে খাসির মাংসের দাম বেড়েছে ৫০ টাকা। গরুর মাংস, দেশি ও লেয়ার মুরগি দাম অপরিবর্তিত। ফার্মের মুরগির ডিমের দামও অপরিবর্তিত রয়েছে।
গরুর মাংসের দাম বেড়ে যাওয়া নিয়ে নয়াবাজারে মাংস বিক্রেতা হাশেম ব্যাপারী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গরুর দাম বেশি তাই মাংস বেশি দামে বিক্রি করতে হয়। তাছাড়া বাজারে অন্যান্য বিক্রেতা যে দামে বিক্রি করেন, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হয়।’ কিছুদিন পর গরুর মাংসের কেজি ৮০০ টাকা হওয়ার সম্ভাবনা আছে বলেও জানান এই বিক্রেতা।
খাসির মাংসের দাম বৃদ্ধি সম্পর্কে বিক্রেতা মতিন কসাই বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গরু-খাসির চাহিদা সবসময় বেশি। দাম বাড়ুক আর কমুক চাহিদা কমে না, যে কারণে দামও কমে না।’ প্রতিদিন এক গরু, দুই-তিন খাসির মাংস বিক্রি করেন বলেও জানান এই বিক্রেতা।
এদিকে মুরগির মাংসের দাম বাড়ার বিষয়ে এক বিক্রেতা বলেন, শীতে বিয়ে, পিকনিক, পার্টি লেগেই আছে। কমবেশি সবাই মুরগি দিয়ে বারবিকিউ পার্টি করে। চাহিদা অনেক বেশি তাই দাম বেড়েছে।’
আজ বাজারে আকার ও ওজন অনুযায়ী ইলিশ মাছ ৭০০-২ হাজার ৬০০ টাকা, রুই মাছ ৩০০-৬০০ টাকা, কাতল মাছ ৪০০-৫০০ টাকা, কালিবাউশ ৫০০-৬৫০ টাকা, চিংড়ি মাছ ৮০০-১ হাজার ৬০০ টাকা, কাঁচকি মাছ ৪০০ টাকা, কৈ মাছ ২৫০-১০০০ টাকা এবং পাবদা মাছ ৪০০-৬০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া শিং মাছ ৫০০-১০০০ টাকা, টেংরা মাছ ৫০০-৮০০ টাকা, বোয়াল মাছ ৬৫০০-১০০০ টাকা, শোল মাছ ৭০০-১ হাজার ১০০ টাকা, মেনি মাছ ৬০০ টাকা, চিতল মাছ ৭০০-১০০০ টাকা, সরপুঁটি মাছ ২০০-৪০০ টাকা, রূপচাঁদা মাছ বিক্রি হচ্ছে ৮০০-১ হাজার ২০০ টাকা কেজি দরে।
মাছ-মাংসের দামের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ ক্রেতারা বলছেন, বছরে শীতকালে সবজির দাম কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও কখনোই মাছ-মাংসের দাম নিয়ন্ত্রণে আসে না।
তানভীর হাসান নামে একজন ক্রেতা বলেন, ‘এই সরকারের জন্য মাছ-মাংসসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য কমানো একটা চ্যালেঞ্জ। সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা শুধু দাম কমানো, আর কিছু না।’
মুদি দোকানের মালামাল ও তেলের দাম নিয়ে অসন্তুষ্ট ক্রেতারা
মাছ-মাংসের মতো মুদি দোকানের পণ্যের দাম নিয়েও অসন্তুষ্ট ক্রেতারা। এদিকে দাম বৃদ্ধির পরও সয়াবিন তেলের বাজার স্বাভাবিক হয়নি। বিক্রেতাদের অভিযোগ, দোকানে সয়াবিন তেল নেই। যা আছে তা চাহিদার তুলনায় খুবই কম। তাই তেলের দাম বেশি। ক্রেতারা বলছেন, সবজি-আলু-পেঁয়াজের বাজার স্বাভাবিক হয়ে এলেও মুদি দোকানের পণ্যের দাম কমানো এখন সময়ের দাবি।
আজকের বাজারে বড় মুগ ডাল ১৪০ টাকা, ছোট মুগ ডাল ১৭০ টাকা, ছোট মসুর ডাল ১৩৫ টাকা, মোটা মসুর ডাল ১১০ টাকা, খেশারি ডাল ১১০ টাকা, বুটের ডাল ১৪০ টাকা, মাশকালাইয়ের ডাল ১৯০ টাকা, ডাবলি ৭০ টাকা, ছোলা ১৩০ টাকা, প্যাকেট পোলাওয়ের চাল ১৫০ টাকা, খোলা পোলাওয়ের চাল মান ভেদে ১১০-১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৭৫ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল ১৫৭ টাকা, প্যাকেটজাত চিনি ১২৫ টাকা, খোলা চিনি ১২০ টাকা, দুই কেজি প্যাকেট ময়দা ১৫০ টাকা, আটা দুই কেজির প্যাকেট ১১৫ টাকা, খোলা সরিষার তেল প্রতি লিটার বিক্রি হচ্ছে ১৯০ টাকায়।
মুদি দোকানে বাজার করতে আসা আকলিমা আক্তার নামে এক ক্রেতা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কাঁচাবাজার স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। কিন্তু মুদি দোকানের পণ্যের দাম কমছে না। দীর্ঘদিন ধরে মুদি মালামালের দাম ঊর্ধ্বমুখী। এসব পণ্যের দাম কমানো উচিত। না হলে মানুষের মধ্যে স্বস্তি আসবে না। সরকারের উচিত এসব পণ্যের দামের দিকে নজর দেওয়া। সাধারণ মানুষ যেন অন্তত বাজার করে একটু শান্তি খুঁজে পাই।’
ছবি: প্রতিবেদক