ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে নতুন বাংলাদেশ গড়ার কামনায় রাষ্ট্র সংস্কারের প্রসঙ্গটি জোরালোভাবে সামনে আসে। সংস্কারের বাসনায় একে একে গঠন করা হয় সাতটি কমিশন।



এর মধ্যে ১৮ নভেম্বর ১১ সদস্যের গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন গঠনের প্রজ্ঞাপন জারি করে অন্তর্বর্তী সরকার।







কমিশনের প্রধান করা হয় জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক কামাল আহমেদকে। ২২ মার্চ প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। কমিশনের সদস্যদের অনেকেই নিজ নিজ কর্মগুণে স্বনামখ্যাত সুশীল এবং নিঃসন্দেহে জ্ঞানীগুণী। তাঁরা তুলনামূলক দ্রুততম সময়ে তথ্যসমুদ্র মন্থন করে ১৮০ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন জাতিকে উপহার দিয়েছেন। আমরা আশা করি, দেশ ও জাতির সার্বিক মঙ্গল বা ইতিবাচক পরিবর্তনের বাসনা থেকেই তাঁরা তাঁদের মূল্যবান সময় ও শ্রম ব্যয় করেছেন। কষ্ট করে পড়তে গেলেই তা ধরতে পারা যায়।

কমিশনের সুপারিশমালার শুরুতেই গণমাধ্যমের মালিকানার কথা বলা হয়েছে। একই কোম্পানি, গোষ্ঠী, ব্যক্তি, পরিবার বা উদ্যোক্তা যাতে একই সঙ্গে একাধিক মাধ্যমের মালিক হতে না পারে, সেজন্য বিশ্বের বহু দেশে ‘ক্রস-ওনার শিপ’ (টেলিভিশনের মালিক সংবাদপত্রের মালিক হতে পারেন না বা সংবাদপত্রের মালিক টেলিভিশন চ্যানেলের মালিক হতে পারেন না) নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে কমিশন ‘ওয়ান হাউস, ওয়ান মিডিয়া’র সুপারিশ করেছে।

কমিশন মনে করে, বাংলাদেশেও অচিরেই এমন পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। ক্রস-ওনার শিপ নিষিদ্ধ করে অধ্যাদেশ করা যায়। যেসব ক্ষেত্রে এটি বিদ্যমান সেগুলোয় পরিবর্তন আনার নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দিয়ে তাদের ব্যবসা পুনর্গঠনের লক্ষ্য ঠিক করে দেওয়া প্রয়োজন। এগুলো নানা পদ্ধতিতে হতে পারে। যেসব কোম্পানি, গোষ্ঠী, প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি, পরিবার একই সঙ্গে টেলিভিশন ও পত্রিকার মালিক, তারা যে কোনো একটি গণমাধ্যম রেখে অন্যগুলোর মালিকানা বিক্রির মাধ্যমে হস্তান্তর করে দিতে পারে। অথবা দুটি গণমাধ্যমের (টেলিভিশন ও পত্রিকা) সাংবাদিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের একত্র করে আরও শক্তিশালী ও বড় আকারে একটি গণমাধ্যম (টেলিভিশন অথবা পত্রিকা) পরিচালনা করতে পারে।

কমিশনের সুপারিশে বলা হয়েছে, একক মালিকানায় একই ভাষায় একাধিক দৈনিক পত্রিকা বা একাধিক টেলিভিশন চ্যানেল প্রতিযোগিতার পরিবেশ নষ্ট করে। সেই সঙ্গে গণমাধ্যমের যে প্রভাবক ক্ষমতা, তা নিজস্বার্থে কেন্দ্রীভূত করে। সে কারণে এ ব্যবস্থার অবসান হওয়া দরকার। বিদ্যমান এ ব্যবস্থার দ্রুত সমাধান করতে হবে।

উদাহরণ হিসেবে বলা হয়, একই সাবান একাধিক মোড়কে বাজারজাত করায় যেমন বাজারের প্রতিযোগিতা নষ্ট করে, একই মালিকানায় একই ভাষায় একাধিক দৈনিক পত্রিকাও গণমাধ্যমের প্রতিযোগিতা নষ্ট করে এবং পাঠক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। টেলিভিশনের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। এজন্য ‘এক উদ্যোক্তার একটি গণমাধ্যম (ওয়ান হাউস, ওয়ান মিডিয়া)’ নীতি কার্যকর করাই গণমাধ্যমের কেন্দ্রীকরণ প্রতিরোধের সেরা উপায় বলে মনে করে কমিশন।

আর এ কথাগুলো পড়ার পরই অধমের চোখে খটকা লাগে। প্রতিবেদনটিও অনেকটাই বিশ্বাসযোগ্যতা ও পবিত্রতা হারায়। মুহূর্তেই ‘অনেক দুধের মধ্যে এক ফোঁটা গোমূত্র পড়ার’ চিত্রকল্পটাও ভেসে ওঠে। প্রতিবেদনটি পক্ষপাতদুষ্ট এক উদ্ভট যাচ্ছেতাই বালখিল্য বিষয়ে পরিণত হয়। বোঝা যায়, নেহাত দেশ ও জনগণ, গণমাধ্যম বা গণমাধ্যমকর্মীদের মঙ্গলাকাক্সক্ষা নয়, এখানেও গতানুগতিক অপরাজনীতি ও ঘৃণ্য গোষ্ঠীস্বার্থ কাজ করেছে। সেই ‘গোষ্ঠীস্বার্থ’ও আবার স্রেফ ‘ব্যবসায়িক বিদ্বেষতাড়িত’। হ্যাঁ, স্রেফ বিদ্বেষ আর প্রতিহিংসা থেকেই কমিশন এ আজগুবি ওয়ান হাউস, ওয়ান মিডিয়ার সুপারিশ করেছে এবং ক্রস-ওনার শিপের প্রসঙ্গ টেনেছে।

বিদ্বেষের তাড়নায় কখনোই সর্বজনীন ভালো কিছু হয় না। ফলে কমিশনের এ প্রতিবেদন গণমাধ্যমকে ইতিবাচক নতুন কিছু দেওয়া থাক দূরে, বরং আরও অস্থির ও অস্থিতিশীল করে তুলবে। অদৃশ্য অব্যক্ত অসংখ্য ক্ষত বয়ে চলা নাজুক গণমাধ্যমকর্মীদের জীবনে ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’ বা ‘কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা’ দেওয়ার প্রেসক্রিপশন দিয়েছে গণমাধ্যম কমিশন।

কোন প্রতিষ্ঠান কয়টা পত্রিকা বা টেলিভিশন চালু করতে পারবে সেটা নিয়ন্ত্রণ করার কোনো বৈধ যুক্তি নেই। যার বৈধ টাকা আছে সে কেন পারবে না? কোনো একটি শিল্পগোষ্ঠীকে মাথায় রেখে এ সুপারিশ সামনে আনা হলে মূল উদ্দেশ্য নিয়েই প্রশ্ন উঠবে এবং সেটাই স্বাভাবিক।

কেননা এর বিপরীত চিত্রটাই পৃথিবীতে সবল সচল। চোখের সামনেই এর অনেক উদাহরণ রয়েছে। আনন্দবাজার পত্রিকা গ্রুপের কথা ধরুন। তাদের অনেক পত্রিকা রয়েছে। ভারত সরকার কি এ ব্যাপারে কোনো নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে?

রয়েছেন মিডিয়া মুঘল রুপার্ট মার্ডক, তাঁর কোম্পানি নিউজ করপোরেশন। তিনি বিশ্বজুড়ে শত শত স্থানীয়, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক বহুমুখী প্রকাশনা ও সম্প্রচার প্রতিষ্ঠানের মালিক। এ একই প্রতিষ্ঠানের অধীনে যুক্তরাজ্যে রয়েছে দ্য সান এবং দ্য টাইমস, অস্ট্রেলিয়ায় রয়েছে দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফ, হেরাল্ড সান এবং দি অস্ট্রেলিয়ান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছে দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এবং নিউইয়র্ক পোস্ট। এ ছাড়া তিনি টেলিভিশন চ্যানেল স্কাই নিউজ অস্ট্রেলিয়া এবং ফক্স নিউজ (ফক্স করপোরেশনের মাধ্যমে), টোয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরিস ফক্স এবং নিউজ অব দ্য ওয়ার্ল্ডের (বর্তমানে বিলুপ্ত) মালিকও ছিলেন।

আছেন জন কার্ল মেলোন। এ আমেরিকান মিডিয়া মুঘল, যিনি লিবার্টি মিডিয়ার চেয়ারম্যান। তিনি ‘কেবল কাউবয়’ নামেও পরিচিত। তিনি বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন ধরনের মিডিয়া, টেলিযোগাযোগ এবং বিনোদন প্রতিষ্ঠানের মালিক।

জন কার্ল মেলোন ১৯৯২ সালে ‘ফাইভ হানড্রেড চ্যানেল ইউনিভার্স’ ধারণাটি ব্যবহার করেন ভবিষ্যতের মিডিয়ার পরিবেশ-পরিস্থিতি বোঝানোর জন্য, যেখানে বিপুলসংখ্যক টিভি চ্যানেলের প্রয়োজনীয়তাকে তিনি ইঙ্গিত করেন। তাঁর ডিসকভারি কমিউনিকেশনস, যা এখন ডিসকভারি ইনকরপোরেটেড, এই এক প্রতিষ্ঠানের অধীনে রয়েছে ডিসকভারি চ্যানেল, টিএলসি (দ্য লার্নিং চ্যানেল), অ্যানিমেল প্ল্যানেট, এইচজিটিভি (হোম অ্যান্ড গার্ডেন টেলিভিশন), ফুড নেটওয়ার্ক, ওডব্লিউএন (অপরাহ উইনফ্রে নেটওয়ার্ক), ইউরোস্পোর্ট (ইউরোপীয় স্পোর্টস চ্যানেল নেটওয়ার্ক), কিউভিসি (গুণমান, মূল্য, সুবিধা; যা একটি হোম শপিং নেটওয়ার্ক যা সৌন্দর্য, ইলেকট্রনিক, ফ্যাশন এবং আরও অনেক কিছু বিপণন ও পণ্য সরবরাহ করে লাইভ শো সম্প্রচার করে। কিউভিসি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপানসহ একাধিক অঞ্চলে কাজ করে। )

লিবার্টি গ্লোবালের অধীনে রয়েছে ভার্জিন মিডিয়া, যা যুক্তরাজ্যের একটি প্রধান টেলিযোগাযোগ এবং মিডিয়া কোম্পানি, কেবল টেলিভিশন, ইন্টারনেট পরিষেবা এবং মোবাইল যোগাযোগ প্রদান করে। ইউপিসি, ইউনাইটেড প্যান-ইউরোপ কমিউনিকেশনস, রয়েছে টেলিনেট, যা বেলজিয়ামের একটি শীর্ষস্থানীয় টেলিযোগাযোগ প্রদানকারী, প্রাথমিকভাবে ইন্টারনেট, টেলিভিশন এবং টেলিফোন পরিষেবা প্রদানকারী।

লিবার্টি ল্যাটিন আমেরিকা, সিরিয়াসএক্সএম, ফর্মুলা ওয়ান, লাইভ নেশান, জিসিআই (জেনারেল কমিউনিকেশন, ইনকরপোরেটেড), লায়ন্সগেটসহ আরও অনেক মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম।

শুধু রুপার্ট মার্ডক বা জন কার্ল মেলোন নন, এ রকম এক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের অধীনে অনেক মিডিয়া থাকা প্রতিষ্ঠানের তালিকা অনেক দীর্ঘ। এর মধ্যে হাতেগোনা কয়েকজনের নাম আমরা উল্লেখ করছি, যাদের সব প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করলে এ লেখাটা প্রবন্ধ না হয়ে মহাভারত হয়ে যাবে। সে কারণে আমরা শুধু ব্যক্তি বা তার মূল প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করছি। আগ্রহী পাঠক চাইলে হাতের মুঠোয় পৃথিবীর সুবিধা নিয়ে এ মুহূর্তেই সেসব ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের আরও বিস্তারিত জানতে পারবেন।

ধরুন, সামনার রেডস্টোন, ভায়াকমসিবিএস, যা বর্তমানে প্যারামাউন্ট গ্লোবাল; টেড টার্নার, টার্নার ব্রডকাস্টিং সিস্টেম, টিবিএস ও সিএনএন; জেফ বেজোস, অ্যামাজন, দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের মালিক; ওয়াল্ট ডিজনি, দ্য ওয়াল্ট ডিজনি কোম্পানি, ডিজনি মিডিয়া নেটওয়ার্ক; ডেভিড গেফেন, গেফেন রেকর্ডস, ড্রিমওয়ার্কস এসকেজি; মাইকেল ব্লুমবার্গ, ব্লুমবার্গ এলপি, ব্লুমবার্গ নিউজ; ল্যারি পেজ এবং সের্গেই ব্রিন, গুগল, বর্তমানে যা অ্যালফাবেট, ইউটিউব এবং গুগল নিউজসহ।

প্রতিবেশী দেশে রয়েছেন সুভাষ চন্দ্র, জি এন্টারটেইনমেন্ট এন্টারপ্রাইজেস, জিটিভি; কালানিথি মরন, সান গ্রুপ, সান টিভি নেটওয়ার্ক, রেডিও এবং চলচ্চিত্র; রাঘব বাহল, নেটওয়ার্ক১৮ গ্রুপ, সিএনবিসি-টিভি১৮, সিএনএন-নিউজ১৮-এর মতো মিডিয়া আউটলেট এবং অন্যান্য বিভিন্ন ডিজিটাল ও টেলিভিশন সম্পত্তির মালিক; ম. কে. আলাগিরি, দ্য হিন্দু গ্রুপ, ভারতের অন্যতম সম্মানিত ইংরেজি ভাষার সংবাদপত্র দ্য হিন্দু এবং অন্যান্য প্রকাশনার মালিকানার সঙ্গে জড়িত। সম্বিত পাত্র, টাইমস অব ইন্ডিয়া, বেনেট, কোলম্যান অ্যান্ড কোং, আগরওয়াল পরিবারের নেতৃত্বে টাইমস গ্রুপ ভারতের বৃহত্তম মিডিয়া গ্রুপগুলোর মধ্যে একটি, যারা টাইমস অব ইন্ডিয়ার মতো প্রধান সংবাদপত্র প্রকাশ করে এবং জুমের মতো টেলিভিশন নেটওয়ার্কের মালিক। রজত শর্মা, ইন্ডিয়া টিভি, হিন্দি ভাষার সংবাদ চ্যানেল ইন্ডিয়া টিভির প্রতিষ্ঠাতা এবং ভারতের মিডিয়া শিল্পের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। এন. আর. নারায়ণ মূর্তি, ইনফোসিস, যদিও প্রাথমিকভাবে একজন প্রযুক্তিসম্রাট, মূর্তির বিনিয়োগ মিডিয়া এবং বিনোদনেও বিস্তৃত। বিজয় মালিয়া, কিংফিশার, ইউবি গ্রুপ এবং মিডিয়া ভেঞ্চারস। কিংফিশার এয়ারলাইনসের জন্য পরিচিত, মালিয়ার কিংফিশার টিভি এবং অন্যান্য বিনোদন উদ্যোগসহ মিডিয়া কোম্পানিগুলোতেও অংশীদারি ছিল। শিব নাদার, এইচসিএল এবং মিডিয়া ইনভেস্টমেন্টস, এইচসিএলের প্রতিষ্ঠাতা। নীতা আম্বানি, রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ, নেটওয়ার্ক১৮, টিভি১৮, জিও প্ল্যাটফর্মের মালিক।

ডিজিটাল যুগে সংবাদমাধ্যম এমনিতেই কঠিন পরীক্ষার মুখে পড়েছে। বিশ্বব্যাপী ছাপা পত্রিকা মারাত্মক চ্যালেঞ্জের মুখে। অনেক স্বনামখ্যাত বড় পত্রিকা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কোনোটি বন্ধ হওয়ার পথে, কোনোটি রূপান্তরের মাধ্যমে টিকে থাকার চেষ্টা করছে।

তাই ওয়ান হাউস, ওয়ান মিডিয়া চিন্তার পেছনে জনহিতকর, গঠনমূলক বা ইতিবাচক কিছু নয়, বরং রয়েছে প্রতিহিংসাপরায়ণ কুচিন্তা ও কূটকৌশল। যাতে লাথি মারা হবে অসংখ্য মিডিয়াকর্মীর পেটে। তাতে বরং বেকারত্বের পাহাড় আরও উঁচু হবে, নানামুখী অসন্তোষ, সীমাহীন হতাশার আকাশ আরও মেঘকালো বা ভারী হবে।

লেখক: কবি ও সাংবাদিক



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews