ডাউন ট্রেন্ড নিশ্চিত করার পথে পুঁজিবাজারে মূল্যসূচক। দুই বাজারেই মূল্যসূচকে বড় ধরনের পয়েন্ট খোয়া গেছে। বিনিয়োগকারীদের হতাশায় নিমজ্জিত করে সূচক আগস্টের ৪ তারিখের সূচকের খুব কাছাকাছি অবস্থান করছে। সব ধরনের শেয়ারের দাম কমেছে। যা পতনকে ত্বরান্বিত করেছে। অক্টোবর মাসের ১১ কর্মদিবসের মধ্যে ৯ কর্মদিবসই পুঁজিবাজার পতনের কবলে ছিল। মাত্র দুই কর্মদিবসে উত্থান হয়েছে। এই ৯ কর্মদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সূচক কমেছে ৩৬৭ পয়েন্ট। গড়ে প্রতিদিন কমেছে ৪০ পয়েন্টের বেশি। আর ওই ১১ কর্মদিবসে ডিএসইর মূলধন কমেছে ১৪ হাজার ২৪৫ কোটি টাকা। ধারাবাহিক মন্দার কারণে বাজারে বিক্রির চাপ বেড়েছে। ১৫ শতাংশ ক্রেতার বিপরীতে বিক্রির চাপ ছিল ৮৫ শতাংশ। ক্রেতা না থাকায় বিক্রেতারা হতাশ। পতনের ফলে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ০.৫৬ শতাংশ।
সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বলছেন, দেশের পুঁজিবাজারে এখন কোনো আশার খবর নেই। প্রতিদিনই কেবল হতাশার গল্প। বাজারের স্থিতিশীলতা ফেরাতে নীতি নির্ধারকদের নেই কোনো কার্যকর পদক্ষেপ। যে কারণে শেয়ারবাজারে পতনের শেষ কোথায় কেউ জানে না।
দিনের লেনদেনের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, শুরুতে ডিএসইর সূচকের অবস্থা ইতিবাচক পথে ছিল। কিন্তু দুপুর ১২টা থেকে বাজারে নেতিবাচক বা পতনের ধারা শুরু হয়। যা শেষ পর্যন্ত বজায় ছিল। ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বুধবারের চেয়ে গতকাল আরো ৫৮.২৩ পয়েন্ট কমে এখন ৫ হাজার ২৫৭.৯৮ পয়েন্টে, ডিএসই-৩০ সূচক আরো ১৭.৫৮ পয়েন্ট কমে এক হাজার ৯৩০.৪০ পয়েন্টে এবং ডিএসইএস শরিয়াহ সূচক (ডিএসইএস) ৮.৭৪ পয়েন্ট কমে এক হাজার ১৭৪.১৩ পয়েন্টে নেমেছে। লেনদেনকৃত কো¤পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ৫৩টির, কমেছে ২৯৩টির বা ৭৪.১৭ শতাংশের এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৪৯টি কোম্পানির শেয়ার। ডিএসইতে গতকাল মোট ৩৯৫টি কো¤পানির ১১ কোটি ৯৪ লাখ ৬২ হাজার ৬৫৯টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড লেনদেন হয়েছে মোট ৩০৬ কোটি ৮৯ লাখ ৯ হাজার ৪০ টাকায়। বুধবারের চেয়ে লেনদেন ১০.৫ কোটি টাকা বেড়েছে। এ দিন ২৯৬ কোটি টাকার লেনদেন হয়।
লেনদেন, দর বৃদ্ধি ও দর পতনে শীর্ষ ১০: ডিএসইতে গতকাল টাকায় লেনদেনের ভিত্তিতে শীর্ষ ১০ কো¤পানি হলো অগ্নি সিস্টেম, তৌফিকা ফুড, ব্র্যাক ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংক, টেকনোড্রাগ, স্কয়ার ফার্মা, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, বিএসসি ও বেক্সিমকো ফার্মা। দর বৃদ্ধির শীর্ষ ১০ কো¤পানি হলো ফার্মা এইড, এনসিসি ব্যাংক ১ম মি. ফা., জিকিউ বলপেন, আইসিবি, বেক্সিমকো ফার্মা, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, শাইনপুকুর সিরামিকস, প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল, আম্বী ফার্মা কোহিনুর কেমিক্যাল। দর পতনে শীর্ষ ১০ কো¤পানি হলো এসআইসিএল, তসরীফা ইন্ডাঃ, বিএসসি, নরদার্ন ইন্স্যুঃ, অগ্রণী ইন্স্যুঃ, আনলিমা ইয়ার্ন, আরএসআরএম স্টিল, তমিজউদ্দিন টেক্সটাইল, মেট্রো স্পিনিং ও নরদার্ন জুট।
ব্লক মার্কেটে ৪৬.৩০ লাখ শেয়ার : ডিএসইর ব্লক মার্কেটে গতকাল ২৯টি কোম্পানির ৪৬ লাখ ৩০ হাজার ২৭০টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড হাতবদল হয়েছে মোট ১২ কোটি ৭০ লাখ ২৮ হাজার টাকায়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে প্রতিষ্ঠানের শেয়ার। সেগুলো হলো বেক্সিমকো, লাভেলো আইসক্রিম, শাহজিবাজার পাওয়ার, ব্যাংক এশিয়া, বীচ হ্যাচারি, মিডল্যান্ড ব্যাংক, ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স এবং সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড। এই ৮ প্রতিষ্ঠানের মোট শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৯ কোটি ৫ লাখ টাকারও বেশি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকোর। কোম্পানিটির ১ কোটি ৯০ লাখ ৯৪ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা লাভেলো আইসক্রিমের ১ কোটি ৩৯ লাখ ৪৫ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। আর ১ কোটি ৩৩ লাখ ৬৪ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন করেছে শাহজিবাজার পাওয়ার। অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে- ব্যাংক এশিয়ার ১ কোটি ৩৩ লাখ ৫৩ হাজার টাকার, বীচ হ্যাচারির ৮৩ লাখ ১৯ হাজার টাকার, মিডল্যান্ড ব্যাংকের ৮২ লাখ ১৬ হাজার টাকার, ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্সের ৭৩ লাখ ১৫ হাজার টাকার এবং সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের ৬৯ লাখ ৩৫ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
সূচক পতনে গড়ে সেঞ্চুরি চট্টগ্রামে : এদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) বেশির ভাগ সূচক গড়ে পয়েন্ট হারানোয় সেঞ্চুরি করেছে। গতকাল সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ১৫০.৮৩ পয়েন্ট। আর সিএসই-৩০ সূচক কমেছে ১০৩.৫২ পয়েন্ট এবং সিএসসিএক্স কমেছে ৮৭.৬৩ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেয়া ২১৮ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪১টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৫৬টির এবং ২১টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। ১৯ লাখ ১১ হাজার ৬৬১টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড লেনদেন হয়েছে ৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। আগের দিন বুধবার লেনদেন হয়েছিল ৭ কোটি ৯৫ লাখ টাকার শেয়ার। ফলে লেনদেন কমেছে ৩ কোটি ৩১ লাখ টাকা।
সাউথ ইষ্ট ব্যাংকের ১৩ লাখ শেয়ার কিনবে : এদিকে, তালিকাভুক্ত সাউথইস্ট ব্যাংকের এক উদ্যোক্তা পরিচালক ১৩ লাখ শেয়ার কেনার ঘোষণা দিয়েছেন বলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) তথ্য প্রকাশ করেছে। উদ্যোক্তা পরিচালক জোসনা আরা কাশেম কোম্পানির ১৩ লাখ শেয়ার কেনার ঘোষণা দিয়েছেন। আগামী ৩১ অক্টোবরের মধ্যে ঘোষণাকৃত শেয়ার কেনা সম্পন্ন করবেন এই উদ্যোক্তা পরিচালক।
রয়্যাল ক্যাপিটাল বাজার বিশ্লেষণে বলছে, গতকাল ঢাকার শেয়ার বাজারের প্রধান সূচক (ডিএসইএক্স) নিম্নমুখী ছিল। মূলধন গত দিনের তুলনায় ০.৫৬ শতাংশ কমেছে। যেখানে ভলিউম ৭ শতাংশ এবং ৪ শতাংশ টার্নওভার কমেছে। ১৯টি সেক্টরের মধ্যে দুটি সেক্টরের বাজার মূলধন বেড়েছে। আর ১৭টি সেক্টরের শেয়ার মূল্য কমেছে। ফ্লোর প্রাইসে ১টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ব্লক মার্কেটে ১২.৭ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যা মোট লেনদেনের ৪ শতাংশ। এসএমই বাজার সূচক (ডিএসএমইএক্স) ১০.৯৭ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ১০৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। লেনদেন হয়েছে ২০ কোটি টাকা। যা আগের দিনের তুলনায় ২৮৬ শতাংশ বেশি।