বিজয়ের মালিক মহান আল্লাহ। আল্লাহ অন্যায়কারীদের বিরুদ্ধে মজলুমের বিজয় নিশ্চিত করেন। আল্লাহ প্রতিটি মানুষকে শৃঙ্খলমুক্তভাবে সৃষ্টি করেছেন। মানুষ আল্লাহ ছাড়া কারও গোলামি মেনে নেবে না এটিই ইসলামের শিক্ষা। বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামে অংশ নিয়েছে জাতিধর্মনির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষ। দেশের আলেম সমাজের সিংহভাগ ছিল মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে। মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশসহ অসংখ্য আলেম ছিলেন আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণা। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরে অর্জিত হয় মুক্তিযুদ্ধের বিজয়। আল কোরআনে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মক্কা বিজয় সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয় আমি তোমাকে সুস্পষ্ট বিজয় দান করেছি’ ৪৮ : ১। হুদায়বিয়ার সন্ধির পর উপরিউক্ত আয়াতটি নাজিল হয়। মুমিনদের অনেকেই এ সন্ধির যথার্থতা নিয়ে সংশয়ে ছিলেন। আল্লাহ সে সংশয় নিরসনে বিজয়ের আগাম বার্তা দেন। ওই আয়াতে স্পষ্ট করা হয়েছে আল্লাহই বিজয় দানের মালিক। বিজয় অর্জনে তাঁর রহমতের ওপর ভরসা করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধে এক পক্ষে ছিল বাংলাদেশের মজলুম জনগণ। আরেক পক্ষে ছিল জবরদখলকারী পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। তাদের সহযোগী হিসেবে ভূমিকা পালন করেছে এ দেশীয় ঘাতক-দালালদের বিভিন্ন বাহিনী, যারা মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষাবলম্বনকারী মানুষের ওপর নির্যাতন চালাত; তাদের হত্যা করত। সম্পদ লুটপাট ও সম্ভ্রমহানি করত। জ্বালিয়ে দিত সাধারণ মানুষের ঘরবাড়ি ও সম্পদ। মসজিদ-মন্দিরও তাদের জিঘাংসা থেকে রক্ষা পায়নি। অথচ ধর্মের নামে তারা এ দেশের মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। আল কোরআনে এ ধরনের প্রতারকদের সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে-‘আর কিছু লোক রয়েছে যারা বলে আমরা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ইমান এনেছি, অথচ আদৌ তারা ইমানদার নয়’ (সুরা বাকারা : ৮)।

ইসলামে এক মুসলমান অন্য মুসলমানের রক্ত ঝরাবে এমন সংঘাতকে কঠোরভাবে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। যারা সমাজ ও রাষ্ট্রে দাঙ্গাহাঙ্গামা বা অশান্তি সৃষ্টি করে তাদের ধিক্কার দিয়ে আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যখন তাদের (কপট বিশ্বাসীদের) বলা হয় যে দুনিয়ার বুকে দাঙ্গাহাঙ্গামা সৃষ্টি কোরো না। তখন তারা বলে, আমরা তো মীমাংসার পথ অবলম্বন করছি। মনে রেখ তারাই হাঙ্গামা সৃষ্টিকারী। কিন্তু তারা তা উপলব্ধি করে না’ (সুরা বাকারা : ১১-১২)।

ইসলামে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে দেশপ্রেমকে। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামসহ সব নবী-রসুল নিজ দেশকে ভালোবাসতেন। স্বদেশের জন্য গভীর টান ও মায়ামমতা প্রকাশ পেয়েছে হজরত নূহ (আ.), হজরত ইবরাহিম (আ.), হজরত ইয়াকুব (আ.), হজরত মুসা (আ.)-সহ সব নবী-রসুলের জীবনাচরণে। হজরত ইবরাহিম (আ.) আল্লাহপ্রদত্ত দায়িত্ব পালনে মক্কায় অবস্থান করতেন। কাবাঘর পুনর্নির্মাণ ও মক্কাকেন্দ্রিক দাওয়াত প্রচারে আল্লাহর হুকুমে তিনি যখন মক্কায় বসবাস করতেন তখন তাঁর চিন্তাচেতনা ও দোয়া প্রার্থনায় এ জনপদের প্রতি গভীর ভালোবাসা ব্যক্ত হয়েছে। আল কোরআনে তাঁর এমন একটি দোয়ার উল্লেখ আছে। যখন ইবরাহিম (আ.) বললেন, ‘হে আমার প্রতিপালক! এ নগরীকে নিরাপদ রাখুন এবং এর অধিবাসীদের ফলমূল দ্বারা রিজিক দান করুন যারা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে’ (সুরা বাকারা : ১২৬)।

আরবি ভাষার একটি প্রবচন-‘হব্বুল ওয়াতান মিনাল ইমান’ অর্থাৎ ‘দেশপ্রেম ইমানের অঙ্গ’। জন্মভূমি মক্কা মুকাররমার প্রতি মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অপরিসীম ভালোবাসার কথাও আমাদের জানা। তাঁকে প্রতিপক্ষের প্রভাবশালী লোকেরা হিংস্রতা ও চরম নিষ্ঠুরতায় মক্কা ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য করল। তখন তিনি মদিনায় হিজরত করেন। তিনি যখন মদিনার উদ্দেশে যাচ্ছেন তখন পেছন ফিরে প্রিয় মাতৃভূমির দিকে তাকান। তিনি বলেন, ‘মক্কা প্রিয় জন্মভূমি আমার! যদি তোমার অধিবাসীরা আমাকে বাধ্য না করত আমি কোনো দিন তোমাকে ছেড়ে যেতাম না।’ দায়িত্বের চাপে অনেক মানুষ নিজের দেশ ছেড়ে পরদেশে যেতে বাধ্য হয়। ভিনদেশে জীবন অতিবাহিত করে। কিন্তু নিজ দেশের প্রতি তাঁর কর্তব্য পালনে কখনো উদাসীন থাকে না।

ইসলাম যুদ্ধবিগ্রহের সময়ও নিরপরাধ শিশু ও নারীকে হত্যা, তাদের বাড়িঘর বৃক্ষসম্পদ জ্বালিয়ে দেওয়া অনুমোদন করে না। হাদিসেও এ সম্পর্কে নির্দেশনা রয়েছে। পাকিস্তানি বাহিনী এবং তাদের এ দেশীয় সহযোগী রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনী একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকালে ইসলামি বিধান লঙ্ঘন করে সাধারণ মানুষকে হত্যা, নারীর সম্ভ্রম লুট এবং বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়ার অপরাধে জড়িত ছিল বলেই আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের পরাজয় এবং মজলুমদের প্রতিনিধিত্বকারী মুক্তিবাহিনীর বিজয় নিশ্চিত হয়। বিজয়ের এ মাসে আমরা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মহান বিজয়ের জন্য আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করছি। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের মাগফিরাত কামনা করছি। আমাদের স্বাধীনতা সুরক্ষা ও দেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য আল্লাহর সহায়তা কামনা করছি।

লেখক : ইসলামিক গবেষক



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews