ঢাকাই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি ধুঁকে ধুঁকে চলছে-এটা পুরোনো খবর। অনেক বছর ধরেই সিনেমার হাল ধরার মতো যোগ্য কাউকে যেন খুঁজে পাচ্ছে না সংশ্লিষ্টরা। যদিও ইন্ডাস্ট্রিতে সুদর্শন নায়কের অভাব নেই। কিন্তু হালআমলে অনেকে ‘রাজনীতি’ নামক এক ‘লোভনীয় ব্যবসা’র চর্চা করতে গিয়ে নিজের ক্যারিয়ার হুমকির মুখে ফেলেছেন। 

অভিনয় থেকে বেশি মনোযোগী হয়ে পড়েছেন রাজনীতিতে। কোনো চিত্রনায়ক যখন রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন বা নির্দিষ্ট কোনো রাজনৈতিক দলের প্রকাশ্য সমর্থক হয়ে যান, তখন তার দর্শক কিন্তু দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েন। ফলে ওই অভিনেতার ক্যারিয়ার পড়ে হুমকির মুখে। 

এ তালিকায় রয়েছেন অনেকে। যারা স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সব অনৈতিক কর্মকাণ্ডকে সমর্থন করে ক্যারিয়ার নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন-ফেরদৌস আহমেদ, রিয়াজ, আরিফিন শুভ, জায়েদ খান, চঞ্চল চৌধুরী, জয় চৌধুরীসহ অনেকেই। দেশের পটপরিবর্তনে এখন কাজ পাচ্ছেন না তারা। অনেকেই রয়েছেন আত্মগোপনে বা আড়ালে। তাদের ফেরার পথ কাঁটায় ভরা।

‘বুকের ভিতর আগুন’ সিনেমা দিয়ে ১৯৯৭ সালে সিনেমায় আসেন ফেরদৌস আহমেদ। ক্যারিয়ারে অনেক ব্যবসাসফল সিনেমাও উপহার দিয়েছেন তিনি। অভিনয়ের জন্য চারবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও অর্জন করেন। এ অভিনেতা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হয়ে নির্বাচন করেন। ঢাকা-১০ আসনের নির্বাচিত সংসদ সদস্য তিনি। স্বৈরাচার হাসিনা ও জুলাই-আগস্ট গণহত্যাকে প্রকাশ্য সমর্থন দেওয়ায় ৫ আগস্টের পর থেকেই আত্মগোপনে এ অভিনেতা। স্বভাবতই তার অভিনয় ক্যারিয়ারের চাকা সহসাই সচল হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

রাজনীতির কারণে এখন পলাতক চিত্রনায়ক রিয়াজ। তিনি বেশ কিছু হিট সিনেমা উপহার দিয়েছেন। পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও। তবে বেশ কয়েক বছর ধরেই সিনেমায় নিয়মিত নন। চেষ্টা করেও হতে পারেননি। বরং মনোযোগী হয়েছিলেন রাজনীতির মাঠে। আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতেন তিনি। দলীয় কোনো পদ-পদবি না থাকলেও হাসিনার সমর্থনে রাজপথে বেশ সরব ছিলেন। 

শুধু তাই নয়- ছাত্র-আন্দোলন ঠেকাতে বেশ সক্রিয় ভূমিকা ছিল তার। ৫ আগস্টের পর থেকেই তিনি পলাতক। অভিনয় ক্যারিয়ার তো অনেক আগেই শেষ হয়েছে বলা যায়, বাকিটুকু যা ছিল সে পথেও এখন কাঁটা। শিল্পী ইমেজের শেষটুকুও রাজনীতির দাবায় বিলীন।

নাটক থেকে সিনেমায় এসে বড়পর্দায় প্রতিষ্ঠা পাওয়ার খুব চেষ্টা করছিলেন আরিফিন শুভ। প্রায় দুই ডজন সিনেমা করলেও কোনো অবস্থান তৈরি করতে পারেননি এ নায়ক। সর্বশেষ তিনি ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’ সিনেমায় শেখ মুজিবের চরিত্রে রূপদান করেন। আওয়ামী ঘনিষ্ঠ শিল্পী হওয়ায় এর জন্য পারিশ্রমিক নেন মাত্র এক টাকা। শেখ হাসিনা তার আস্থাভাজন স্নেহের শুভর প্রতি খুশি হয়ে তাকে পূর্বাচলে দশ কাটা প্লটও দেন। অবশ্য সেই প্লট বাতিল করেছে রাজউক। 

শুভর ক্যারিয়ার ধ্বংসের সূচনা এখান থেকেই। ৫ আগস্ট হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেলেই কাঁটা ছড়িয়ে পড়ে শুভর অভিনয়ের পথে। কাজ পাচ্ছেন না আর। অবশেষে গোপনে চলে যান ভারত। এখন সেখানেই কাজের খোঁজ করছেন। কবে নাগাদ দেশে আসবেন বা আদৌ আসবেন কি না এ ব্যাপারে বেশ সন্দেহ রয়েছে।

নাটক ও সিনেমা মিলিয়ে বেশ ভালোই দিন কাটছিল অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরীর। ঢাকা-কলকাতা, দুই ইন্ডাস্ট্রিতেই জমিয়ে কাজ করছিলেন। তার দুর্বলতা একটাই, শেখ হাসিনা। এ স্বৈরাচার শাসকের প্রেমে এতটাই মত্ত ছিলেন চঞ্চল, দেখা হলেই তার পদধূলি মাথায় নিতেন। আবেগে, আয়েশে হাসিনাকে গান শুনিয়ে নিতেন বাহবা। তাই শেখ হাসিনার পতনের পর চঞ্চলের ক্যারিয়ারেরও পতন শুরু হয়েছে। চলার পথে ছড়িয়ে পড়েছে কাঁটা। সেগুলো কীভাবে সরাবেন, কিংবা সরিয়ে কাজে নিয়মিত হতে পারবেন কী তা সময়ই বলে দেবে।

ঢাকাই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে জায়েদ খানই একমাত্র নায়ক, যার কোনো হিট সিনেমা না থাকলেও সবসময়ই তুমুল আলোচনায় থাকতেন। আর সেটা সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে। গত দুই বছরে সমালোচিত কর্মকাণ্ডে সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ চর্চায় ছিলেন তিনি। ২০০৬ সালে ক্যারিয়ার শুরু করা এ অভিনেতার সর্বশেষ সিনেমা ‘সোনার চর’ও প্রেক্ষাগৃহে মুখ থুবড়ে পড়েছিল। অবশ্য অভিনয় নিয়ে এ নায়কের নিজেরও তেমন মাথাব্যথা নেই। তিনি ব্যস্ত ছিলেন সিনেমার রাজনীতি নিয়ে। শিল্পী সমিতির দুবারের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। 

এ ছাড়াও আওয়ামী রাজনীতি সমর্থন করতেন। রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে সখ্য ছিল বেশ। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মুজিব কোট পরে অংশ নিতেও দেখা যায় তাকে। ৫ আগস্টের পর তার বিরুদ্ধে হয়েছে মামলা। তাই ক্যারিয়ারে তার আর ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। বর্তমানে আমেরিকায় অবস্থান করছেন তিনি।

ক্যারিয়ারে ফ্লপ নায়কের তকমা পাওয়া অভিনেতা হচ্ছেন জয় চৌধুরী। ২০১২ সালে ‘এক জবান’ সিনেমা দিয়ে অভিষেক হয়। ক্যারিয়ারে নয়টি সিনেমা করলেও সবগুলোই ফ্লপ। সবশেষ মুক্তি পায় তার অভিনীত ‘প্রেম প্রীতির বন্ধন’ নামে একটি সিনেমা। এটিতে তার বিপরীতে ছিলেন অপু বিশ্বাস। সিনেমাটি ব্যর্থ হওয়ার পাশাপাশি বেশ সমালোচিতও হয়। অভিনয় নিয়ে তেমন সুবিধা করতে না পারলেও তিনি বনে যান শিল্পীদের নেতা। 

বর্তমান চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন। সক্রিয়ভাবে কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত না থাকলেও তিনি নিজেকে আওয়ামী লীগের একজন সমর্থক বলেই দাবি করতেন। আওয়ামী শাসনামলে দলীয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মুজিব কোট পরে অংশ নিতেও দেখা গেছে তাকে। এদিকে সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ভোল পালটে ফেলেন জয়। এখন নিজেকে বিএনপির সমর্থক বলে দাবি করছেন। 

সম্প্রতি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে একটি ফেসবুক পোস্ট করেও নেটিজেনদের রোষানলে পড়েন এ নায়ক। রাজনীতির ভোলবদলে এ অভিনেতার ক্যারিয়ারে এখন কাঁটা বিছানো। চলার পথ খুবই সংকীর্ণ।

ঢাকাই সিনেমায় আরও এক নায়ক সাইমন সাদিক প্রায় এক যুগ কাজ করছেন। তিনিও আওয়ামীঘনিষ্ঠ অভিনেতা। গত এক দশক ধরে সেটাই দেখা গেছে। কিছু ভালো সিনেমা উপহার দিলেও বর্তমানে আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় সাইমনের পথচলাও বলা যায় থমকে গেছে। দেশের পটপরিবর্তনে এখন পাচ্ছেন না কাজ।

এ ছাড়াও নাটক-সিনেমার এমন অনেকেই আছেন যারা শিল্পী হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হলেও, বর্তমানে রাজনীতির কারণে দর্শকপ্রিয়তা হারিয়েছেন। ক্যারিয়ার নিয়ে বিপাকে রয়েছেন। আওয়ামীঘনিষ্ঠ অনেক শিল্পী এখন পলাতক। অনেকেই নেটিজেনদের রোষানলে পড়ে হচ্ছেন হেনস্তার শিকার।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews