বায়বীয় মামলা

এখনও গেল না আঁধার

শিক্ষার্থী-জনতার অভ্যুত্থানে হত্যাকাণ্ডসহ অন্যান্য অপরাধের বিচার করিতে অন্তর্বর্তী সরকার যখন পুনঃপুন অঙ্গীকার ব্যক্ত করিয়া চলিয়াছে, তখনই এ-সংক্রান্ত অপরাধ ঘিরিয়া রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভিত্তিহীন মামলার হিড়িক পড়িবার খবর দিয়াছে সমকাল। শনিবার প্রকাশিত শীর্ষ প্রতিবেদনমতে, আন্দোলনকালে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড ও হত্যাপ্রচেষ্টার সূত্র ধরিয়া দায়েরকৃত মামলাসমূহের অধিকাংশই সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণহীন বলিয়া অভিযোগ উঠিয়াছে। এই সকল মামলা দায়েরকালে ফৌজদারি মামলার ন্যূনতম নিয়মনীতি অনুসরণ করা হয় নাই। বহু মামলায় আসামির পরিচয় জানে না মামলার বাদী ও ভুক্তভোগী পরিবার। অনেক মামলায় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক শত্রুদের আসামি করা হইতেছে; এমনকি মামলা দিয়া আসামিদের নিকট অর্থও দাবি করা হয়। ইতোমধ্যে কোনো কোনো মামলায় বাদী-বিবাদীর মধ্যে উক্ত লেনদেন-সংক্রান্ত কথোপকথনও ফাঁস হইয়াছে। এই পরিস্থিতি স্বাভাবিকভাবেই বিশেষ উদ্বেগ সৃষ্টি করিয়াছে। কারণ, ভিত্তিহীন মামলার ফলস্বরূপ শুধু নিরীহ ও নিরপরাধ মানুষ জুলুমের শিকার হইতেছে না; অপরাধের শিকার ব্যক্তি বা তাহার স্বজনেরও ন্যায়বিচার প্রাপ্তির সম্ভাবনা তিরোহিত হইতেছে। দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিয়া ক্ষমতায় আসা অন্তর্বর্তী সরকারের জন্যও প্রতিশ্রুতি পালন ক্রমশ দুরূহ হইয়া পড়িতেছে।

আমরা জানি, এই সকল ‘পাইকারি মামলা’ লইয়া আইনজীবীসহ বিভিন্ন মহলে সৃষ্ট সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে তদন্তে কোনো আসামির সম্পৃক্ততা না মিলিলে মামলা হইতে তাহার নাম প্রত্যাহারের ব্যবস্থা করিতে ১৩ সেপ্টেম্বর সংশ্লিষ্ট থানাকে নির্দেশনা দিয়াছিল পুলিশ সদরদপ্তর। ইহার পর স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাও অনুরূপ নির্দেশনার কথা একাধিকবার সংবাদমাধ্যমকে জানাইয়াছিলেন। এমনকি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দও যাচাই-বাছাই ব্যতিত মিথ্যা বা ভুয়া মামলায় নিরপরাধ মানুষকে হয়রানি না করিবার অনুরোধ জানাইয়াছিলেন। হতাশাজনক হইল, সকল নির্দেশনা ও অনুরোধ মামলাবাজি বন্ধ করিতে পারে নাই। দুই-এক ক্ষেত্রে এহেন মামলা প্রত্যাহার বা খারিজ হইলেও, ঐগুলি কেন, কোন প্রক্রিয়ায়, কাহারা, কাহার সহযোগিতায় করিল, উহা খতাইয়া না দেখায় পরিস্থিতি যেই তিমিরে ছিল সেই তিমিরেই রহিয়া গিয়াছে। এইরূপও দেখা গিয়াছে, ৫ আগস্টের পূর্বে যেই হত্যা মামলায় বিএনপি-জামায়াতের নেতাদের আসামি করা হইয়াছিল, ৫ আগস্টের পর সেই মামলায় আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিদের আসামি করা হইয়াছে, এমনকি আদালত রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের ভিত্তিতে তাহাদের রিমান্ডেও পাঠাইয়াছেন। অথচ ফৌজদারি মামলায় এফআইআর একবার লিখিবার পর ইহার দাঁড়ি, কমাও পরিবর্তনযোগ্য নহে। সরকার পরিবর্তনের সহিত মামলার এফআইআর পরিবর্তিত হইবার এহেন ঘটনায় স্পষ্ট হয়, ভুয়া মামলার বিরুদ্ধে বিশেষত পুলিশের প্রকৃত অবস্থান কী হইতে পারে। স্মরণ করা যাইতে পারে, বিগত সরকার উহার পূর্বসূরিদের ন্যায় বিশেষত বিরোধী পক্ষকে দমন করার অপকৌশল হিসাবে বায়বীয় মামলার আশ্রয় লইত। জুলাই আন্দোলনের সময়ও শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে তাহারা অভিন্ন অপকৌশল গ্রহণ করিয়াছিল; যদিও শেষাবধি তাহা ব্যর্থই হইয়াছে। অথচ ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য অভ্যুত্থানের পর সেই প্রবণতা পরিত্যক্ত হইবার কথা ছিল। দুর্ভাগ্যের বিষয়, এত ত্যাগের পরও সেই আঁধার এখনও গেল না।

বিচারের নামে নিরপরাধ মানুষকে হয়রানি করিবার অধিকার কাহারও নাই। এই বিষয়ে প্রতিবেদনে প্রকাশিত সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়ার বক্তব্যটি প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলিয়াছেন, একেকটি হয়রানিমূলক মামলা ভুক্তভোগীর পরিবারকে বিপর্যস্ত করে। তাই ঢালাও মামলার নেপথ্যের মানুষের বাহির করিতে টাস্কফোর্স গঠন করা উচিত। তিনি ভুয়া মামলা দায়েরে জড়িতদের মধ্যে অন্তত দুই-একজনকে গ্রেপ্তার করিয়া আইনের আওতায় লইবারও পরামর্শ দিয়াছেন। সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক মুহাম্মদ নুরুল হুদাও বলিয়াছেন, কেহ মিথ্যা মামলা করিলে দণ্ডবিধির ২১১ ধারায় সেই ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাইতে পারে। আমাদের প্রত্যাশা, এই দুই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ শুনিয়া সরকার ভুয়া মামলার বিষয়ে আশু শক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করিবে।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews